প্রেস বিজ্ঞপ্তি: তালার মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি দীর্ঘ ৪৫ বছর পর সরকার বহু প্রত্যাশিত মুক্তিযোদ্ধাদের সঠিক তালিকা প্রণয়নের ব্যবস্থা গ্রহণ করেন মন্ত্রণালয় ও জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল এই দুরুহ ও কঠিন দায়িত্ব পালনের জন্য মুক্তিযোদ্ধাদের যাচাই বাছাইয়ের একটি নীতিমালা প্রণয়ন করেন ২০১৭ জানুয়ারি থেকে ফেব্রুয়ারির মধ্যে যাচাই বাছাই কার্যক্রমের নির্দেশিকা অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট উপজেলা যাচাই বাছাই কমিটির মাধ্যমে কার্যক্রম গ্রহণের প্রক্রিয়া শুরু করেন। দেশব্যাপী যাচাই বাছাই প্রক্রিয়া শুরু হলে দেখা যায় যে, অধিকাংশ উপজেলায় জামুকা নির্ধারিত নীতিমালার নির্দেশিকা অনুযায়ী যাচাই বাছাই কার্যক্রম ত্রুটিপূর্ণভাবে অনুসরণ হচ্ছে। ফলে অনেক উপজেলায় মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। মুক্তিযোদ্ধারা এর প্রেক্ষিতে উচ্চতর আদালতে প্রতিকারের জন্য মামলা করতে বাধ্য হয়। এমনকি যাচাই বাছাই প্রক্রিয়া শুরুর প্রাক্কালে দেশের বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধাবৃন্দ যাচাই বাছাইয়ের গঠন প্রক্রিয়া ত্রুটিপূর্ণ এ মর্মে মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগে রীট পিটিশন দাখিল করেন। উচ্চতর আদালত মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়সহ জামুকা ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদান করেন এবং চার মাস যাচাই বাছাই কার্যক্রম বন্ধ রাখার নির্দেশ জারি করেন। কিন্তু দুঃখের বিষয় উচ্চতর আদালতের নির্দেশনা উপেক্ষা করে সারা দেশে যাচাই বাছাই প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকে। এমতাবস্থায় বিজ্ঞ আইনজীবীদের পরামর্শ মোতাবেক গত ২৮.০২.২০১৭ তারিখে মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তি প্রচারের মাধ্যমে সারাদেশে যাচাই বাছাই কার্যক্রম স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে। অথচ মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রণালয় যদি হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী যাচাই বাছাই কার্যক্রম স্থগিত করত তবে আজকে সমগ্র দেশব্যাপী যাচাই বাছাই নিয়ে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হতো না কমপক্ষে দেশের ৮০/৯০ টি উপজেলায় মুক্তিযোদ্ধাদের অনিয়মের বিরুদ্ধে হাইকোর্ট বিভাগে মামলা করা লাগত না। সমগ্র দেশব্যাপী যাচাই বাছাই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে সাতক্ষীরা জেলার তালা উপজেলায় যাচাই বাছাই ২১ জানুয়ারি থেকে শুরু হয়।
১. এ কার্যক্রম শুরুর প্রাক্কালে দেখা যায় যে, বাছাই কমিটির সভাপতি জনাব মীর মোস্তাক আহমেদ রবি, সংসদ সদস্য মহোদয় কে সভাপতি নিয়োগ করা হয়। যা যাচাই বাছাই নীতিমালা পরিপন্থী।
২. যাচাই বাছাই কমিটির সদস্য এস.এম. ফজলুল হক ও মোঃ আব্দুস সবুর এলাকার বিতর্কিত মুক্তিযোদ্ধা।
৩. যাচাই বাছাই নির্দেশিকার গুরুত্বপূর্ণ শর্তানুযায়ী ভারতীয় ও লাল তালিকাভুক্ত মুক্তিযোদ্ধাদের উপস্থিতিতে প্রকাশ্যে যাচাই বাছাই কার্যক্রম পরিচালনার নির্দেশনা উপেক্ষা করে ইউএনও মহোদয়ের অফিসে যাচাই বাছাই কার্যক্রম পরিচালিত হয়। এখানে কোনো ইউনিয়নের মুক্তিযোদ্ধা কর্মকর্তাদের উপস্থিত থাকার সুযোগ দেওয়া হয়নি।
৪. এছাড়া জামুকা থেকে প্রেরিত বিতর্কিত ৫২ জন অভিযুক্ত মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা প্রেরণ করা হলে তাদের বিষয়টি যথাযথভাবে সুরাহা করা হয়নি। তারা প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা কি না বা অমুক্তিযোদ্ধা তা নিরূপণ করার ব্যবস্থা হয়নি।
৫. এছাড়া তালিকাভুক্ত মুক্তিযোদ্ধাদের যাদের তালিকা প্রকাশ করা হয়েছিল তাদেরকেও কমিটিতে ডাকা হয়নি।
৬. সর্বোপরি যাচাই বাছাই অন্তে প্রত্যেক দিনের ফলাফল নোটিশ বোর্ডে টানানোর নির্দেশ উপেক্ষা করা হয়েছে। এমনকি উপজেলার সমস্ত ইউনিয়নে যাচাই বাছাই কার্যক্রম শেষ হলেও অদ্যাবধি যাচাই বাছাইয়ের ফলাফল নোটিশ বোর্ডে টানানো হয়নি।
