নিজস্ব প্রতিবেদক : ভোমরা সড়কের ফুলতলা থেকে বিজিবি’র বাঁশকল পর্যন্ত সড়কের দু’ ধারের জেলা পরিষদের জায়গা ভূমিদস্যুদের কাছ থেকে দখলমুক্ত করে ইজারা গ্রহীতাদের ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে। রোববার ভোমরা এলাকার ১৪ জন ইজারাগ্রহীতা সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক বরাবর এ আবেদন করেছেন। ভোমরা গ্রামের আনারুল ইসলাম, এবাদুল হক, আব্দুল খালেক ও জালালউদ্দিনসহ ১৪ জন জেলা পরিষদ প্রশাসক ও জেলা প্রশাসক বরাবর এক আবেদনপত্রে উল্লেখ করেছেন যে, ২০১৪ সাল থেকে তারা ভোমরা থেকে আলীপুর সড়কের দু’ ধারের ভোমরা মৌজার ১/১ খতিয়ানের ১৮৪৫ ও ১৭৮৮ দাগের জেলা পরিষদের জমি একসনা বন্দোবস্ত নিয়ে ভোগদখল করে আসছেন। ১৯৮১ সালের ১২ আগস্ট ভোমরা -সাতক্ষীরা সড়কের ফুলতলা-বাঁশকল পর্যন্ত ভোমরা মৌজার দক্ষিণ পাশের এ একর ৬০ শতক জমি শহরের কাটিয়ার জনৈক আবুল হোসেন তৎকালিন মহকুমা প্রশাসকের কাছ থেকে চাষ করার জন্য বাংলা ১৩৭৬-১৩৮১ সাল পর্যন্ত লীজ নেয়। দু’ দিন না যেতেই ১৪ আগষ্ট ওই জমি অবৈধভাবে সাবেক তহশীলদার গোলাম মোস্তফা ও জিন্নাত আলীর কাছে রেজিষ্ট্রি কোবালা (৭৬৯৪/৮১ ও ৭৬৯৫/৮১) মূলে ৮০ শতক করেন বিক্রি করেন আবুল হোসেন। ১৯৮৯ সালের ৪ ডিসেম্বর তাদের কাছ থেকে ওই জমি কেনেন ভোমরা গ্রামের রফিকুল ইসলাম, শহীদুল ইসলাম, রোকেয়া ও আফছার আলী, অছিয়া, মাসুরাসহ কয়েকজন। শহীদুল ইসলাম ওই জমি গনি সরদারসহ কয়েকজনের কাছে বিক্রি করেন। জেলা পরিষদের ওইসব জমি নিজেদের নামে রেকর্ড করার জন্য ৩০ ধারায় আবেদন করেও ভূমিদস্যুরা প্রভাব খাটিয়ে জেলা পরিষদ কর্মকর্তা ও তাদের আইনজীবীদের অনুপন্থিত দেখিয়ে নিজেদের নামে রেকর্ড করান। এ সময় সেটেলমেন্ট অফিস ওই জমির (এক একর ৬০ শতক) জন্য বিএস ৯৯১ নং খতিয়ান খোলে। তারা আরো জানান, সারা দেশে জেলা পরিষদের জায়গা বেদখল হয়ে যাওয়ায় তা নিজেদের অনুকুলে ফিরিয়ে আনার জন্য ২০০৫ সালের ২৩ নভেম্বর স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ পেয়ে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে ২০০৭ সালের ৭ জানুয়ারি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারি ভূমি কমিশনারদের চিঠি দেওয়া হয়।এ ছাড়া অনিয়মের মধ্যে জমির মালিকানা পাওয়ার ঘটনায় সাতক্ষীরা জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে ২০১৫ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনালে মামলা(৩৫৮/১৫) করা হয়। একইসাথে ওই রাস্তার উত্তর ও দক্ষিণ পাশের জেলা পরিষদের অব্যবহৃত সকল জমির রেকর্ড সংশোধনের জন্য দেওয়ানী ১৪৯/১৫ নং মামলা করা হয়। তবে কৃষি বা জলাশয় দেখিয়ে স্থানীয় কমপক্ষে ২০ জনের নামে ২০১৫ সাল থেকে এক বছরের জন্য নামমাত্র টাকায় বন্দোবস্ত দেয় জেলা পরিষদ। ডিসিআর পেয়েই তারা অনেকে জমির দখল বুঝে নেন। এমন এক পরিস্থিতিতে গত ২৪ জানুয়ারি বা তার পরবর্তী সময় থেকে ইজারা গ্রহীতাদের মাছ লুট করে পুকুরে মাটি ফেলে বা টিনের শেড দিয়ে রাখা জমিতে পিলার নির্মাণের মাধ্যমে পাকা ভবন নির্মানের প্রক্রিয়া চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে রফিকুল ইসলামের ছেলে সহিংসতা মামলার জেলখাটা আসামি মিজানুর রহমান মিণ্টু, জেলা যুবলীগের এক শীর্ষ নেতা বিভিন্ন প্রভাব খাটিয়ে যে কোন মূল্যে নির্মাণ কাজ শেষ করার হুমকি দিয়ে চলেছেন। একসনা ইজারা গ্রহীতারা জানান, সরকারিভাবে ডিসিআর পেলেও তাদেরকে জমি থেকে উচ্ছেদ করে দখল পাকাপাকি করার চেষ্টা চালাচ্ছে রফিকুল, শহীদুল, আকবর আলীসহ একটি মহল। গত পহেলা ফেব্রুয়ারি সকালে তারা জেলা পরিষদ প্রশাসককে অবহিত করলে তিনি সার্ভেয়ার পাঠিয়ে কাজ বন্ধ করে দেন। বিষয়টি জানানো হলে জেলা প্রশাসক আবুল কাশেম মোঃ মহিউদ্দিন জেলা পরিষদ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেন। এ ব্যাপারে ভোমরার সাবেক ইউপি সদস্য রফিকুল ইসলাম দলিল মূলে কিনে খাজনা পরিশোধ করা জমিতে ভবন নির্মাণে কোন বাধা নেই বলে জানান। সাতক্ষীরা জেলা পরিষদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মাহাবুবর রহমান জানান, রোববার তারা ১৪জন ইজারা গ্রহীতার আবেদন পেয়েছে। সংশ্লিষ্ট সকলের সঙ্গে জরুরি সভা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে গত বৃহষ্পতিবার নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দেওয়ার জন্য সার্ভেয়রকে ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়েছিল বলে তিনি নিশ্চিত করেন। সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক আবুল কাশেম মোঃ মহিউদ্দিন জানান, বিষয়টি জেলা পরিষদের তাই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে তাদেরকেই। সেক্ষেত্রে কোন প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হলে সব ধরনের সহায়তা করা হবে। তবে এ ধরনের নির্মাণ কাজ জেলার সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য হুমকি স্বরুপ।
পূর্ববর্তী পোস্ট