নিজস্ব প্রতিবেদক : একজন আইনজীবীর সহযোগিতায় জেলা ও দায়রা জজ আদালতের আদেশের ভুয়া সত্যায়িত কাগজপত্র দাখিলের মাধ্যমে যৌতুকের মামলার আসামী ব্যাংক কর্মকর্তা রাসেল আহম্মেদ পলাশ হাইকোর্ট থেকে জামিনে মুক্তি পেয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। গত ১০ ফেব্র“য়ারি ওই আসামী সাতক্ষীরা কারাগার থেকে মুক্তি পান।
আসামী রাসেল আহম্মেদ পলাশ সাতক্ষীরা শহরের কাটিয়া দাসপাড়ার মৃত আব্দুর রউফের ছেলে ও জনতা ব্যাংকের সাতক্ষীরা সদর উপজেলা ক্যাম্পাস শাখার জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা।
সাতক্ষীরা জজ আদালত সূত্রে জানা গেছে, শহরের কলেজ রোডের আব্দুল মতিনের মেয়ে তার স্বামী ব্যাংক কর্মকর্তা রাসেল আহম্মেদ পলাশ ও তার শ্বাশুড়ি বিলকিস বানুর বিরুদ্ধে দু’ লাখ টাকা যৌতুকের দাবিতে নির্যাতনের অভিযোগে গত ১৪ জানুয়ারি সাতক্ষীরা সদর থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ১১(খ) ধারায় একটি মামলা (জিআর-১৬/১৯)দায়ের করেন। ওই দিনই রাসেল আহম্মেদ পলাশকে পুলিশ গ্রেফতার করে। গত ৭ ফেব্র“য়ারি জেলা ও দায়রা জজ আদালত ৪৪৮/১৯ নং মিস কেস শুনানী শেষে তার জামিন না’মঞ্জুর করেন। ওই মামলার আসামী পক্ষের আইনজীবী হিসেবে সাতক্ষীরা সদর উপজেলা যুবদলের সাবেক সভাপতি অ্যাড. মশিউর রহমান ফারুখের সাক্ষর রয়েছে।
সূত্রটি আরো জানায়, গত বছরের ১৪ আগষ্ট সাতক্ষীরা সদর থানার বিশেষ ক্ষমতা আইনে দায়েরকৃত জিআর-৫৯৯/১৮ নং মামলায় এজাহার বর্হিভুত আসামী মনিরুল ইসলাম ফারুকী, মোঃ কবিরুল ইসলাম, মনিরুল ইসলাম ও জিএম রেজাউল করিম গত ১৬ জানুয়ারি জেলা ও দায়রা জজ আদালত থেকে ১২৪/১৯ নং ক্রিমিনাল মিস কেসে জামিনে মুক্তি পান। ওই মামলায় আসামী পক্ষের আইনজীবী ছিলেন যুবদল নেতা অ্যাড. মশিউর রহমান ফারুখ। অথচ ১৭ জানুয়ারি আসামী রাসেল আহম্মেদ পলাশ এর পক্ষে ১২৪/১৯ নং ক্রিমিনাল মিস কেস এর জামিন বাতিল সংক্রান্ত সত্যায়িত কপি হাইকোর্টে ক্রিমিনাল মিস কেস ৮৭১৮/২০১৯ তে দাখিল করে গত ৪ ফেব্র“য়ারি বিচারপতি রেজাউল হক ও বিচারপতি জাফর আহম্মেদের বেঞ্চ থেকে এক বছরের জন্য জামিন পান। এ আদেশের মাধ্যমে গত ১০ ফেব্র“য়ারি রাসেল আহম্মেদ পলাশ সাতক্ষীরা জেলা কারাগার থেকে মুক্তি পান।
