অনলাইন ডেস্ক: ভারতীয় আসাম রাজ্য নাগরিক নিবন্ধনের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করেছে। দেড় বছর আগে খসড়া প্রকাশের পর শনিবার সকাল ১০টায় এই চূড়ান্ত তালিকা ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে।
তিন কোটি ৩০ লাখ আবেদেনকারীর মধ্যে তিন কোটি ১১ লাখ লোককে চূড়ান্ত তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। কাজেই ১৯ লাখ লোক রাষ্ট্রহীন হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
নাসিরুদ্দীন চৌধুরী নামের এক আবেদনকারী বলেন, আমার সাত বছর বয়সী কন্যা নাজমিন ও আট বছরের ভাতিকা মাসুম তালিকা থেকে বাদ পড়েছেন। কাজেই আমরা এখন খুবই আতঙ্কিত।
আসাম সরকারের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, জাতীয় নাগরিকত্ব নিবন্ধনে(এনআরসি) তিন কোটি ১১ লাখ লোক আবেদন করেছিলেন। সেখান থেকে ১৯ লাখকে বাদ দেয়া হয়েছে।
রাজ্যটির ৪০ লাখ লোকের ভাগ্য নির্ধারণে বছর চারেক আগে এই তালিকা বাস্তবায়নের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এতে আসামে ভারতীয়দের শনাক্ত করার কথা বলা হয়েছে।
আসাম সরকার জানায়, ‘অবৈধ বাংলাদেশি’দের চিহ্নিত করে ফেরত পাঠানোর লক্ষ্যেই জাতীয় নাগরিকপঞ্জি (এনআরসি) চূড়ান্ত করা হচ্ছে।
তালিকায় নাম না-থাকাদের এখনই বের করে দেয়া হবে না বলে কর্মকর্তারা বারবার আশ্বস্ত করলেও এর মাধ্যমে আসামের সংখ্যালঘু বাঙালি বিশেষত মুসলমানদের ‘উইচ হান্টিং’-এর শিকার হতে হবে বলে আশঙ্কা করছেন পর্যবেক্ষকরা।
সংশোধিত তালিকা থেকে বাদ পড়া আবেদনকারীরা তালিকায় নাম ওঠাতে ২৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আপিল করতে পারবেন বলে আগেই জানিয়েছেন রেজিস্ট্রার জেনারেল অব ইন্ডিয়া শৈলেশ। তিনি বলেন, আপত্তি করার জন্য জনগণকে পর্যাপ্ত এবং যথেষ্ট সুযোগ দেয়া হবে।
প্রকৃত ভারতীয় নাগরিকের ভয় পাওয়ার কারণ নেই। আসামের করিমগঞ্জের আইনজীবী শিশির দে ডয়চে ভেলেকে জানান, ৩১ আগস্টের তালিকা থেকে যারা বাদ পড়বেন তাদের স্থানীয় এনআরসি অফিস থেকে প্রত্যাখ্যান সংক্রান্ত আদেশের অনুলিপি দেয়া হবে। এটি নিয়ে তারা ১২০ দিনের মধ্যে বিদেশি ট্রাইব্যুনালে আপিল করতে পারবেন।
আনন্দবাজার পত্রিকার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শনিবার সকাল ১০টায় আসাম এনআরসির ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে তালিকা। যাদের ইন্টারনেট কানেকশন নেই, তারা এনআরসি সেবা কেন্দ্রে গিয়ে তালিকা দেখতে পারবেন।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, আসামজুড়ে প্রাথমিকভাবে এক হাজার ট্রাইব্যুনাল বসানো হবে। ইতিমধ্যে ১০০টি চালু রয়েছে। তালিকায় নাম উঠেনি এমন কেউ ট্রাইব্যুনালে আপিল করে হেরে গেলে হাইকোর্টে যেতে পারবেন। সেখান থেকে সুপ্রিমকোর্টে যাওয়ার সুযোগ থাকবে।
কিন্তু দীর্ঘ এই আইনি প্রক্রিয়া চলাকালীন কী অবস্থায় থাকবেন তালিকাবহির্ভূতরা? এ বিষয়ে কেন্দ্রের আশ্বাস, কাউকেই ডিটেনশন সেন্টারে রাখা হবে না। কিন্তু আশ্বাসের পরও আতঙ্ক কাটছে না লাখ লাখ আসামবাসীর মধ্যে।
তালিকা থেকে বাদ পড়লে কী হবে, তাছাড়া দরিদ্র-নিুবিত্ত মানুষের পক্ষে নাগরিকত্বের লড়াই চালিয়ে যাওয়া কতটা সম্ভব হবে, সেই আশঙ্কাও করছেন অনেকে।
এএফপি বলছে, নাগরিকদের এই তালিকা প্রকাশের আগে আসাম কর্তৃপক্ষ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অতিরিক্ত ১৭ হাজার সদস্য সেখানে মোতায়েন করেছে।
কয়েকটি অঞ্চলে জনগণের একসঙ্গে অবস্থান নিষিদ্ধ করা হয়েছে এবং আসাম পুলিশ তাদের টহলরত কর্মকর্তাদের ছবিও টুইটারে প্রকাশ করেছে।
এ ছাড়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কেউ যাতে গুজব ছড়াতে ও বিদ্বেষমূলক বক্তব্য না দিতে পারে তার জন্য একটি সাইবার সেলও খোলা হয়েছে।
আসামে প্রথম নাগরিকপঞ্জি প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৫১ সালে। তারপর থেকে সংশোধন হতে হতে শেষ পর্যন্ত সুপ্রিমকোর্টের নির্দেশে চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশিত হচ্ছে।
সর্বশেষ খসড়া তালিকা প্রকাশিত হয়েছিল ২০১৮ সালের ৩০ জুলাই। সেই তালিকায় তিন কোটি ২৯ লাখ বাসিন্দার মধ্যে বাদ পড়েন ৪০ লাখ ৭ হাজার ৭০৭ জন।
১৯৭১ সালের ২৪ মার্চের আগে রাজ্যে আবাস গেড়েছেন এমন প্রমাণ না পাওয়ায় তাদের নাম রাখা হয়নি বলে জানানো হয়।
পর্যাপ্ত নথিপত্র থাকা সত্ত্বেও নাগরিকপঞ্জিতে নাম ওঠেনি বা প্রকৃত অনেক নাগরিক তালিকা থেকে বাদ পড়েছেন এমন অনেক খবরও উঠে আসে সংবাদমাধ্যমে। দীর্ঘদিন বিএসএফ বা সরকারি দফতরে চাকরি করার পরও অনেকের নাম বাদ পড়ার ঘটনা ঘটেছে।