আবু ছালেক ; সকলকে কাঁদিয়ে চাকরি থেকে অবসর নিলেন শিক্ষক হুমায়ুন কবির, সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ফিংড়ি ইউনিয়নের গোবিন্দপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন হুমায়ুন কবির। কিন্তু গত ৪/৬/২০১৯ তারিখে চাকরি শেষ হওয়াই অবসর নিতে হল হুমায়ুন কবির কে। হুমায়ুন কবির শরাপপুর গ্রামের মৃত আছির উদ্দিন সরদার ও মৃত আমেনা খাতুন এর পুত্র, চার ভাই দুই বোনের মধ্যে তৃতীয় হুমায়ুন কবির, ১৯৬০ সালের জুন মাসের ৪ তারিখে জন্মগ্রহণ করেন। হুমায়ুন কবির ১৯৯২ সালের ১২ এপ্রিল শিক্ষক হিসাবে যোগদান করেন গোবিন্দপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। সহকারী শিক্ষক হুমায়ুন কবির দীর্ঘদিন অত্যন্ত সুনামের সহিত চাকরি করে আসছিল। কিন্তু চাকরির মেয়াদ পুর্ন হওয়াই ২০১৯ সালের জুন মাসে চাকরি থেকে অবসর নিতে হল সকলের শ্রদ্ধেয় শিক্ষক হুমায়ুন কবির কে, বিধান চন্দ্র সরকার ও কার্তিক চন্দ্র সরকারকে সাথে নিয়ে দীর্ঘদিন শিক্ষকতার পাশাপাশি বিদ্যালয়ের সার্বিক উন্নয়ন, লেখাপড়ার মান উন্নয়ন, বৃক্ষরোপণ, সহ সার্বিক উন্নয়নে ব্যাপক সহযোগিতা করেছেন হুমায়ুন কবির। অবসর নেওয়ার পূর্ব মুহূর্ত গোবিন্দপুর জামে মসজিদের জন্য ব্যাপক ভূমিকা রাখছেন হুমায়ুন কবির। শিক্ষকতার পাশাপাশি তিনি ছাত্র-ছাত্রীদের ব্যাপক ভালোবেসে অত্যন্ত সুনামের সহিত চাকরি করেছেন, হুমায়ুন কবির অবসর নেওয়ার পূর্ব মুহূর্তে বর্তমান শিক্ষক হিসাবে গোবিন্দপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কর্মরত আছেন প্রধান শিক্ষক হিসাবে বিধান চন্দ্র সরকার, সহকারী শিক্ষক হিসেবে কার্তিক চন্দ্র সরকার, লক্ষ্মী রানী ঘোষ, কনা রানি শানা,এলাকার সকল জনসাধারনের প্রিয় শিক্ষক হিসাবে কর্মরত ছিলেন হুমায়ুন কবির, হুমায়ুন কবিরের বড় ভাই আজহারুল ইসলাম শরাপপুর মাদ্রাসার সহকারি শিক্ষক,মেঝ ভাই ফারুক আহম্মেদ শরাপপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক হিসাবে দায়িত্বে থাকার পর সকলে অবসর গ্রহন করেছে। এছাড়া হুমায়ুন কবিরের একমাত্র পুত্র আরেফিন শরাফি শান্ত ব্যাংদহা কমিউনিটি ক্লিনিকের সি এইচ সি পি হিসাবে কর্মরত আছেন, প্রাথমিক শিক্ষা হলো শিক্ষার মূল ভিত্তি। এ সময়টা খুবই স্পর্শকাতর। তাই এ সময়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যথেষ্ট আন্তরিক ও সতর্কতামূলক আচরণ করতে হয়। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকগণের অবশ্যই শিশু মনোবিজ্ঞানসহ শিশু-শিক্ষণের বিভিন্ন পদ্ধতি সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা থাকা উচিত। আর সবচেয়ে বেশি জরুরি হলো একজন শিক্ষকের পেশাগত আচরণ কী রকম হবে তা জানা। কারণ একজন শিক্ষকের সুদৃষ্টি, ভালো আচরণ, সঠিক দিক-নির্দেশনা, ইতিবাচক মনোভাব যেমন একজন শিক্ষার্থীকে উন্নতির চরম শিখরে পৌঁছে দিতে পারে, তেমনি ছোটবেলায় একজন শিক্ষকের অবহেলা, ভুল ও নেতিবাচক আচরণ একজন শিক্ষার্থীর জীবনকেও অন্ধকারের চোরাগলিতে নিয়ে যেতে পারে। তাই প্রাথমিক স্তরে শিক্ষকের পেশাগত আচরণ কেমন হওয়া উচিত এ সম্পর্কে শিক্ষকের স্পষ্ট ধারণা থাকা খুবই সঙ্গত।