উপরোক্ত অনিয়ম পরিলক্ষিত হওয়ার প্রাক্কালে সরাসরি যাচাই বাছাই কমিটির নিকট নীতিমালা অনুসরণ করে যাচাই বাছাই করার আবেদন করা হয়। কিন্তু কোনো ফল হয়নি। পরবর্তীতে ২৫.০১.২০১৭ ইং তারিখে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে বিষয়টি আবারও প্রশাসনের এবং মুক্তিযোদ্ধাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়। পরবর্তীতে ১৩.০২.২০১৭ ইং তারিখে পক্ষ থেকে মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের সচিব, জামুকা মহাপরিচালক, তালা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর দৃষ্টি আকর্ষণ করে যাচাই বাছাই কার্যক্রম বন্ধের আবেদন করা হয়। উপরোক্ত সব উদ্যোগ ব্যর্থতায় পর্যবেশিত হলে তালা উপজেলার মুক্তিযোদ্ধাদের সার্বিক স্বার্থের কথা বিবেচনা করে মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগে ২০.০২.২০১৭ ইং তারিখে এক রীট আবেদন দাখিল করা হয়। ফলে আদালত তালা উপজেলার যাচাই বাছাই কার্যক্রম ৩ মাস স্থগিত আদেশ জারি করেন এবং কমিটিকে কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না তার কারণ দর্শানোর আদেশ দেন। মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগ থেকে নির্দেশনা জারির পরও লক্ষ করা যাচ্ছে যে, তালা উপজেলার কতিপয় বিতর্কিত মুক্তিযোদ্ধা ও অনলাইনে দাবিকৃত কিছু ব্যক্তি তাদের ব্যক্তিস্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য মুক্তিযোদ্ধাদের বাড়ি বাড়ি যেয়ে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করে তালার মুক্তিযোদ্ধাদের ঐক্য নষ্ট করে যাচাই বাছাই কমিটিকে প্রভাবিত করে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা নিজেদের নামে প্রতিষ্ঠিত করতে অপচেষ্টায় লিপ্ত। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ দৈনিক পত্রদূত পত্রিকায় তাদের প্রতিবাদ সভার বিবরণ ছাপা হয়েছে। তাদের বক্তব্য আদৌ সত্য নয়। যারা কমিটির অনিয়মের বিরুদ্ধে কথা বলছেন তারা প্রত্যেকেই উপজেলার সর্ব পরিচিত প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা এবং তাদের পদক্ষেপ যাচাই বাছাইয়ের নির্দেশনা পরিপন্থী না। নির্দেশনাকে সঠিকভাবে তার লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য তাদের এই প্রচেষ্টা একটা শুভ উদ্যোগ। যার পরিণামে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান উঁচু করবে এবং অমুক্তিযোদ্ধা নামধারী স্বার্থান্বেষী মুক্তিযোদ্ধাদের মুখোশ জাতির কাছে উন্মোচন করবে। আমাদের মনে রাখতে হবে মুক্তিযোদ্ধা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান। রাষ্ট্র আমাদের সম্মানিত করেছেন। ’৭১ সালে মুক্তিযোদ্ধারা বর্তমান বিসর্জন দিতে ভবিষ্যতে জাতিকে পৃথিবীর মানচিত্রে প্রতিষ্টিত করার জন্য জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করেছেন। এটা তাদের ব্যক্তিগত অর্জন। জাতির জন্য আত্মত্যাগের সুমহান মহিমায় তারা চিরঞ্জিব। তাদের আত্মত্যাগের ভাগ কতিপয় অমুক্তিযোদ্ধারা আত্মসাৎ করতে পারে না। আর আমরা সে সুযোগ দিতে চাইনা। আমরা যারা দেশকে স্বাধীন করেছি সেই মুক্তিযোদ্ধাবৃন্দ এবং আমাদের সাহায্যকারী মুক্তিকামী জনগণ তাদের অবৈধ আবদার মানতে পারে না এবং ভবিষ্যতেও পারবে না। মুক্তিযোদ্ধাদের যাচাই বাছাইয়ের এই দূরুহ কাজ ভবিষ্যতে ঐক্যবদ্ধভাবে সংশ্লিষ্ট যাচাই বাছাই কমিটিকে সর্বান্তকভাবে সাহায্য করে এই অপচেষ্টা তৎপরতাকারীদের সজাগ থাকতে হবে। এবং তাদের বিরুদ্ধে আমাদের আইনি লড়াই এবং ময়দানের লড়াইতে সবাইকে শরিক হতে হবে।
তালার মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষে :
১. বীর মুক্তিযোদ্ধা মো: আলাউদ্দিন জোয়ার্দ্দার, ডেপুটি কমান্ডার, তালা উপজেলা
২. বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রশিদ, কমান্ডার, তালা উপজেলা
৩. বীর মুক্তিযোদ্ধা সন্তোষ কুমার দাশ, কমান্ডার, ইসলামকাটি ইউনিয়ন
৪. বীর মুক্তিযোদ্ধা মো: মতিয়ার রহমান, কমান্ডার, নগরঘাটা ইউনিয়ন
৫. বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু বক্কার শেখ শুকুর, কমান্ডার, খলিলনগর ইউনিয়ন
৬. বীর মুক্তিযোদ্ধা মো: এরফান আলী, কমান্ডার, কুমিরা ইউনিয়ন
৭. বীর মুক্তিযোদ্ধা মো: মকবুল হোসেন
৮. বীর মুক্তিযোদ্ধা সুজাত আলী শেখ
৯. বীর মুক্তিযোদ্ধা অরবিন্দ দাশ
১০. বীর মুক্তিযোদ্ধা মো: লুৎফর রহমান, প্রাক্তন কমান্ডার, তালা উপজেলা
১১. বীর মুক্তিযোদ্ধা অমল কৃষ্ণ ঘোষ, প্রাক্তন সদস্য, জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ
১২. বীর মুক্তিযোদ্ধা মো: আব্দুস সোবহান, যুদ্ধকালীন কমান্ডার
১৩. সুভাষ চন্দ্র সরকার, যুদ্ধকালীন কমান্ডার
পূর্ববর্তী পোস্ট