নিজস্ব প্রতিবেদক: সাতক্ষীরার আবাদেরহাট বাজারে এবার বৃদ্ধা রউফুননেসাকে মারপিট করে দোকান থেকে বের করে দিয়ে দখল করে নিয়েছেন এক আওয়ামী লীগ নেতা ও তার আত্মীয় স্বজন। বাধা দিতে গিয়ে তাদের হাতে মার খেয়েছেন বৃদ্ধার দুই বিবাহিত মেয়ে আমেনা ও তহমিনা। চোখের নিমেষে দোকান ও সম্পদ হারিয়ে থানা পুলিশের আশ্রয় নিয়েও নিজ দোকান দখলে নিতে পারেননি তারা। বুধবার সকালে এ ঘটনা ঘটে সদর উপজেলার আবাদেরহাট বাজারে। ঘটনার পর দখলদাররা দোকানে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে। অপরদিকে রউফুননেসা ও তার দুই মেয়ে দোকান উদ্ধারের আবেদন নিয়ে এদিক ওদিক ছুটাছুটি করছেন। বৃদ্ধা রউফুননেসা জানান সকাল ৭ টায় তিনি তখনও ঘর খোলেন নি। এ সময় বাইরে থেকে দোকানের সাটারে সজোরে আঘাত করতে থাকে ওরা। দরজা না খোলায় তারা ভেঙ্গেচুরে দোকানে উঠে পড়ে। শিবপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি শিয়ালডাঙ্গা গ্রামের শওকত আলি ও তার স্বজনরা লাঠিসোটা নিয়ে দোকানে ঢুকে ভাংচুর শুরু করে। এ সময় তারা দোকানের সব মালামাল বস্তা পুরে বের করে নিয়ে রউফুননেসাকে মারধর করে তাড়িয়ে দেয়। কান্নাকাটি করে বাধা দেওয়ায় তাকে কিছুক্ষন বাইরে বেধে রাখা হয়। খবর পেয়ে তার দুই মেয়ে আমেনা খাতুন ও তহমিনা খাতুন ঘটনাস্থলে এলে তাদেরকেও মারধর করে চুলের মুঠো ধরে তাড়িয়ে দেয় শওকত তার ভাই কওছার আলি, মুজিবর রহমান, শাহজাহান আলি, শফিকুল ইসলাম ও সোহাগসহ ভাড়াটেরা। রউফুননেসা জানান স্বামী ইসমাইল গাজির রেখে যাওয়া এই দোকান স্বামী ও ছেলের মৃত্যুর পর তিনি ভাড়া দেন। ১৬ বছর ধরে ভাড়ায় থাকার পর গত এক বছর যাবত তিনি নিজেই দোকান পরিচালনা করে আসছিলেন। ওই দোকানেই তিনি রান্নাবান্না করে বসবাস করতেন। তার বড় মেয়ে মেহেরুননেসার জামাই মনিরুল জালজালিয়াতি করে কাগজপত্র তৈরি করে তা বিক্রি করে দেয় বলে জানতে পারেন। এর বিরুদ্ধে আদালতে মামলা চলছে। একইভাবে তারা বাড়ির ও বিলের জমিও জালিয়াতি করে নিয়েছে বলে জানান রউফুননেসা। তবে এ ব্যাপারে শিবপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি শওকত আলি মারধর করা এবং মালামাল লুট করার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন রউফুননেসা তার মেয়ে মেহেরুননেসা রোগগ্রস্থ হওয়ায় তার মেয়ের জামাই মনিরুল ইসলামকে ওই দোকান দানপত্র করে দেয়। সম্প্রতি মনিরুল দোকানটি কওছার আলির মেয়ে খাদিজা খাতুন লাকির কাছে পাঁচ লাখ টাকায় বিক্রি করে দেয়। আজ বুধবার তারা ক্রয়কৃত দোকান দখলে নিয়েছেন। দোকানের ক্রেতা লাকি শিবপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি শওকত আলির ভাতিজি। রউফুননেসা ও তার অপর দুই মেয়ে আমেনা খাতুন ও তহমিনা খাতুন জানান লাকির চাচা শওকত আলি বেশ কিছুদিন ধরে আমাদের ভাড়াটিয়াকে ঘর ছেড়ে দিতে বলছিলেন। চাপের মুখে ভাড়া গ্রহিতা ঘর ছেড়ে আমাদের মাকে বুঝিয়ে দিয়ে যান। আওয়ামী লীগের বড় নেতা হওয়ায় আজ শওকত আলি ও তার লোকজন দোকানটি জোর করে দখল করে নিয়েছে। তারা জানান তাদের মুদি দোকানে মুদি মালামাল ছাড়াও শাড়ি, জুতা বিক্রি হতো। নগদ টাকাসহ সব কিছুই লুট করে নিয়েছে তারা। ছেলের মৃত্যুর পর থেকে ওই ঘরেই বৃদ্ধা মা রউফুননেসা সব সময় থাকতেন ও দোকান চালাতেন। দোকানে শওকত ও তার স্বজনরা তালা ঝুলিয়ে আশপাশে অবস্থান নিয়েছেন। এদিকে দোকান দখল করে নেওয়ার পরই আজ রউফুননেসা সাতক্ষীরায় থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দেন। সদর থানার এসআই আসাদুজ্জামান ঘটনাস্থলে যান। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন যেয়ে দেখলাম শওকত সাহেবরা দখলে রয়েছেন। তারা দখলে থাকলে আমার ক্ষমতা নেই নামানোর। বলেছি বিষয়টি আদালতের মাধ্যমে নিষ্পত্তি করতে।