দেশের খবর: মন্ত্রিসভার নতুন সদস্যদের প্রতি আগামী দিনের দিকনির্দেশনা দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘অনেক আলোচনা-সমালোচনার পরও আপনাদের ওপর আস্থা ও বিশ্বাস রেখে আপনাদের নিয়েই আমি মন্ত্রিসভা করেছি। আপনাদের ওপর আমার এই আস্থা ও বিশ্বাস রাখা যে সঠিক ছিল তা আপনারা সততা ও নিষ্ঠা দিয়ে কাজ করে প্রমাণ করবেন। আর যদি আপনারা না পারেন, তাহলে আমার উদ্দেশ্য সফল হবে না। এ নিয়ে অনেকে অনেক ধরনের কথা বলবেন। আমাকে শুনতে হবে অনভিজ্ঞদের নিয়ে আসার কারণে এটা হয়েছে। তাই আমি আপনাদের বলছি, আপনারা সততা রেখে চলবেন। বিত্তবৈভব অনেক করতে পারবেন। কিন্তু সেটা করতে গেলে চিরদিনের জন্য পচে যাবেন।’
সোমবার (২১ জানুয়ারি) নতুন মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠকে অনির্ধারিত আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন।
বৈঠক শেষে মন্ত্রিসভার একাধিক সদস্যের সঙ্গে কথা বলে এ কথা জানা গেছে।
সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে শেখ হাসিনা সভাপতিত্ব করেন। গত ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয়ের পর টানা তৃতীয়বারের মতো সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ। সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা হিসেবে আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা ৪৭ সদস্যের মন্ত্রিসভা গঠনের পর গত ৭ জানুয়ারি শপথ নেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বৈঠকের শুরুতেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সরকারের ২৪ জন মন্ত্রী, ১৯ জন প্রতিমন্ত্রী এবং ৩ জন উপমন্ত্রীর উদ্দেশে বলেন, ‘আমি আগের মন্ত্রিসভার অনেক বড় পরিবর্তন করে নতুন এই মন্ত্রিসভা গঠন করেছি। এর আগে কোনও মন্ত্রিসভায় এত বড় পরিবর্তন আনা হয়নি। আমি মন্ত্রিসভায় মাঠ থেকে নতুনদের তুলে এনেছি। আপনাদের ওপর আস্থা ও বিশ্বাস রেখেই এ কাজ করেছি।’
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন এমন বেশ কয়েকজন মন্ত্রী বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠকেই পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেনের একটি প্রস্তাবের সঙ্গে পুরোপুরি দ্বিমত পোষণ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সূত্র জানায়, পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রস্তাব করেছিলেন, বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা শুধু মন্ত্রীদের গাড়িতে না উড়িয়ে তা সবার জন্য উন্মুক্ত করা হোক। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এই প্রস্তাবের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘জাতীয় পতাকার ব্যবহার কেন উন্মুক্ত করা হবে? এটা করে কি রাজাকারদের গাড়িতে জাতীয় পতাকা ব্যবহারের সুযোগ করে দিতে হবে? বরং আমি মনে করি সবার গাড়িতে জাতীয় পতাকা ব্যবহার বন্ধ করে দেওয়া উচিত। কেউ গাড়িতে জাতীয় পতাকা ব্যবহার করবে না।’
বৈঠকের একাধিক সূত্র জানায়, সভায় গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী অ্যাডভোকেট শ ম রেজাউল করিম বঙ্গবন্ধুর জন্মস্থান গোপালগঞ্জের টুঙ্গীপাড়াকে ঘিরে একটি ‘মডেল সিটি’ করে তা বঙ্গবন্ধুর নামে নামকরণ করার প্রস্তাব করেন। তিনি বলেন, বিশ্বের ২০টির মতো দেশে স্বাধীনতার নায়ক এবং জাতীয় নেতার নামে সিটি করা হয়েছে। তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, “যেমন ভিয়েতনামে হো চি মিনের নামে ‘হো চি মিন সিটি’ করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে জর্জ ওয়াশিংটনের নামে করা হয়েছে ‘ওয়াশিংটন ডিসি’। এ ছাড়াও বিশ্বের অনেক দেশেই জাতির পিতার নামে সিটি আছে। আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে দেশে কোনও সিটি নেই।”
চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীর নিচ দিয়ে যে টানেল করা হচ্ছে তা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে নামকরণ করার প্রস্তাব করেন ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ। এ ছাড়াও সিলেটে নির্মাণাধীন একটি উল্লেখযোগ্য বড় সড়ককে বঙ্গবন্ধুর নামে নামকরণ করার প্রস্তাব করেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী ইমরান আহমদ।