বিনোদন ডেস্ক: টিভি-চলচ্চিত্রের নায়ক-নায়িকা হলে কী হবে! অনেকে কিন্তু শিক্ষাজীবনেও নায়ক। তবে ঢাকাই চলচ্চিত্রে উচ্চশিক্ষিত তারকাদের সংখ্যা হাতেগোনা। স্বল্পদিনের ব্যবধানে খ্যাতির চূড়ায় ওঠায় নিয়মিত পড়াশোনা থমকে রয়েছে অনেকের। তাই অনেকেই নিজেদের শিক্ষা নিয়ে পারতপক্ষে মুখ খোলেন না। তারকাদের শিক্ষাজীবন নিয়ে রয়েছে নানা মুখোরচক মিথও। দেশের উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র ও টিভি তারকাদের ‘কার বিদ্যা কতদূর’? ঈদ বিশেষ ফিচারে সেই প্রশ্নের খোঁজ করা হয়েছে-
অগ্রজরা এগিয়ে
মঞ্চ ও নাটক মাধ্যমের শিল্পীদের বেশিরভাগই উচ্চশিক্ষিত। একই সঙ্গে সিনেমার সিনিয়র তারকাদের অনেকেই উচ্চশিক্ষায় সার্টিফিকেটধারী। ঢাকার ছবির শুরুটাও অনেক বর্ণাঢ্য।
জানা গেছে, চিত্রনায়ক আলমগীর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে পড়েছেন। পরবর্তীতে পাকিস্তানের করাচিতে তিনি পড়াশোনা করেছেন। ইলিয়াস কাঞ্চন স্নাতকসম্পন্ন। অভিনেতা ও পরিচালক সোহেল রানা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। ছাত্র রাজনীতিতেও সক্রিয় ছিলেন তিনি। প্রয়াত খ্যাতিমান অভিনেতা হুমায়ুন ফরীদি ছিলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। জনপ্রিয় অভিনেত্রী অপি করিম বুয়েট থেকে স্থাপত্যবিদ্যায় স্নাতকোত্তর শেষ করেছেন। জাকিয়া বারী মম নাট্যকলায় স্নাতক শেষ করে উচ্চতর পড়াশোনা করছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে। সুমাইয়া শিমু পিএইচডি করছেন।
খ্যাতিমান খল অভিনেতা মিশা সওদাগর ব্যবস্থাপনায় পড়াশোনা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। একই প্রতিষ্ঠানের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতায় পড়েছেন চিত্রনায়ক ফেরদৌস। সিনিয়র অভিনেত্রী ওয়াহিদা মল্লিক জলি এই প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা করছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করেছেন বলে দাবি করেন চিত্রনায়ক জায়েদ খান। ইডেন মহিলা কলেজ থেকে বাংলায় অনার্স-মাস্টার্স করেছেন অভিনেত্রী রুনা খান। ফিল্ম স্টাডিজের ওপর একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক শেষ করেছেন স্বাগতা। চিত্রনায়ক রিয়াজের কলেজ জীবন শুরু হয় যশোর ক্যান্টনমেন্ট কলেজে এইচএসসিতে ভর্তির মাধ্যমে। সেখান থেকে এইচএসসি পাস করে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীতে ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে উত্তীর্ণ হয়ে বাংলাদেশ এয়ার ফোর্স একাডেমিতে ১৯৯১ সালের জুন পর্যন্ত অধ্যয়ন ও প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বিএসসি সম্পূর্ণ করেন।
চিত্রনায়িকা ববি হক আদমজী ক্যান্টনমেন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করে ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি থেকে বিবিএ শেষ করেছেন। নায়িকা রত্না জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স করেছেন। এছাড়াও রত্না সাফল্যের সঙ্গে এলএলবি পাস করেছেন সম্প্রতি। তিনি ঢাকা ক্যাপিটাল ল’ কলেজ থেকে ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের ছাত্রী হিসেবে এলএলবি পরীক্ষা দিয়েছিলেন। এই কলেজের পাসকৃত শিক্ষার্থীদের মধ্যে রত্না মেধা তালিকায় তৃতীয় স্থান অর্জন করেছেন।
অভিনেত্রী জ্যোতিকা জ্যোতি ময়মনসিংহ আনন্দমোহন কলেজ থেকে ইংরেজিতে অনার্স করেছেন। চিত্রনায়িকা আলিশা প্রধান ইংলিশ মিডিয়াম প্রতিষ্ঠান থেকে এ লেভেল সম্পন্ন করে অর্থনীতি পড়ছেন ইডিক্সেল-এ। আর নায়িকা আঁচল স্ট্যামফোর্ড থেকে বিবিএ সম্পন্ন করেছেন। অর্চিতা স্পর্শিয়া ইউল্যাব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিবিএ শেষ করেছেন। মডেল-অভিনেত্রী পিয়া লন্ডনকেন্দ্রিক একটি কলেজে আইন বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করছেন এখনও।
