ডেস্ক রিপোর্ট : সাতক্ষীরার ধুলিহরে মুক্তিযোদ্ধা চেয়ারম্যান স.ম. আব্দুর রউফ কমপ্লেক্স ও এতিমখানার একাডেমিক ভবন নির্মাণে মন্ত্রণালয়ের চিঠি জালিয়াতি করা হয়েছে। সম্প্রতি এ তথ্য প্রকাশ পাওয়ার পর জেলা পরিষদের ৩৫ লাখ টাকা কিভাবে অনিয়ম ও দূর্ণীতির মাধ্যমে লুটপাট হয়েছে তার খোলনলচে বেরিয়ে এসেছে।
২০১৫ সালের ১২ জুলাই সাতক্ষীরা জেলা পরিষদের এক সমন্বয় কমিটির সভায় ধুলিহরে মুক্তিযোদ্ধা চেয়ারম্যান স.ম. আব্দুর রউফ কমপ্লেক্স ও এতিমখানার একাডেমিক ভবন নির্মাণের জন্য ৩৫ লাখ টাকা খরচ অনুমোদন চেয়ে পরদিন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়।
ওই বছরের ২৮ জুলাই স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সহকারি সচিব মোঃ জাকির হোসেন স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে উক্ত এতিমখানার প্রাক্কলন কত? ইতিপুর্বে কতটাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে? বরাদ্দ অর্থ কি কি কাজ করা হয়েছে? তার সচিত্র প্রতিবেদন প্রেরণ, উক্ত এতিমখানায় কতজন এতিম/অনাথ রয়েছে-এ সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয় সাতক্ষীরা জেলা পরিষদের কাছে।
২০১৬ সালের ৬ মার্চ ৪৬.০৪২.০১৪.৪৪.০১.০৪৪.২০১৪. ৬৯৮ নং স্মারকে সংশ্লিষ্ঠ মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সহকারি সচিব মোঃ জাকির হোসেন স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে উক্ত এতিমখানার নির্মাণ প্রকল্পের ৩৫ লাখ টাকার অনুমোদন দিতে অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করা হয়। পরবর্তীতে জেলা পরিষদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা এস,এম, মাহবুবুর রহমান স্ক্যানিং এর মাধ্যমে ওই চিঠি হইতে ”অ” শব্দুটি মুছে ফেলে ”স্বীকৃতি জ্ঞাপন করা হলো” মর্মে জাল চিঠিটি পরিষদকে কর্মকর্তাদের কাছে উপস্থাপন করেন।
২০১৭ সালের ৩১ জুলাই তথ্য অধিকার আইনে জেলা পরিষদের থেকে দেওয়া স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের সহকারি সচিব জাকির হোসেনের ২০১৬ সালের ৬ মার্চ দেওয়া আইনজীবী এড. সত্যরঞ্জন মন্ডল সম্প্রতি হাইকোর্টে এ চিঠি উপস্থাপন করলে জালিয়াতির বিষয়টি প্রকাশ পায়।
এদিকে ২০১৬ সালের ৬ মার্চ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন সাপেক্ষে জেলা পরিষদের আরএডিপি’র ৩৫ লাখ টাকা ব্যয় এ টেন্ডার আহবানের মাধ্যমে নিয়োগকৃত ঠিকাদার সাতক্ষীরা সদরের বলাডাঙার ঠিকাদার সিরাজুল ইসলামের নির্মাণ কাজ খতিয়ে দেখতে মঙ্গলবার আব্দুর রউফ কমপ্লেক্স ও এতিমখানায় যেয়ে জানা যায়, টাকা অনুমোদনের দু’ মাস আগেই মাহাবুবর রহমানের নির্দেশে ধুলিহরে মুক্তিযোদ্ধা চেয়ারম্যান স.ম. আব্দুর রউফ কমপ্লেক্স ও এতিমখানার একাডেমিক ভবন নির্মাণের কাজ যেন তেন প্রকারে শেষ করা হয়।
ঠিকাদারকে ২০১৬ সালের ২৮ মার্চ প্রথম চেক দেওয়া হয়। ওই সালের ২২ আগষ্ট জেলা পরিষদের পক্ষে একজন সাব এসিসট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার পরিদর্শণ প্রতিবেদন শেষে বকেয়া বিলের চেক দেওয়া হয়।
স্থানীয়দের অভিযোগ, আব্দুর রউফ কমপ্লেক্স ও এতিমখানার একাডেমিক ভবন নির্মাণে ব্যয় দেখানো ৩৫ লাখ টাকার অনুমোদন প্রথমে জালিয়াতি করা হয়েছে। পরবর্তীতে ঠিকাদারের মাধ্যমে লুটপাট করেছেন তৎকালিন জেলা পরিষদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা এসএম মাহাবুবর রহমান।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সাতক্ষীরা জেলা পরিষদের তৎকালিন প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও বর্তমানে খুলনা জেলা পরিষদে কর্মরত এসএম মাহাববুর রহমান নিজেকে কোন প্রকার অনিয়ম ও দূর্ণীতির সঙ্গে জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেই সাংবাদিকদের বলেন, তিনি দীর্ঘদিন হলো সাতক্ষীরা থেকে বদলী হয়েছেন। তাই কাগজপত্র ছাড়া কোন মন্তব্য করা যাবে না।
সাতক্ষীরা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ নজরুল ইসলামের সঙ্গে তার মোবাইল ফোনে বুধবার সকালে যোগাযোগের চেষ্টা করলে কথা বলা সম্ভব হয়নি।