নিজস্ব প্রতিনিধি : জমে উঠেছে সাতক্ষীরা জেলা ক্রীড়া সংস্থার নির্বাচনী লড়াই। একদিকে লড়ছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা বদরুল ইসলাম খানের নেতৃত্বে স্বাধীনতা ক্লাব ঐক্য পরিষদ। অন্যদিকে সাবেক ছাত্রদল নেতা একেএম আনিসুর রহমানের নেতৃত্বে জেলা ক্লাব ঐক্য পরিষদ। নির্বাচন নিয়ে চলছে নানা জল্পনা-কল্পনা। ২২ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিতব্য জেলা ক্রীড়া সংস্থার চার বছর মেয়াদী এই নির্বাচনের দুই প্যানেলের প্রার্থীরাই জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী। দু’দলের প্রার্থীরা দলবদ্ধ হয়েই ভোট প্রার্থনার জন্য ছুটে বেড়াচ্ছেন জেলার এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে। ৪ বছর মেয়াদী কমিটির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ২২ সেপ্টেম্বর। মোট ভোটার সংখ্যা ১শ’৩৭ জন। এর মধ্যে জেলা প্রশাসনসহ বিভিন্ন সরকারি দফতরে প্রতিনিধি ভোট রয়েছে ৯টি। এবারের নির্বাচনে নতুন চমক বীর মুক্তিযোদ্ধার নেতৃত্বে ছাত্রদল নেতার বিরুদ্ধে স্বাধীনতা ক্লাব ঐক্য পরিষদের লড়াই। এর নেতৃত্ব দিচ্ছেন বীরমুক্তিযোদ্ধা মোঃ বদরুল ইসলাম বদু। ১৯৭১ সালের ৭ ডিসেম্বর সাতক্ষীরা মুক্ত দিবসে যারা সাতক্ষীরায় জাতীয় পতাকা তুলেছিলেন তিনি তাদের একজন। তার নেতৃত্বে স্বাধীনতা ক্লাব ঐক্য পরিষদে রয়েছেন বেশিরভাগ প্রবীণ ক্রীড়াপ্রেমী। বয়স ও অভিজ্ঞতার দিক দিয়ে স্বাধীনতা ক্লাব ঐক্য পরিষদের প্রার্থীরা জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী। অপরদিকে সাবেক ছাত্রদল নেতা একেএম আনিসুর রহমানের নেতৃত্বে রয়েছে জেলা ক্লাব ঐক্য পরিষদ। তিনি সাতক্ষীরা সরকারী কলেজ ছাত্রদলের সাবেক নেতা এবং জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম-সম্পাদক ছিলেন। জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সম্মেলনে সভাপতি পদে অংশ নিয়ে তিনি আহসান হাবিব টুটুলের কাছে পরাজিত হন। পরবর্তীতে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে সরকার গঠিত হলে তাকে আর বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় দেখা যায়নি। জেলা ক্রীড়া সংস্থার নির্বাচন এবার এসব কারণে কৌতুহলের সৃষ্টি করেছে।
নির্বাচন কমিশনার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ তানজিন্নুর রহমানের ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী কার্যনির্বাহী পরিষদের ৪ সহসভাপতি, একজন সাধারণ সম্পাদক, একজন অতিরিক্ত সাধারণ সম্পাদক, দুই যুগ্ম সম্পাদক, এক কোষাধ্যক্ষ এবং ১৮ নির্বাহী সদস্য নির্বাচিত হবেন। ২টি সদস্য পদ উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদকের জন্য সংরক্ষিত ও ২টি সদস্য পদ মহিলা সদস্যদের জন্য সংরক্ষিত রয়েছে। স্বাধীনতা ক্লাব ঐক্য পরিষদ প্যানেলে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৪ সহসভাপতি পদে মোঃ আশরাফুজ্জামান আশু, মোঃ মুজিবর রহমান, মেহেদী হাসান, আব্দুল মোমেন খান চৌধুরী সান্টু, সাধারণ সম্পাদক পদে বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ বদরুল ইসলাম বদু, অতিরিক্ত সাধারণ সম্পাদক মাহমুদ হাসান মুক্তি, যুগ্ম সম্পাদক শেখ আব্দুল কাদের ও শেখ মারুফুল হক, কোষাধ্যক্ষ পদে মোঃ শাহ আলম হাসান শানু ও ১৮ নির্বাহী সদস্য পদে কবীর উদ্দীন আহমেদ, আহম্মদ আলী সরদার, আ. হ. ম. আখতারুজ্জামান মুকুল, কাজী সফিউল আযম, শেখ রফিকুর রহমান লাল্টু খন্দকার বদরুল আলম, হাফিজুর রহমান খান বিটু, ইমাদুল হক খান, ইকবাল কবির খান বাপ্পি, জিএম সাইফুল ইসলাম বাপ্পি, এসএম আব্দুল গফ্ফার, মোঃ আলতাফ হোসেন, মোঃ ময়নুর আরেফিন ও কবিরুজ্জামান রুবেল। উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদকের জন্য সংরক্ষিত পদে স. ম. সেলিম রেজা ও মীর জাকির হোসেন। মহিলা সদস্যদের সংরক্ষিত পদে মিসেস ফারহানা দিবা খান সাথী ও শিমুন শামস্ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।
