মাহফিজুল ইসলাম আককাজ: সাতক্ষীরায় ফাস্ট মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেড ভিক্ষুকের টাকাসহ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে লাপাত্তা। গ্রাহকের টাকা বেমালুম হজম করার জন্য আদালতে মামলা করেছে এ প্রতারক চক্র। ভুক্তভোগীরা জানান, ২০১০ সালে এ প্রতিষ্ঠাটি যাত্রা শুরু করে। ডিপোজিট ডিপিএস’র নামে অধিক মুনাফার কথা বলে অসংখ্য গ্রাহকের কাছ থেকে নেয়া হয় কয়েক লক্ষ টাকা। এক পর্যায়ে প্রায় ২শ’ গ্রাহকের কোটি টাকা নিয়ে তারা লাপাত্তা হয়ে যায়। জানা গেছে, ওই প্রতিষ্ঠানের গ্রাহক রফিকুল ইসলাম ডিপোজিট করে ৮ লক্ষ টাকা, মিজানুর রহমানের কাছ থেকে ডিপোজিটের নামে নেয়া হয় ২ লক্ষ টাকা, আব্দুর রশিদের ১ লক্ষ টাকা, ক্যাপ্টেন বাবু’র ১ লক্ষ টাকা, আব্দুর রহিম নামের আরেক গ্রাহকের কাছ থেকে ৫ লক্ষ টাকা, চায়ের দোকানী ছালেহা খাতুনের নিকট থেকে ৪ লক্ষ ৩৫ হাজার টাকা, ভিক্ষুক সায়েরা বিবি’র কাছ থেকে ৮০ হাজার টাকা। এভাবে বিভিন্ন গ্রাহকের কাছ থেকে প্রায় কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়। এ ব্যাপারে ভুক্তভোগীরা সাংবাদিকদের জানান, অধিক মুনাফার কথা বলে আমাদের কে ওই প্রতিষ্ঠানে একাউন্ট করায়। আমরা সেই আশায় আমাদের সর্বস্ব জমা রাখি। প্রথমে শহরের মিনি মার্কেটে অফিস খুলে বসে। এর পরে নারিকেলতলা মোড়ে সাইন বোর্ড তুলে এই প্রতিষ্ঠানটি গ্রাহকদের নানাভাবে হয়রানী ও প্রতারণার ফাঁদ পাতে। পরবর্তীতে খুলনা রেড মোড় নাফ ডায়াগনস্টিক সেন্টারের নিচ তলায় চলে যায়। ২০১৪ সালে মে মাসে এই প্রতিষ্ঠানটি হঠাৎ সেখান থেকে লাপাত্তা হয়ে যায়। এর পর ২০১৬ সালে নতুনভাবে প্রতারণার ফাঁদ পেতে প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার ডাঃ ওমর ফারুক কাটিয়া টাউন বাজার সংলগ্ন শাহী মসজিদের পাশে তার হোমিও প্যাথিক চেম্বার বিসমিল্লা ক্লিনিকের উপর প্রতিষ্ঠানের সাইন বোর্ড খাটিয়ে প্রতারণা চালিয়ে যাচ্ছে। ২০১৪ সালের মে মাসে প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেলে গা বাঁচাতে ফাষ্ট মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ লিমিটেডের প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান এস.এম শরিফ-উজ-জামান রুমি কোন রেজুলেশন ছাড়াই স্থানীয় একটি পত্রিকায় অব্যাহতি জানান। শহরের হাসিনা পল্লী ফোনের মালিক গ্রাহক আব্দুর রশিদ ও আর এক গ্রাহক সায়রা বিবি জানান, চেয়ারম্যান এস.এম শরিফ-উজ-জামান রুমির স্বাক্ষরে লক্ষ লক্ষ টাকা লেন দেন হয়েছে। তার স্বাক্ষরিত চেক আমাদের কাছে রয়েছে। ভিক্ষুকসহ গ্রাহকদের আতœসাৎকৃত টাকায় তৈরি হয়েছে বেতনা ট্রেডার্স এমন দাবি করেছেন গ্রাহকরা। হতাশাগ্রস্থ হয়ে চেয়ারম্যান এস.