শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) ছয় নবীন শিক্ষার্থীকে র্যাগিংয়ের নামে অর্ধনগ্ন করে শৌচাগারে সেলফি তুলতে বাধ্য করা হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের পার্শ্ববর্তী তপোবন আবাসিক এলাকার একটি মেসে রাতভর এ নির্যাতনের ঘটনা ঘটে।
পরিচিত হওয়ার নামে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিভিল অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সিনিয়র শিক্ষার্থীরা বৃহস্পতিবার রাত ১০টা থেকে শুক্রবার ভোর ৬টা পর্যন্ত র্যাগ দিয়ে অর্ধনগ্ন করে টয়লেটে সেলফি তুলে।
এদিকে র্যাগিংয়ের বিষয় প্রমাণিত হলে জড়িতদের কঠোর শাস্তির আওতায় নিয়ে আসা হবে বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন শাবিপ্রবির উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে র্যাগিংয়ের ওপর প্রশাসন জিরো টলারেন্স আছে। আমরা চাই না কাউকে মানসিক চাপের মুখে রাখা হোক। আর র্যাগিংয়ের নামে অশ্লীলতা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।’
অনুসন্ধানে জানা যায়, গত বৃহস্পতিবার রাত ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের পার্শ্ববর্তী তপোবন আবাসিক এলাকার একটি মেসে রাত ১০টা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত সিভিল অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের ছয় নবীন শিক্ষার্থীকে একই বিভাগের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের কয়েকজন শিক্ষার্থী পরিচয়ের নামে রাতভর অর্ধনগ্ন করে মানসিক ও শারীরিক নিযার্তন করে। এ সময় শৌচাগারে নিয়ে অর্ধনগ্ন হয়ে সেলফি তুলতে বাধ্য করা হয়। একপর্যায়ে সিনিয়রদের কথা মতো বিভিন্ন ধরনের অশ্লীল কার্যকলাপ না করলে তাঁদের অর্ধনগ্ন ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়। নবীন শিক্ষার্থীদের অনেকে কথা না শোনায় তাঁদের মারধর করে সিনিয়ররা। র্যাগিংয়ের বিষয়গুলো কাউকে জানানো হলে আবারও মেসে ডেকে নেওয়া হবে। পাশাপাশি শিক্ষাজীবনকে হুমকির মুখে ঠেলে দেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ারিও দেয় সিনিয়ররা।
ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মারধর ও অর্ধনগ্নতার শিকার হওয়ায় এখন মানসিকভাবে একদম বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে নবীন শিক্ষার্থীরা। সিনিয়র শিক্ষার্থীদের হুমকির ভয়ে তারা এ বিষয়ে কোনো কথা বলতেও আগ্রহী নয়। এমনকি নিরাপত্তার ভয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বরাবর অভিযোগ পর্যন্ত দিতে পারছে না তারা। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে এসে সিনিয়রদের এমন আচরণে বিস্মিত তারা।
এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, র্যাগিংয়ে জড়িতদের মধ্যে সিভিল অ্যান্ড ইনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষ প্রথম সেমিস্টারের ১৯ জন এবং পলিটিক্যাল স্টাডিজ বিভাগের একই বর্ষের একজন শিক্ষার্থী জড়িত। এদের মধ্যে কয়েকজন সিনিয়র আগ্রাসী ভূমিকায় ছিল বলে জানিয়েছে ভুক্তভোগীরা।
শাবিপ্রবির প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক জহির উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমরা যেকোনো ধরনের র্যাগিংয়ের বিপক্ষে। আগেই শিক্ষার্থীদের এ ব্যাপারে সতর্ক করা হয়েছে। কোনো অভিযোগ পেলে আলোচনা করে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’ পাশাপাশি তিনি এ রকম ঘটনার কোনো অভিযোগ থাকলে সরাসরি এসে জানানোর অনুরোধ করেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিভিল অ্যান্ড ইনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. মুশতাক আহমেদ বলেন, ‘আমি ঘটনাটি শুনেছি। এ বিষয়ের তদন্ত করা হবে। র্যাগিংয়ের বিষয়টি প্রমাণিত হলে অবশ্যই জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’