অধিকাংশ তরুণ ও নতুন প্রার্থীদের নিয়ে সাতক্ষীরা জেলা ক্লাব ঐক্য পরিষদ প্যানেল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৪ সহসভাপতি পদে মোঃ মিজানুর রহমান চৌধুরী, ফিরোজ আহমেদ, শেখ তহিদুর রহমান ডাবলু, শেখ আশরাফ আলী, সাধারণ সম্পাদক পদে বর্তমান সাধারণ সম্পাদক একেএম আনিসুর রহমান, অতিরিক্ত সাধারণ সম্পাদক কাজী কামরুজ্জামান, যুগ্ম সম্পাদক পদে মোঃ সাইদুর রহমান শাহীন ও মীর তাজুল ইসলাম রিপন, কোষাধ্যক্ষ আল-আমিন কবির চৌধুরী ডেভিড এবং ১৮ নির্বাহী সদস্য পদে মোঃ আব্দুল মান্নান, মোঃ ইদ্রিস আলী বাবু, মোঃ হাবিবুর রহমান, মোঃ রুহুল আমীন, খন্দকার আরিফ হাসান প্রিন্স, সৈয়দ জয়নাল আবেদীন জসি, মোঃ লুৎফর রহমান সৈকত, মির্জা মনিরুজ্জামান কাকন, মোঃ রাশিদুজ্জামান সুমন, কাজী আক্তার হোসেন, শেখ হাবিবুর রহিম রিন্টু, শেখ তানজিম কালাম তমাল, শেখ মনিরুজ্জামান ও শেখ হেদায়েতুল ইসলাম। সংরক্ষিত পদে জহুরুল হায়দার ও মোঃ জিয়াউল-বিন-সেলিম যাদু প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
অপরদিকে, নির্বাচনের পূর্বমূহুর্তে জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে স্বজনপ্রীতি, অনিয়ম, কর্মকর্তাদের সাথে সমন্বয় না করাসহ বিভিন্ন অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এসব অভিযোগ করেছেন একাধিক কর্মকর্তা ও খেলোয়াড়। তারা জানান, করোনাকালীন সময় সরকার ও সাজেক্রীস এর ফান্ড থেকে বর্তমান ও সাবেক দুস্থ খেলোয়াড়দের মাঝে সহযোগিতা করার জন্য বরাদ্দ দেয়া হয়। বর্তমান ও সাবেক দুস্থ খেলোয়াড়দের সহযোগিতা করতে সাজেক্রীসের সাধারণ সম্পাদক কাউকে কিছু না জানিয়ে তিনি তার নিজস্ব স্বচ্ছল মনগড়া ব্যক্তিদের এ সহযোগিতা করেছেন। এ অনিয়মে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ হয়েছে বলে মনে করেন একাধিক কর্মকর্তা ও খেলোয়াড়রা। দুস্থ খেলোয়াড়দের করোনাকালীন সময় সহযোগিতার নামে তিনি অধিকাংশই স্বচ্ছল খেলোয়াড়দের সহযোগিতা করেছেন। যারা ব্যবসায়ী, পিতা-মাতা চাকরিজীবী এমন খেলোয়াড়দেরই তিনি সহযোগিতা করেছেন।
আর প্রকৃত দুস্থ খেলোয়াড়রা এ সহযোগিতা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। মোট ১৬৭ জনের মধ্যে এ সহযোগিতা করা হয়। এরমধ্যে সহযোগিতা দেয়া হয়েছে সাতক্ষীরা সিটি কলেজ অধ্যক্ষের পুত্র ও পৌর কাউন্সিলর পুত্রকে। ইয়াসিন আরাফাতের পিতা-মাতা দু’জনেই কলেজ শিক্ষক হওয়া সত্ত্বেও তাকেও করোনা সহযোগিতা করা হয়েছে। করোনা সহযোগিতা করা হয়েছে এক সেনা কর্মকর্তার মেয়ে মুমতা হেনা হাসনাতকে। তার বাবা বর্তমানে মিশনে আছেন।
এ রকম অধিকাংশ স্বচ্ছল খেলোয়াড়দের সহযোগিতা করে সাজেক্রীসের সাধারণ সম্পাদক অনিয়মের আশ্রয় নিয়ে অধিকাংশ প্রকৃত দুস্থ খেলোয়াড়দের বঞ্চিত করেছেন। এমনকি সাজেক্রীসের অফিসে কর্মরত দুস্থ কর্মচারীদেরও সহযোগিতা করা হয়নি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে সাজেক্রীসের একাধিক কর্মকর্তা ও খেলোয়াড় জানান, জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ ৫০ জন দুস্থ খেলোয়াড়দের তালিকা চান জেলা ক্রীড়া সংস্থার কাছে।
এব্যাপারে জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক কেএম আনিসুর রহমানের সাথে যোগযোগের চেষ্টা করলেও তা সম্ভব হয়নি।
২০.০৯.২০২০