যারা ক্লাসে নিয়মিত নন
হালের তরুণ প্রজন্মের তারকাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, অনেকে শিক্ষাজীবন ধারাবাহিক রাখলেও নিয়মিত ক্লাস করতে পারছেন না। চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহি একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছেন। একই অবস্থা চিত্রনায়িকা নুসরাত ফারিয়ারও। তিনি এআইইউবিতে বিবিএ’তে অষ্টম সেমিস্টারের ছাত্রী। সিদ্ধেশ্বরী গার্লস কলেজে পড়াশোনা করেছেন পিয়া বিপাশা। এখন একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক করছেন।
নতুনদের মধ্যে সাবিলা নূর নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী। অভিনয়শিল্পী জোভানও একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক করছেন। মডেল বিথী রানী সরকার ফ্যাশন ডিজাইনিংয়ে (শান্তা মারিয়াম-উত্তরা ক্যাম্পাস), মৌসুমী হামিদ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে খুলনার একটি কলেজে অনার্সে পড়ছেন বলে জানিয়েছেন। তবে তিনি কাজের ব্যস্ততার কারণে নিয়মিত ক্লাসে যেতে পারেন না।
জানা যায়, বিদ্যা সিনহা মিম জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হলেও বেশি দিন ক্লাস করতে পারেননি। নতুন করে ভর্তি হয়েছেন একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখানকার পড়াশোনাও শেষ করতে পারেননি এ লাক্স সুন্দরী। নিয়মিত ক্লাস না করেও শিক্ষা জীবন চালিয়ে যাচ্ছেন চিত্রনায়ক বাপ্পী চৌধুরী। তিনি জানান, ক্লাসে না গেলেও নিয়মিত পরীক্ষাগুলোয় অংশ নেন। পাশাপাশি শিডিউল না থাকলে ক্লাস করেন তিনি। তমা মির্জা আইনে পড়ছেন মানারাত ইন্টারন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয়ে। ইতোমধ্যে পরীক্ষা দিয়েছেন বলেও জানান তিনি।
বড় তারকাদের শিক্ষাজীবন, অন্ধকারে তথ্য
চলচ্চিত্র অঙ্গনের অনেকে বলছেন, বড় নায়ক নায়িকারা তাদের শিক্ষাজীবন নিয়ে কথা বলতে স্বাচ্ছন্দ বোধ করেন না। ব্যস্ততা ও খ্যাতির খাতিরেই পড়াশোনা থেকে ক্রমশ দূরে সরে যান তারা।
চিত্রনায়িকা মৌসুমীর শিক্ষাজীবন নিয়ে কোনও তথ্য জানা যায়নি। বাংলাদেশের শিশুদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় জনমত ও সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে সম্প্রতি তিনি ও বাংলাদেশের খ্যাতনামা জাদুকর জুয়েল আইচ ইউনিসেফ অ্যাডভোকেটের দায়িত্ব পালন করেছেন।
জানা যায়নি এক সময়ের স্বনামখ্যাত চলচ্চিত্রাভিনেত্রী শাবনুরের শিক্ষা জীবনের কোনও খবরও। তবে তিনি অস্ট্রেলিয়ায় চলচ্চিত্র বিষয়ক পড়াশোনা করেছেন বলে খবর মিলেছে।
এই সময়ে বাংলা সিনেমার সবচেয়ে বড় তারকা চিত্রনায়ক শাকিব খান। অনেক কাছের মানুষও জানেন না তার শিক্ষা জীবন সম্পর্কে। তার এক ছবির প্রযোজক বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, ‘শাকিব খান কাছের মানুষদের বলতে শুনেছেন, তিনি উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন এবং প্রায়শই তাকে বলতে শোনা যায়, তিনি প্রকৌশলী হতে চেয়েছিলেন। কয়েকটি সাক্ষাৎকারে অবশ্য তিনি নিজেকে স্নাতক পাসও দাবি করেছিলেন। ইদানীং বিষয়টি তিনি সচেতনভাবে এড়িয়ে যান। তবে একাধিক ঘনিষ্ট ব্যক্তির মতে শাকিব খান এইচএসসি পাস করেছেন।
নায়িকা অপু বিশ্বাস পড়েছেন এসওএস হারম্যান মেইনার স্কুলে। এরপর আলোর মেলা, ক্রিসেন্ট হাই স্কুল এবং সব শেষে ইয়াকুবিয়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছিলেন। তবে এরপর তার শিক্ষা জীবনের পরিস্থিতি কী, তা নিয়ে রয়েছে রহস্য। অপু বিশ্বাস নিজে কখনও কাউকে এ বিষয়ে বলেননি।
এছাড়া নায়িকা সিমলা শৈলকূপা গার্লস স্কুল থেকে এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে তিনি শৈলকূপা সরকারী কলেজে উচ্চমাধ্যমিকে ভর্তি হন। কিন্তু দ্বিতীয় বর্ষে পড়ার সময়ই চলচ্চিত্রে অভিনয় শুরু করেন বলে পড়াশোনার অকাল মৃত্যু ঘটে।