যা ছিল হুমায়ুন কবিরের মধ্যে, শিক্ষক সমাজ একটি দেশের সামগ্রিক অবকাঠামো গঠনের হাতিয়ার। সুশিক্ষা একটি জাতিকে উন্নতির চরম শিখরে পৌঁছে দিতে পারে। সমাজে আলোকিত মানুষ গঠনে একজন শিক্ষকের অবদান অনস্বীকার্য আর আলোকিত মানুষ তৈরির মাধ্যমেই কেবল গণতন্ত্র, মানবাধিকার, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা এবং দুর্নীতিমুক্ত দেশ গঠন সম্ভব। যেহেতু শিক্ষকরা দেশের ভবিষ্যৎ নাগরিক তৈরি করেন, কাজেই একজন শিক্ষকই তৈরি করতে পারেন একজন ভালো প্রশাসক, বিচারক, ডাক্তার, প্রকৌশলী, রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক, সাহিত্যিক তথা দেশ বা জাতি গঠনের আগামী প্রজন্ম। শিক্ষা একটি জাতির উন্নয়নের প্রধান মাধ্যম। যে জাতি যত বেশি শিক্ষিত সে জাতি তত বেশি উন্নত। শিশুর শিক্ষা শুরু হয় শৈশবকাল থেকে। বিভিন্ন কারণে শিশুর মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হতে পারে। সুষ্ঠু পরিবেশে শিশু বেড়ে উঠলে শিশুর মানসিক বিকাশও সুস্থ ও সুন্দর হয়। সুস্থ ও সুন্দরভাবে বেড়ে ওঠা শিশু সুন্দর সমাজ তথা দেশ গড়তে সহায়তা করে। একটি শিশু যখন পাঁচ বছর বয়সে পদার্পণ করে তখন সে এলাকার অন্যান্য শিশুদের মতো বিদ্যালয়ে গমনের জন্য উৎসাহী হয়ে ওঠে। আর বিদ্যালয়ের পরিবেশ ইতিবাচক হলে শিশু সেখানে নিজেকে নিরাপদ মনে করে। অন্যদিকে নেতিবাচক পরিবেশে তার উৎসাহে ভাটা পড়ে। শিশু যখন তার নিজ বাড়ির নিরাপদ পরিবেশ ছেড়ে বিদ্যালয়ে গমন করে তখন বিদ্যালয়ের শিক্ষকগণের কাছ থেকে শিক্ষার্থী এবং শিশুর পিতামাতা কিছু নির্ধারিত আচরণ প্রত্যাশা করে, যাতে শিশু নির্ভয়ে বিদ্যালয়ের শিখন-শেখানো কার্যাবলীতে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করতে পারে। হুমায়ুন কবির ছিল তার অন্যতম, পাশাপাশি নিজ বিদ্যালয় ও অন্য বিদ্যালয়ের সহকর্মী এবং সমাজের লোকজনের সঙ্গেও শিক্ষককে সুসম্পর্ক বজায় রেখে চলতে হয়। একজন শিক্ষকের পেশাগত আচরণ, ব্যক্তিগত আচরণ এবং পেশাগত যোগ্যতা কেমন হবে তা নির্ভর করে তার সততা এবং পেশার প্রতি আন্তরিকতা, শ্রদ্ধাবোধ ও দায়িত্ববোধের ওপর। শিক্ষকগণের পেশাগত আচরণকে শিক্ষার্থী, অভিভাবক, সমাজ এবং সহকর্মীদের সঙ্গে তাদের সম্পর্কের ভিত্তিতে বিভিন্নভাবে শ্রেণীভুক্ত করা। প্রাথমিক স্তরেন শিক্ষকের ওপর শিশুরা যেন এমনভাবে নির্ভর করতে পারে, যেমনভাবে সে নির্ভর করে তার বাবা-মা, পরিবার-পরিজন বা অন্যান্য নিকটাত্মীয়ের ওপর। আদর্শ ও নিবেদিতপ্রাণ শিক্ষকের জ্ঞান ও গুণে মুগ্ধ শিক্ষার্থী শিক্ষককে দেবতাতুল্য মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করে। স্যার মোজাফফর আহমেদের একটি লেখা থেকে দুটি লাইন তুলে ধরে এ লেখার সমাপ্তি টানছি- ‘শিক্ষকতা একটা ধর্ম, একে জীবনে ধারণ করতে হয়, হুমায়ুন কবির সততার সাথে শিক্ষকতা করেছেন,তার এ সফলতা , তার আদর্শ ধরে রাখবে সকলেই এমন প্রত্যাসা ফিংড়ীর সচেতন মহলের।