রাজনীতির খবর: আওয়ামী লীগের জাতীয় কাউন্সিল-পরবর্তী নবনির্বাচিত কমিটির সভাপতিমণ্ডলীর প্রথম সভা আজ মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর)। দলীয় সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারি বাসভবন গণভবনে সন্ধ্যা ছয়টায় এ সভা অনুষ্ঠিত হবে। কাউন্সিলের পর আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হলেও পূর্ণাঙ্গ কমিটির ঘোষণা আসেনি। আজ সভাপতিমণ্ডলীর সভার পর পূর্ণাঙ্গ সেই ঘোষণা আসতে পারে। কাজেই কেন্দ্রীয় কমিটিতে পদপ্রত্যাশী নেতারাও অপেক্ষায় আছেন আজ অনুষ্ঠেয় সভার জন্য।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের গত শনিবারই সাংবাদিকদের বলেছিলেন, আজ মঙ্গলবার দলের সভাপতিমণ্ডলীর সভা আছে। সেই সভার পর সেদিনই পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হবে। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটি ৮১ সদস্যবিশিষ্ট। এর মধ্যে গত শনিবার কাউন্সিল অধিবেশনে দলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ ৪২ জনের নাম ঘোষণা হয়েছে।
৯টি সম্পাদকীয় ও ২টি উপসম্পাদকীয় এবং ২৮ সদস্যসহ মোট ৩৯টি পদ এখনো খালি। ৯টি সম্পাদকীয় পদের মধ্যে সাংগঠনিক সম্পাদকের ৩টি পদ শূন্য রয়েছে। এখানে কোন তিন নেতা আসছেন, এ নিয়ে দলটির কেন্দ্র থেকে শুরু করে তৃণমূল পর্যন্ত অনেক নেতাকর্মীই কৌতূহলী।
জানা গেছে, সদ্য বিদায়ী কমিটির তিন সাংগঠনিক সম্পাদক একেএম এনামুল হক শামীম, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী ও মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলকে ফের বহাল রাখার বিষয়ে আলোচনা চলছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সাংগঠনিক পদে ঠাঁই না হলে কেন্দ্রীয় সদস্য পদে তাদের রাখা হতে পারে। অন্যদিকে খালি থাকা উপদপ্তর সম্পাদক ও উপপ্রচার সম্পাদক পদে গত কেন্দ্রীয় কমিটির দুসদস্যকে আনা হতে পারে। আর কোষাধ্যক্ষ, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক, অর্থ ও পরিকল্পনা সম্পাদক এবং ধর্মবিষয়ক সম্পাদক পদগুলোর মধ্যে অন্তত দুটি পদে নতুন মুখ আসতে পারে।
মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন্নেছা ইন্দিরাকে সদস্য ও ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ আবদুল্লাকে উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য পদে দেখা যেতে পারে। বাদ যেতে পারেন বিগত কমিটির অনেকেই।
ইতিপূর্বে ঘোষিত আংশিক কমিটিতে নেতৃত্বে উল্লেখ করার মতো তেমন কোনো পরিবর্তন আসেনি। কিন্তু কেন্দ্রীয় কমিটির ২৮টি সদস্য পদে বড় ধরনের রদবদলের সম্ভাবনা রয়েছে বলে সূত্রের খবর। সদস্য পদে নব্বইয়ে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের নেতা, এক-এগারো সরকারের সময় দলের ক্রান্তিলগ্নে ভূমিকা পালনকারী ছাত্রনেতা, দীর্ঘদিন ধরে পদবঞ্চিত ত্যাগী নেতা, শহীদ পরিবারের সন্তান ও নারী নেতৃত্বকে কমিটিতে যুক্ত করা হতে পারে।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আবদুর রহমান বলেন, সংগঠনকে কীভাবে তৃণমূল থেকে নতুন উদ্যমে সাজিয়ে-গুছিয়ে আনা যায়, সভায় এসব বিষয়ে আলোচনা হবে। সেই সঙ্গে কেন্দ্রীয় সদস্য পদে কারা আসছেন, এ নিয়েও সিদ্ধান্ত হবে। অবশ্যই যোগ্য নেতাদের কেন্দ্রীয় কমিটিতে নিয়ে আসা হবে বলে আশা করছি।
এদিকে আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সদস্য পদে যাদের নাম আলোচনায় উঠে এসেছে তারা হলেন, স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে সর্বদলীয় ছাত্রঐক্যের নেতা এবং এক-এগারো সময়কালে কারাবন্দি নেতা শফী আহমেদ, সুভাস সিংহ রায়, অ্যাডভোকেট বলরাম পোদ্দার, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, সংসদ সদস্য মাশরাফি বিন মোর্ত্তজা, সাবেক সাধারণ সম্পাদক প্রয়াত সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের ছোট বোন সৈয়দা জাকিয়া নূর, ছাত্রলীগের সাবেক নেতা ইসহাক আলী খান পান্না, অজয় কর খোকন, মাইনুদ্দীন হাসান, বাহাদুর বেপারি, নজরুল ইসলাম বাবু, সাইফুজ্জামান শেখর, মাহমুদ হাসান রিপন, মাহফুজুল হায়দার চৌধুরী রোটন, মহিউদ্দিন হেলাল, সাজ্জাদ সাকিব বাদশা, নাসিম আল মমিন রুপক, অসীত বরণ বিশ্বাস, আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক প্রয়াত আবদুর রাজ্জাকের ছেলে নাঈম রাজ্জাক, মাজহারুল ইসলাম মানিক, এইচ এম বদিউজ্জামান সোহাগ, জয়দেব নন্দী, আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য প্রয়াত আবদুস সামাদ আজাদের ছেলে আজিজুস সামাদ ডন, তারেক সামস হিমু, সাজ্জাত হোসেন, বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু, তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট জুনাইদ আহমেদ পলক, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল, জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিম, সংসদ সদস্য সাবেক উপমন্ত্রী আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব, ছাত্রলীগের সাবেক কার্যকরী সভাপতি শাহে আলম, যুবলীগের সদ্য সাবেক সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশীদ, যুব মহিলা লীগের সভাপতি নাজমা আক্তার, শহীদ বুদ্ধিজীবী ডা. আলীম চৌধুরীর মেয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক নুজহাত চৌধুরী, শহীদ আলতাফ মাহমুদের মেয়ে শাওন মাহমুদ, শহীদ বুদ্ধিজীবী শহীদুল্লাহ কায়সারের মেয়ে শমী কায়সার, শহীদ মেজর খালেদের মেয়ে মাহজাবিন খালেদ প্রমুখ।
গত ২০ ও ২১ ডিসেম্বর দুদিনব্যাপী আওয়ামী লীগের ২১তম জাতীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। রেওয়াজ ও গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কাউন্সিলের পর প্রেসিডিয়াম সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করে আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্যপদে নেতা মনোনীত করার বিধান আছে। গঠনতন্ত্রের ১৯ ধারায় এ বিষয়ে বলা হয়েছে- ‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি গঠনতন্ত্রের ১৮ ধারায় বর্ণিত কার্যনির্বাহী সংসদের ২৮ জন সদস্য সভাপতিমণ্ডলীর সহিত আলোচনাক্রমে মনোনয়ন দান করিবেন এবং উক্ত মনোনয়ন কাউন্সিল অধিবেশন সম্পন্ন হওয়ার ২১ দিনের মধ্যে ঘোষিত হইবে।’