স্বাস্থ্য কণিকা: হাজা রোগের জ্বালায় অস্থির হয়ে উঠেন অনেকেই ডাক্তার দেখিয়ে, পায়ে নানারকম মলম লাগিয়ে, ওষুধ খেয়েও কোনো লাভ হচ্ছে না। বারবার এই হাজা ফিরে ফিরে আসে। তা ঠাণ্ডা ভেজা আবহাওয়াতে বা বারবার পানি ঘাঁটলে ওরকম একটু-আধটু হাজা হয়েই থাকে। চিন্তা করবেন না। হাজার বিষম আপদ থেকে উদ্ধার পেতে জেনে নিন ঘরোয়া উপায়। আর হাজা দূর করুন মাত্র এক সপ্তাহে।
পা তুলে রাখুন: হাজার হাত থেকে আপনার মুক্তি পাবার জন্য এটা কিন্তু প্রাথমিক ধাপ। পায়ে, বা যেখানে হাজা হয়েছে, বালিশ বা অন্য কিছুতে ভর দিয়ে একটু তুলে রাখুন। দেখবেন পায়ে রক্ত চলাচলও ভালো হচ্ছে আর ফোলাও কমছে। ব্যথা, জ্বালাও আস্তে আস্তে কমছে। দেখবেন আপনার শরীরের তাপমাত্রা যেন ঠিকঠাক থাকে। নিজেকে গরম রাখতে কফি বা হট চকোলেট খান। কম্বল জড়িয়ে আরাম করেও বসে থাকতে পারেন।
ম্যাসাজ করুন: হাজার জ্বালা থেকে আপনাকে আরাম দিতে পারে কিন্তু ম্যাসাজ। দিনে অন্তত দু’বার গোল গোল করে পায়ে ম্যাসাজ করুন। দেখবেন ওতে পায়ে রক্ত সঞ্চালনও ভালো হচ্ছে, আরামও মিলছে, আর হাজা ছড়িয়েও পড়ছে না। নারকেল তেল, অলিভ অয়েল বা ক্যাস্টর অয়েল মালিশ করার সময় ব্যবহার করুন। আর ইচ্ছে হলে ল্যাভেন্ডার, রোজমেরি, লেমন অয়েলের মতো এসেনশিয়াল অয়েলও ব্যবহার করতে পারেন। উপকার পাবেন।
আলু: আলুর অ্যান্টি-ইরিটেটিং গুণ থাকায় আপনার হাজার জ্বালা আর চুলকানি কমাতে আলুকে স্বচ্ছন্দে ব্যবহার করতে পারেন।
উপকরণ: আলুর মোটা স্লাইস, অল্প লবণ।
পদ্ধতি: আলুর মোটা স্লাইসের ওপর নুন ছড়ান। তারপর আপনার হাজার জায়গায় ঘষুন।
২.উপকরণ: আলু ২ টো, জল ২ কাপ।
পদ্ধতি: একটা বা দুটো আলু ২ কাপ পানিতে ভালো করে ফুটিয়ে সেটা ঠাণ্ডা করে আপনার ব্যথার জায়গায় লাগান। ১০ মিনিট রাখুন। দেখবেন উপকার পাচ্ছেন। দিনে অন্তত দু’বার করে যেকোনো একটা করে যান। এক সপ্তাহে দেখবেন হাজা অনেকটা ভ্যানিশ।
পেঁয়াজ
হাজা সারাতে পেঁয়াজ কিন্তু বহু প্রাচীনকাল থেকেই ব্যবহার করা হয়ে আসছে। পেঁয়াজের অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি, অ্যান্টি-সেপ্টিক আর অ্যান্টি-বায়োটিক গুণ থাকায় তা সহজেই আপনার হাজার ব্যথা, ফোলা ভাব, প্রদাহ দূর করে আপনাকে আরাম দিতে পারে।
উপকরণ:
পেঁয়াজের পেস্ট, যতটা লাগবে।
পদ্ধতি:
পেঁয়াজ পেস্ট করে আপনার হাজার জায়গায় ভালো করে লাগান। ১৫-২০ মিনিট রেখে ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এক সপ্তাহ ধরে টানা করে যান, দেখবেন হাজা’র জ্বালা অনেকটাই দূর হয়েছে। তবে আপনার পা যদি ফেটে গিয়ে থাকে, তাহলে পেঁয়াজ ব্যবহার করবেন না। ওতে আপনার জ্বালা আরও বাড়বে।
ক্যালেন্ডুলা ফুল:
ক্যালেন্ডুলা অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি হিসেবে ব্যবহার হয়, আর তাই হাজার চুলকানি, প্রদাহ, ব্যথা থেকে আপনাকে এক নিমেষে আরাম দিতে পারে। তাছাড়া হাজা তাড়াতাড়ি সারাতেও ক্যালেন্ডুলা ব্যবহার করা হয়।
উপকরণ:
ক্যালেন্ডুলা ফুল, সি-সল্ট।
পদ্ধতি:
২ কাপ পানিতে ক্যালেন্ডুলা ফুল দিয়ে কম আঁচে ১৫-২০ মিনিট ফোটান। এরপর ঘরের তাপমাত্রায় ঠাণ্ডা করে ওতে সি-সল্ট দিন সামান্য। আপনার ব্যথার জায়গায় ২০ মিনিট মতো লাগিয়ে রাখুন। ৫-৬ দিন পরেই দেখবেন হাজা কমতে শুরু করেছে।
গোলমরিচ:
গোলমরিচের অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি গুণও কিন্তু আপনাকে হাজা থেকে সহজে মুক্তি দিতে পারে।
উপকরণ:
১ চামচ গোলমরিচ গুঁড়া, ১ চামচ তিল তেল।
পদ্ধতি:
তিলের তেল গরম করে ওতে গোলমরিচের গুঁড়ো দিন। এবার ছেঁকে নিয়ে খানিকক্ষণ ঠাণ্ডা হতে দিন। অল্প ঠাণ্ডা হলে আপনার হাজায় মালিশ করুন ভালো করে। দিনে ২-৩ বার করুন। দেখবেন উপকার পাচ্ছেন।
অ্যালোভেরা: ব্রণ দূর করতে অ্যালোভেরার যে জুড়ি নেই, তা তো জানেনই। কিন্তু জানেন কি, আপনার পায়ের হাজা দূর করতেও অ্যালোভেরা এক নম্বর। অ্যালোভেরাতে অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি গুণ আছে, যা সহজেই আপনাকে হাজার ব্যথা আর চুলকুনি থেকে মুক্তি দিতে পারে। তাড়াতাড়ি হাজা সারাতেও এর জুড়ি নেই।
উপকরণ:
ফ্রেশ অ্যালোভেরা জেল।
পদ্ধতি:
অ্যালোভেরা পাতা থেকে অ্যালোভেরা জেল বের করে নিন। এরপর ওটা পায়ের যেখানে হাজা হয়েছে, সেখানে ভালো করে ম্যাসাজ করে লাগান। যখন শুকিয়ে যাবে, ভিজে ন্যাকড়া দিয়ে আলতো করে ঘষে তুলে ফেলুন। দিনে বার দুয়েক করুন। দেখবেন জলদি ফল পাচ্ছেন।
তাহলে এবার তো আর চিন্তার কোনো কারণই নেই। পায়ে হাজা হলেও আর তড়িঘড়ি ডাক্তারের কাছে না ছুটলেও হয়। ঘরোয়া টিপস যখন পেয়েই গেছেন, তখন আজ থেকেই শুরু করে দিন আপনার পায়ের হাজার চিকিৎসা। আর মাত্র এক সপ্তাহে পান হাজা থেকে মুক্তি!