এম শরিফ-উজ-জামান রুমির স্বরণাপন্ন হন গ্রাহকরা। তিনি গ্রহকদের আশ্বস্ত করে বলেন ম্যানেজার ডাঃ ওমর ফারুক আসলে টাকা ফেরত দেওয়ার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। কিন্তু টাকা ফেরত পাওয়া তো দুরের কথা উল্টো গ্রাহকদের নামে এই প্রতিষ্ঠানটি সাতক্ষীরার বিজ্ঞ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ফৌজদারি কার্যবিধির ১০৭/১১৭(গ) ধারায় মামলা করেছে। যার নং ৮২৫/১৬ (সাত)। এ সব ঘটনায় ফাস্ট মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেডের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি শহরের মুনজিতপুর এলাকার ছালামত উল্লাহর ছেলে এস.এম. শরিফ উজ-জামান রুমির সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ম্যানেজার ডাঃ ওমর ফারুকের সাথে আমার অনেকদিন যোগাযোগ নেই। তার সাথে যোগাযোগ হলে শুনে দেখবো কেন গ্রাহকদের নামে মামলা করেছে। এখন ওই প্রতিষ্ঠানের সাথে আমার কোন যোগাযোগ নাই। প্রতিষ্ঠানের ক্যাশিয়ার ডাঃ ওমর ফারুক টাকা তোলাসহ সব কিছুই দেখাশুনা করতো। কিন্তু আমার কাছে কোন হিসাব নিকাশ দিত না। এ ব্যাপারে ম্যানেজার ডাঃ ওমর ফারুকের একাধিক সেল ফোনে যোগাযোগ করা হলে সব গুলি নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়। এদিকে ০১.০৭.২০১৬ তারিখে সাতক্ষীরা সদর থানার অফিসার ইনচার্জ বরাবর গ্রাহক ছালেহা খাতুন বাদী হয়ে অভিযোগ দায়ের করে। স্থানীয় গন্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে এস. আই দেলোয়ার সদর থানায় ফাষ্ট মাল্টিপারপাস কো- অপারেটিভ সোসাইটির ম্যানেজার ডাঃ ওমর ফারুক কে নিয়ে আলোচনায় বসেন গ্রাহকদের টাকা কিভাবে পরিশোধ করবে। আলোচনায় ম্যানেজার গ্রাহকদের টাকা পরিশোধের জন্য তিন দিন সময় চেয়ে নেয়। এর পর থেকে সে লাপাত্তা হয়ে গেছে। লাপাত্তার ২ মাস পর গ্রাহকদের টাকা ফেরত না দিয়ে উল্টো ২৭.০৯.১৬ তারিখে মামলা করে ম্যানেজার ডাঃ ওমর ফারুক। এদিকে ওই মাল্টিপারপাসের গ্রাহক ভিক্ষুক সায়েরা বিবি সাংবাদিকদের জানায়, সারা জীবন ভিক্ষা করে অনেক কষ্টে ৮০ হাজার টাকা জমিয়েছি। সেই টাকা আমি ওখানে জমা রাখি। এখন তারা পালাইছে। এখন শেষ বয়সে আমার কি হবে বাপ? তোমরা আমার টাকার ব্যবস্থা করে দাও। তা নইলে আমি মরে যাব। অন্যান্য গ্রাহকরা আরো জানায়, ওই মাল্টিপারপাসের চেয়ারম্যান এস.এম শরিফ-উজ জামান রুমি, ম্যানেজার শহরের কাটিয়া এলাকার সামছুর রহমানের ছেলে ডাঃ ওমর ফারুক ও শেখ ফারুক আহমেদ বাবলু মূলত এই তিন জন মিলে প্রতারণার জাল বিছিয়ে গ্রাহকদের কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। ভুক্তভোগী ও সচেতন মহলের দাবি আর যাতে সাধারণ মানুষ এ ধরনের প্রতারণার স্বীকার না হয় এ জন্য এ ধরনের প্রতারক চক্রদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। এ ব্যাপারে জেলা পুলিশ সুপারের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।