নিজস্ব প্রতিবেদক ঃ বাসন্তী পুজা অনুষ্ঠানে বিষাক্ত আঠা ¯েপ্র করা ও হকি স্টিক দিয়ে দর্শণার্থীদের উপর হামলার প্রতিবাদ করায় একটি গ্রামের হিন্দু সম্প্রদায়ের ২০জনকে পিটিয়ে জখম করা হয়েছে। ওই সম্প্রদায়ের কমপক্ষে ৩০জন শিক্ষার্থী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যেতে পারছে না। অনেকেই পারছেন না হাট বাজারে যেতে। থানা পুলিশ করলে ফের হামলার হুমকি দেওয়ায় আতঙ্কে রয়েছেন সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ধুলিহর ইউনিয়নের খড়িয়াডাযা গ্রামের হিন্দু সম্প্রদায়ের সদস্যরা।
সরেজমিনে বৃহষ্পতিবার দুপুরে খড়িয়াডাঙা বাজারে গেলে খড়িয়াডাঙা গ্রামের সাধারণ মানুষ জানান, পার্শ্ববর্তী মাটিয়াডাঙা গ্রামের আবুল কাশেম ও আব্দুল কাদেরসহ একটি সন্ত্রাসী গ্র“পের কাছে খড়িয়াডাঙা গ্রামের হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষজন দীর্ঘ দিন থেকে জিম্মি হয়ে পড়েছে। আবুল কাশেম ও আব্দুল কাদেরসহ চোর ও ডাকাত চক্রের সদস্যরা জেলা আওয়ামী লীগের এক শীর্ষপর্যায়ের নেতার আত্মীয় পরিচয়ে এলাকায় সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে। আবুল কাশেম ও আব্দুল কাদেরের বিরুদ্ধে হত্যা, ডাকাতি, চাঁদাবাজি, ঘের দখলসহ বিভিন্ন অভিযোগে কমপক্ষে দু’ডজন মামলা রয়েছে। এদের বিরুদ্ধে স্কুলের টয়লেটের ভেনটিলেটর ভেঙে ছাত্রীদের ধর্ষণের চেষ্টার অভিযোগসহ প্রতি রাতে হিন্দুদের ঘেরে মাছ লুটপাটের অভিযোগ রয়েছে। অভিযোগ রয়েছে বোর্ডিং হাউজে ঢুকে মারপিট করে ছাত্রদের কাছ থেকে টাকা পয়সা লুটপাট করার। সন্ত্রাসীরা সশস্ত্র থাকায় তাদের বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলতে সাহস পায় না। আব্দুর কাদের ও আবুল কাশেমের আত্মীয় আজিবর রহমানকে কয়েক বছর আগে মাটিয়াডাঙার শীর্ষ ডাকাত পিটিয়ে হত্যা করে।
সাতক্ষীরা খড়িয়াডাঙা সার্বজনীন বাসন্তীপুজা উদযাপন কমিটির সদস্য সচিব নিখিল চন্দ্র গাইন বলেন, তাদের মন্দিরে বাসন্তী পুজা চলাকালিন গত ১৩ এপ্রিল শনিবার সন্ধ্যায় নেশা করে মণ্ডপের সামনে পূর্ণার্থীদের উদ্দেশ্যে খারাপ অঙ্গভঙ্গি করতে থাকে মাটিয়াডাঙা গ্রামের আবুল কাশেমের ছেলে আশরাফুলসহ কয়েকজন। প্রতিবাদ করায় পুজা উদযাপন কমিটির সদস্য উজ্জ্বল মণ্ডলকে হুমকি দিয়ে বিজয়া দশমীর দিনে তারা আবারো আসবে, মাতলামি করবে। এ নিয়ে বাড়াবাড়ি করলে হাত পা কেটে বেতনা নদীতে ভাসিয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে চলে যায়ে।
নিখিল চন্দ্র গাইন আরো বলেন,বিজয়া দশমীর দিন গত ১৫ এপ্রিল সোমবার রাত নয়টার দিকে আশরাফুল ও কাদেরের ছেলে মিমসহ কয়েকজন কাঁধে হকি স্টিক নিয়ে নেশাগ্রস্ত অবস্থায় তাদের বাসন্তী মন্দিরের পাশে আসে। তারা মন্দিরের সামনে সমবেত হওয়া পূণ্যার্থীদের লক্ষ্য করে বাটি থেকে আঠা জাতীয় পদার্থ ¯েপ্র করতে থাকে। প্রতিবাদ করায় আশরাফুল ও তার সন্ত্রাসী বাহিনীর সদস্যরা দশানী গ্রামের সমরেশ সরকার ও ভাস্কর সরকারসহ পাঁচজনকে পিটিয়ে জখম করে। এ সময় ক্ষুব্ধ গ্রামবাসি আশরাফুলকে মারপিট শুরু করলে তাকে বাঁচাতে স্বেচ্ছাসেবকরা ক্লাবের মধ্যে ঢুকিয়ে দিয়ে তার বাবা আবুল কাশেমকে খবর দেয়। রাত সাড়ে ১০টার দিকে আবুল কাশেম মন্দিরের সামনে এসে মোবাইল ফলে তার সন্ত্রাসী বাহিনীর সদস্যস্য ভাই কাদের, জাকির হোসেন, দামারপোতার নুরুলসহ কয়েকজনকে ডেকে আনে। তারা এসে খাড়িয়াডাঙা গ্রামের সমরেশ সরকার , অভিমন্যু রায়সহ ১০জনকে পিটিয়ে জখম করে। চলে যাওয়ার আগে তারা মাটিয়াডাঙা বাজারে গেলে খড়িয়াডাঙা গ্রামের হিন্দুদের হাত পা ভেঙে দেওয়ার হুমকি দিয়ে চলে যায়। খবর পেয়ে ধুলিহর ইউপি চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বাবু ও ইউপি সদস্য মুক্তানুজ্জামান এসে বিষয়টি মিটিয়ে দেন।
