বিদেশের খবর: যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের ঘোষণায় হতভম্ব হয়েছে শরিক দেশগুলো। ফলে নতুন করে আফগানিস্তানে গৃহযুদ্ধ শুরু হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকরা। প্রতিবেশী দেশগুলোর একই ভয়।
সীমান্তে সুরক্ষা নিশ্চিত করা ও এ সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় নীতিমালা গ্রহণে মার্কিন কর্মকর্তাদের সঙ্গে তারা ইতিমধ্যে বৈঠক করেছেন। গৃহযুদ্ধ শুরু হলে শরণার্থীদের ঢল প্রতিবেশী দেশগুলোর দিকে ধাবিত হবে। মঙ্গলবার রয়টার্স এ খবর দিয়েছে।
গত ২০ ডিসেম্বর আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। আফগানিস্তানে মোতায়েন ১৪ হাজার সেনার মধ্য থেকে প্রায় অর্ধেক (৭ হাজার) কয়েক মাসের মধ্যে প্রত্যাহার করে নেবে বলে জানিয়েছে দেশটি।
সেনা প্রত্যাহারের এ ঘোষণার জেরে পদত্যাগ করেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী জেমস ম্যাটিস। কূটনৈতিক শান্তি কার্যক্রমের অংশ হিসেবে ম্যাটিস আফগানিস্তানে মার্কিন সেনার শক্ত উপস্থিতি চেয়েছিলেন।
বিশ্লেষকরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এ সিদ্ধান্তের ফলে তালেবানরা আফগানিস্তানজুড়ে তাদের সন্ত্রাসী কার্যক্রম বিস্তৃত করার সুযোগ পেতে পারে। দেশটিতে আবারও গৃহযুদ্ধ শুরু হবে। ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের পরামর্শক গ্রিম স্মিথ বলেন, ‘সেনা প্রত্যাহারের ফলে নতুন এক গৃহযুদ্ধের দামামা বেজে উঠবে। এ অঞ্চলে আবারও অস্থিতিশীলতা শুরু হবে। প্রতিবেশী দেশগুলো এর কুফল ভোগ করবে।
ওয়াশিংটনের এ অশনিসংকেত তাদের উদ্বেগ আরও বাড়িয়ে দেবে।’ গৃহযুদ্ধ শুরু হলে আফগান শরণার্থীদের ঢল প্রতিবেশী দেশের দিকে নামবে বলেও হুশিয়ারি করেন তিনি।
সেনা প্রত্যাহারের ঘোষণার পর সীমান্তে নিরাপত্তা জোরদার করেছে প্রতিবেশী দেশগুলো। পাকিস্তান ইতিমধ্যে ১ হাজার ৪০০ কিলোমিটার সীমান্তে বেড়া দেয়ার কাজ শুরু করেছে।
সম্ভাব্য শরণার্থী ঢল ঠেকাতে ৫০ হাজার সেনাও মোতায়েন করেছে দেশটি। পাকিস্তান ছাড়াও আফগানিস্তানের সঙ্গে ইরান, তুর্কমেনিস্তান, উজবেকিস্তান, তাজিকিস্তান ও চীনের সীমান্ত রয়েছে। আন্তর্জাতিক শরণার্থী সংস্থার হিসাবে, পাকিস্তানে ১৪ লাখ ও ইরানে ১২ লাখ আফগান শরণার্থী বসবাস করছেন।
২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার ও পেন্টাগনে সন্ত্রাসী হামলার পর যুক্তরাষ্ট্র ওই বছর আফগানিস্তানে যুদ্ধ শুরু করে। ওই হামলার অভিযোগে ওসামা বিন লাদেনের খোঁজে যুদ্ধ শুরু করে যুক্তরাষ্ট্র। ১৭ বছরের আফগান যুদ্ধে ২ হাজার ৪০০ মার্কিন সেনার মৃত্যু হয়েছে।
এদিকে রাতের আঁধারে সামরিক অভিযানের নামে বেসামরিক নাগরিকদের হত্যা করছে সিআইএর মদদপুষ্ট আফগান সেনারা। তালেবান সন্দেহে বেসামরিকদের ধরে নিয়ে নির্যাতন চালিয়ে, মাথায় গুলি করে হত্যা করা হয়। আফগানিস্তান সরকারের এক তদন্তে এ তথ্য উঠে এসেছে।
মঙ্গলবার নিউইয়র্ক টাইমস জানায়, মার্কিন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ পরিচালিত এ সন্ত্রাসবিরোধী সশস্ত্র বাহিনীর নাম ‘০২ ইউনিট’।
তাদের নিয়োগ দেয়া, প্রশিক্ষণ ও বেতন-ভাতাসহ সামরিক রসদ সবই সরবরাহ করে সিআইএ। সাধারণ আফগান সেনাদের চেয়ে সশস্ত্র এ বাহিনীর সদস্যদের বেতন তিন গুণ বেশি। তাদের সংখ্যা কত, তা স্পষ্ট নয়।
তবে আফগান কর্মকর্তাদের ধারণা, ০২ ইউনিটের সদস্য সংখ্যা ৩ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ১০ হাজার।
সরকারি তদন্ত কর্মকর্তাদের মতে, অভিযানের নামে হত্যার ঘটনা খতিয়ে দেখেছে, যাদের সঙ্গে আইএস বা তালেবান জঙ্গিদের সংশ্লিষ্টতা ছিল না। মানবাধিকার কর্মকর্তাদের তথ্যানুসারে, এক বছরে ১৫টি নির্যাতনের অভিযোগ পাওয়া গেছে।