অাহম্মাদ উল্যাহ বাচ্ছু কালিগঞ্জ : কালিগঞ্জের মথুরেশপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান গাইনের বিরুদ্ধে সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে তদন্তের সত্যতা পেয়েছে উপজেলা প্রশাসন।
গত ৪ অক্টোবর জেলা প্রশাসকের নির্দেশে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা খন্দকার রবিউল ইসলাম সরেজমিনে তদন্ত করে ৬টি খাতে অনিয়ম ও দুর্নীতি খুঁজে পান। পর দিন সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক বরাবর প্রেরিত ০৫.৪৪.৮৭৪৭.০০০.১৪.০০১.১৯-৭৬৬ নং স্মারকে ইউএনও স্বাক্ষরিত পত্রে এ সত্যতা পাওয়া যায়।
তদন্ত প্রতিবেদনে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে পরবর্তী প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সুপারিশ করা হয়েছে।
তদন্ত প্রতিবেদনে জানা গেছে, ২০১৭ -১৮ অর্থবছরে এলজিএসপি’র অধীনে ১ লাখ টাকা বরাদ্দে ৫ নং ওয়ার্ডের দেয়া পিচের মুখ হইতে পুরাতন ইট সোলিং পর্যন্ত ও ইটের মুখ হইতে বজলু সরদারের বাড়ীর অভিমুখ পর্যন্ত নতুন ইট সোলিং রাস্তা নির্মাণ, ২০১৮ -১৯ অর্থবছরে (বাস্তবায়ন ২০১৯-২০) এলজিএসপি’র অধীনে ১ লাখ টাকা বরাদ্দে দেয়া মনোরঞ্জন ঘোষের বাড়ি হইতে নিলকোমল ঘোষের বাড়ির অভিমুখে ইট সোলিং রাস্তা নির্মান, ৭৯ হাজার ৮’শ টাকা বরাদ্দের উজয়মারী জয়দেবের বাড়ির মুখ হইতে উজয়মারী প্রাইমারী স্কুল পর্যন্ত রাস্তা সংস্কার, ২০১৯-২০ অর্থবছরে দেয়া বজলুর সরদারের বাড়ীর মুখ হইতে কোমলের বাড়ীর অভিমুখে নতুন নির্মাণ ৪১ হাজার টাকা বরাদ্দ হয়।
কিন্তু এসব প্রকল্প স্হানে কাজ হয়নি। তদন্তকালে প্রকল্প সভাপতি সংশ্লিষ্ট ইউপি সদস্যরা ও ইউপি চেয়ারম্যান সন্তোষ জনক ব্যাখ্যা দিতে পারেনি। অভিযোগ সত্য বলে প্রমাণিত হয়েছে। এছাড়া ২০১৯-২০ অর্থবছরে এলজিএসপি’র ৪ লাখ টাকা বরাদ্দে বসন্তপুর গ্রামের হবি মোল্লার বাড়ির মুখ হইতে সাইফুল মেম্বারের বাড়ির অভিমুখে পানি নিষ্কাশনের আউট ড্রেন নির্মাণ এবং হাড়দ্দাহ কলগেট হইতে ঘূর্ণিঝড়ে আয়লার পানি প্লাবন হইতে রক্ষা পাওয়ার জন্য মাটির রাস্তা নির্মাণ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। তদন্তে প্রকল্প দুটি আংশিক সত্য প্রমাণিত হয়েছে।
অভিযোগ সূত্রে আরো জানা গেছে, মিজানুর রহমান গাইন ইউপি চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহনের পর থেকে কাগজে কলমে সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ দেখিয়ে লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ করে সরকারের উন্নয়নের ধারাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। এমনকি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে প্রকল্পের কাগজপত্র তুলে বাস্তবে কাজের কোন মিল খুঁজে পাওয়ার একপর্যায়ে চেয়ারম্যান মিজানের অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ এনে গত মাসে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাকিম সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক, কালিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেন।
অভিযোগের প্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসক হুমায়ন কবীরের নির্দেশে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ৪ অক্টোবর বেলা ১১টায় ইউনিয়নের পোর্ট বসন্তপুর, হাড়দ্দাহ, দেয়াসহ বিভিন্ন এলাকায় অভিযুক্ত প্রকল্প গুলো সরেজমিনে পরিদর্শন করেন।
৫ অক্টোবর জেলা প্রশাসকের কার্যলয়ে তদন্ত প্রতিবেদন পত্র প্রেরণ করা হয়। তাতে দেখা যায়, তদন্তে ইউপি চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান গাইনের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ বিভিন্ন অর্থ বছরে এলজিএসপি প্রকল্পের ৪টি খাতে শতভাগ অনিয়ম ও দুর্নীতি খুঁজে পাওয়া গেছে এবং ২টি খাতে আংশিক সত্য বলে প্রমাণিত হয়েছে। তদন্তকালে ইউপি চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান গাইন, সংশ্লিষ্ট ইউপি সদস্য-সদস্যা ও প্রকল্প চেয়ারম্যানসহ বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাকিম উপস্থিত ছিলেন।
এ বিষয়ে ইউপি চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান গাইনের ব্যবহ্নিত ০১৭৩০৯৮৬৯২৩ মুঠোফোন বন্ধ থাকায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। তদন্ত কর্মকর্তা ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা খন্দকার রবিউল ইসলামের নিকট দুর্নীতির তদন্তের সত্যতা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ইতিমধ্যে তদন্ত শেষে প্রতিবেদন জেলা প্রশাসক মোঃ হুমায়ুন কবির স্যারের কাছে পাঠিয়েছি। ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগে ৬টি উন্নয়ন প্রকল্পের সত্যতা পাওয়া গেছে।