নেহালপুর পল্লী উন্নয়ন উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণীর ছাত্র মৃত্যুঞ্জয় গাইন, রানা মণ্ডল ও নবম শ্রেণীর ছাত্রী রুপা গাইন জানান, মঙ্গলবার দুপুরে তারা স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার সময় কাদেরের বাড়ির সামনে পৌঁছালে কাদেরের নেতৃত্বে কয়েকজন তাদেরকে মারপিটের জন্য বাঁশ নিয়ে তাড়া করে।
খড়িয়াডাঙা গ্রামের নয়ন মল্লিক, ধীরাজ গাইন ও রিপন মল্লিক জানান,মঙ্গলবার সকালে সন্ত্রাসীদের ভয়ে তারা মাটিয়াডাঙা ব্রীজ পার না হয়ে মাছখোলা ব্রীজ পার হয়ে পল্লী চেতনা কলেজে যান। বিকেল ৫টার দিকে তারা বাড়ি ফেরার সময় আশরাফুল ও মিমসহ কয়েকজন সন্ত্রাসী মাছখোলা ব্রীজের উপর তাদেরকে ধাওয়া করে। স্থানীয় লোকজন উপস্থিত হলে ওইসব সন্ত্রাসীরা তাদেরকে পরদিন কলেজে এলে হাত পা ভেঙে দেওয়ার হুমকি দিয়ে চলে যায়। একপর্যায়ে গোয়ালপোতা হয়ে তারা বাড়ি ফিরে আসে।
মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ইউনিয়ন পরিষদে যাওয়ার সময় বাড়ির সামনে পৌঁছাতেই আবুল কাশেম ও তার পরিবারের সদস্যরা বৃদ্ধ গজেন্দ্রনাথ গাইনকে মারপিট করে রাস্তায় ফেলে দেয়। জনতা ব্যাংকে যাওয়ার সময় একই স্থানে এলে ওই সন্ত্রাসীরা বৃদ্ধা নিলা মল্লিককে ও গোবিন্দপুর গ্রামের বাবু সরকার ও সুপারিঘাটা খেয়াঘাটে কাদেরের নেতৃত্বে মারপিট করা হয় ইন্দ্রজিৎ গাইনকে। নেহালপুর পল্লী চেতনা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণীর ছাত্র ধ্র“ব সরকার বলেন, মঙ্গলবার তার ভাই রানার উপরও সন্ত্রাসীরা হামলা করেছে। প্রাণের ভয়ে সেহসহ কয়েকজন গত দু’দিন বাংলা প্রথম পত্র ও দ্বিতীয় পত্রের পরীক্ষা দিতে আসতে পারেনি।
কমপক্ষে তাদের গ্রামের ২০জন ওই সন্ত্রাসী বাহিনীর সদস্যদের হাতে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন উল্লেখ করে খড়িয়াডাঙা গ্রামের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন নারী বলেন, গত নিরাপত্তাহীনতার কারণে গত তিন দিনে তাদের গ্রামের কমপক্ষে ৩০ জন শিক্ষাথী স্কুল ও কলেজে যেতে পারছে না। হামলার ভয়ে তারা ওইসব শিক্ষার্থীদের বাড়ির বাইরে যেতে দিচ্ছেন না। এমনকি হাটে বাজারে না যাওয়ার জন্য পরিবার প্রধানদের অনুরোধ করা হয়েছে।
জানতে চাইলে নেহালপুর পল্লী উন্নয়ন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দীলিপ কুমার মল্লিক খড়িয়াডাঙা গ্রামের কয়েকজন শিক্ষার্থী গত কয়েক দিনে পরীক্ষা দিতে না আসার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, বিষয়টি স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানকে অবহিত করা হয়েছে।
ধুলিহর ইউপি চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান জানান, বিষয়টি নিষ্পত্তি করার চেষ্টা চলছে।
মাটিয়াডাঙা গ্রামের আবুল কাশেম তার বিরুদ্ধে কয়েকটি মামলা থাকার কথা স্বীকার করে বলেন, তার ছেলেকে নিয়ে খড়িয়াডাঙার কয়েকজন হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনের কথাকাটাকাটি নিয়ে সমস্যার সমাধানের উদ্যোগ নিয়ে তিনি ব্যর্থ হয়েছেন।
সাতক্ষীরা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান বৃহষ্পতিবার দুপুরে এ প্রতিবেদককে বলেন, এ নিয়ে তার কাছে কোন অভিযোগ করা হয়নি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।সাতক্ষীরার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইলতুৎ মিশ বলেন, তিনি বিষয়টি দেখবেন।
খড়িয়াডাঙ্গায় হিন্দু সম্প্রদায়ের ২০জনকে পিটিয়ে জখম
পূর্ববর্তী পোস্ট