অমানবিক উপায়ে কোমলমতি শিশু শিক্ষার্থীর শরীরের ওপর দিয়ে হেঁটে যাওয়া চাঁদপুরের হাইমচর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং উপজেলা চেয়ারম্যান নূর হোসেন পাটোয়ারীর নিষ্ঠুরতাকে আড়ালের চেষ্টা চালাচ্ছেন সেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক মোশাররফ হোসেন। এ জন্য তিনি পদ্মাসেতু নির্মাণের উদাহরণ টেনেছেন।
তবে অসংখ্যবার চেষ্টা করেও ঘটনার মূল নায়ক নূর হোসেন পাটোয়ারীর সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
বুধবার হাইমচর উপজেলার নীলকমল উছমানিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বলেন, “প্রতি বছর আমাদের স্কুলে বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় মানব পিরামিড, মানব স্মৃতিসৌধ, মানব শহীদ মিনার তৈরি করা হয়। এবার ব্যতিক্রম হিসেবে মানবসেতু তৈরি করা হয়েছে।”
তিনি বলেন, “বর্তমানে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে। তাই প্রধানমন্ত্রী পদ্মাসেতুর মতো সেতু করার উদ্যোগ নিয়েছেন। সেই উদ্যোগকে শ্রদ্ধা জানিয়ে আমরা শিক্ষার্থীদের নিয়ে মানবসেতু নির্মাণ করেছি।” এরআগেও এমন সেতুর ওপর দিয়ে অনেকে হেটেছেন। বাংলাদেশে শিশুশ্রম যেখানে নিষিদ্ধ সেখানে বাচ্চাদের নিয়ে এমন কর্মকাণ্ড কতটুকু যৌক্তিক? এমন প্রশ্নের জবাবে মোশাররফ হোসেন বলেন, “আমরা আসলে এত কিছু চিন্তা করিনি। আমরা শুধু একটি পদ্মাসেতু তৈরি করেছিলাম। আর উপজেলার চেয়ারম্যান সেই ইভেন্টে শুধু অংশ নিয়েছেন।”
মঙ্গলবার দুপুরে নীলকমল উছমানিয়া উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে বিদ্যালয়ের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগীতার সময় উপজেলা চেয়ারম্যান নূর হোসেন পাটওয়ারী প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
মানবসেতুতে অংশ নেয়া শিক্ষার্থীরা জানান, বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগীতায় আমরা পদ্মাসেতু তৈরি করেছিলাম। সেই পদ্মা সেতুতে উপজেলা চেয়ারম্যান হেটে গিয়ে আমাদেরকে পাঁচহাজার টাকা দিয়েছেন।
এক পর্যায়ে শিক্ষার্থীরা দুই সারিতে দাঁড়িয়ে তাদের হাতের ওপরে একাধিক শিক্ষার্থীর শরীর বিছিয়ে তৈরি করা হয় মানব সেতু। সেই সেতুর উপর দিয়ে হেঁটে যান অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি হাইমচর উপজেলা চেয়ারম্যান নূর হোসেন পাটওয়ারী।
শুধু তাই নয়, তিনি যে দিক দিয়ে নামবেন সেইদিকেও এক শিশু শিক্ষার্থীকে হাঁটু গেড়ে বসিয়ে রাখা হয় এবং ওই শিশুর পিঠের ওপর পা দিয়ে নেমে আসেন আওয়ামী লীগের হাস্যোজ্জ্বল এ নেতা।
একজন উপজেলা চেয়ারম্যানের এমন আচরণ নিয়ে ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনার ঝড় বইছে। সেই ছবিটি এরই মধ্যে অসংখ্যবার ফেসবুকে শেয়ার করা হয়েছে।
গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকার ফেসবুকে ছবিটি শেয়ার করে লিখেছেন, ‘এই বদমাশটা নাকি জনপ্রতিনিধি? চাঁদপুরের হাইমচর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং উপজেলা চেয়ারম্যান। নাম নূর হোসেন পাটোয়ারী।সাংবাদিক ও শিক্ষক কাজী আনিস লিখেছেন: যে স্কুলে নেতা ও চেয়ারম্যান শিক্ষার্থীদের পিঠে উঠেছে, সেই স্কুলের এক সাবেক ছাত্র আমাকে জানালেন, এভাবে শিক্ষার্থীদের পিঠে ওঠা নতুন কিছু নয়। বহুদিন ধরে ওই স্কুলে চলে আসছে এ উদ্ভট রীতি। উদ্দেশ্য, তেল মানে খুশি করা।
ওই ছাত্র আমার কাছে একটি ছবি পাঠিয়েছেন। ছবিটা ২০০৫-২০১০ এ সময়ের মধ্যে (আগে ভুলবশত ২০০১ লেখা হয়েছিল।) ওই সময় দুই পাশে বাঁশ থাকতো। ওই ছাত্রকেও পিঠ পেতে দিতে হয়েছিল। দেখুন, বর্বরতা কেমন লালিত হয়।