সাতক্ষীরা জেলা ও দায়রা জজ আদালতের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মোঃ আবু সুফিয়ান জানান, যৌতুকের দাবিতে স্ত্রীকে নির্যাতনের মামলার আসামী ব্যাংক কর্মকর্তা রাসেল আহম্মেদ পলাশের পক্ষে উচ্চ আদালতে ক্রিমিনাল মিস কেস ৮৭১৮/২০১৯ এ সাতক্ষীরা জজ আদালতের আদেশ সংক্রান্ত ২৩ জানুয়ারির যে সত্যায়িত অনুলিপি দাখিল করা হয়েছে তাতে তারসহ সকলের সাক্ষর জাল। কারণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করে বলেন যে, জেলা জজশীপে প্রধান তুলনা সহকারি বলে কোন পদ নেই। পদ রয়েছে পরীক্ষক সহকারি। অথচ ওই সত্যায়িত কাগজে প্রধান তুলনা সহকারি হিসেবে সাঈদুজ্জামান এর সাক্ষর দেখানো হয়েছে। সত্যায়িত অনুলিপিতে দরখাস্ত নাম্বার ও ষাটলিপিকারের সাক্ষর থাকে অথচ ওই সত্যায়িত অনুলিপিতে সিডি নং ৪৯৮ লেখার পাশাপাশি ষাললিপিকারের সাক্ষরটিও নেই। ১৩ ফেব্র“য়ারি বুধবার বিকেল ৫টা পর্যন্ত নিবন্ধন খাতায় শেষ দরখাস্ত নং- ৪২১ রয়েছে। তাহলে ওই সত্যায়িত অনুলিপিতে ৪৯৮ নং নিবন্ধন এলো কিভাবে। গত ৩ জানুয়ারি তুলনা সহকারি মোঃ খানজাহান আলী জেলা জজ মহোদের দায়রা সহকারি হিসেবে যোগদান করলেও ২৩ জানুয়ারিতে দেখানো সত্যায়িত অনুলিপিতে তার সাক্ষর দেখানো হয়েছে। এ ছাড়াও রয়েছে অসংখ্য ত্র“টি।
এ ব্যাপারে বুধবার বিকেল চারটা ৩১ মিনিটে অ্যাড. মশিউর রহমান ফারুখের সঙ্গে তার ০১৭১১-০০০৭৩৩ নম্বর মোবাইল ফোনে বার বার যোগাযোগ করা হলে তিনি রিসিভ করেননি।
ঊুধবার বিকেল চারটা ৩৫ মিনিটে রাসেল আহম্মেদ পলাশের ০১৭১৭-৬৬৮৮৪৩ নং মোবাইল নম্বরে যোগাযোগের চেষ্টা করলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।
সাতক্ষীরা জজ কোর্টের পিপি অ্যাড. তপন কুমার দাস জানান,নাশকতার মামলা সংক্রান্ত সদর থানার জিআর-৫৯৯/১৮ এর ১২৪/১৯ নং ক্রিমিনাল মিস কেসে ও সদর থানার ১৬/১৯ নং যৌতুকের মামলায় ৪৪৮/১৯ নং মিস কেসে দায়েরকৃত ওকালতনামায় সদর উপজেলার খানপুরের অ্যাড. মশিউর রহমান ফারুকের সাক্ষর রয়েছে। ১০ ফেব্র“য়ারি জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম প্রথম আদালতে রাসেল আহম্মেদ পলাশের পক্ষে জমাকৃত জামিননামায় অ্যাড. মশিউর রহমান ফারুখের সাক্ষর রয়েছে। জেলা ও দায়রা জজ মোঃ সাদিকুল ইসলাম তালুকদারের সঙ্গে পরামর্শ করার পর বৃহষ্পতিবার রাসেল আহম্মেদ পলাশের জামিন সংক্রান্ত সাতক্ষীরা জজ আদালতের সত্যায়িত অনুলিপি চাওয়া হবে। একইসাথে সংশ্লিষ্ট আইনজীবী মশিউর রহমান ফারুখকে কারণ দর্শাণোর নোটিশের পাশাপাশি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য উচ্চ আদালতকে অবহিত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এদিকে বুধবার বিকেলে হাইকোর্টের ডাইরেক্টরিতে আসামী রাসেল আহম্মেদ পলাশের পক্ষে আইনজীবী কানাই লাল সাহার নাম খুঁজে পাওয়া যায়নি। উচ্চ আদালতে জামিন সংক্রান্ত ক্রিমিনাল মিস কেস ৮৭১৮/১৯ নং মামলাটি ওয়েব সাইটে দেখা যায়নি।
হাইর্কোট থেকে জামিন পেতে সাতক্ষীরা জজ আদালতের রায়ের অনুলিপি জাল!
পূর্ববর্তী পোস্ট