আসাদুজ্জামান : বাংলাদেশের আবাদযোগ্য জমি ৬৬ শতাংশ থেকে বর্তমান সময়ে ৬০ শতাংশে নেমে আসার পরও খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে উল্লেখ করে বাংলাদেশ কৃষি সাংবাদিক ফোরাম কর্মকর্তারা বলেন, দেশের উপকূল জুড়ে ৩৩ হাজার মেট্রিক টন খাদ্য উৎপাদন থেকে বঞ্চিত রয়েছে।
৭২০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ১৯টি জেলার ১ কোটি অধিবাসী এই বঞ্চনার শিকার হয়েছেন জানিয়ে তারা বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত অভিযোজন এবং আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে এই ঘাটতি পূরন করা সম্ভব হতে পারে। তারা আরও বলেন, কেবল আউশ, আমন ও বোরো ধান উৎপাদনই নয়, দেশজুড়ে সব ধরনের কৃষিখাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে।
তবে উপকূলের জলাবদ্ধতা হ্রাস এবং লবনাক্ততা সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে আসতে পারলে এ উৎপাদন আরও বেড়ে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে।
শনিবার সন্ধ্যায় সাতক্ষীরা পাবলিক মিলনায়তনে কৃষি ফোরাম আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মোঃ হুমায়ুন কবির। এসময় ঢাকা থেকে আসা কৃষি ফোরামের সঙ্গে সংযুক্ত হন সাংবাদিক মানিক মুনতাসির, মোস্তাফিজ, কাবেরী মৈত্র, সাঈদ শাহীন প্রমুখ।
তথ্যউপাত্ত তুলে ধরে কৃষি সাংবাদিক নেতারা বলেন, বাংলাদেশে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে এক ফসলী, দুই ফসলী ও তিন ফসলী চাষাবাদ করার কারনে।
এমনকি জমির বহুমুখী ব্যবহারও এই উৎপাদন বৃদ্ধিতে সহায়ক শক্তির কাজ করেছে। আবাদযোগ্য ৭৫ শতাংশ জমিতে এভাবে বহুমুখী এবং মিশ্র চাষ করে উপকূলে খাদ্য উৎপাদন আরও বাড়িয়ে দেওয়া সম্ভব। দেশে এখন ৪৫ লাখ মেট্রিক টন মাছ উৎপাদিত হয় উল্লেখ করে তারা বলেন, উপকূল অঞ্চলে সচরাচর লবনাক্ততার মাত্রা ছিল ৭ থেকে ৮ পিপিটি। বর্তমান সময়ের শুষ্ক মওসুমে তা ১৮/১৯ পিপিটি পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিনা সহ বিভিন্ন জাতের ধান উৎপাদন ১২ থেকে ১৩ পিপিটি পর্যন্ত সম্ভব হলেও অন্যান্য উৎপাদন নানাভাবে মার খাচ্ছে।
উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরার আশাশুনি ও শ্যামনগর সহ বিভিন্ন এলাকায় এখন লবনাক্ততার কারনে পরিবেশগত বিপর্যয় শুরু হয়েছে। নদী খালে পুকুরে নোনা পানি এবং জলাবদ্ধতার অবসান শেষে বিস্তীর্ন এলাকা বালুকাময় হয়ে ওঠায় সেখানকার সবুজ বৃক্ষ সম্পদ শুকিয়ে কাঠ হয়ে যাচ্ছে। সাজানো গাছপালা এবং ধান সহ অন্যান্য কৃষি খাদ্যপন্য উৎপাদন কঠিন হয়ে পড়েছে।
লবনাক্ততার সাথে যুদ্ধ করে লবন সহিষ্ণু ধান উৎপাদনে বাংলাদেশ কৃষি বিভাগ সব ধরনের সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে। এসবের পরও জলবায়ু পরিবর্তনজনিত এবং মনুষ্যসৃষ্ট জলাবদ্ধতা ও লবনাক্ততার কবল থেকে রক্ষা পেতে অভিযোজন প্রক্রিয়া জোরদার করতে হবে। এ প্রসঙ্গে তারা দেশের ৯ কোটি টন কৃষিপন্য উৎপাদনের তথ্য তুলে ধরেন। মতবিনিময় সভায় তথ্যউপাত্ত তুলে ধরে বলা হয়, বর্তমান সময়ে পরিবারপ্রতি গতপড়তা দশমিক ৮২ একর জমি রয়েছে জানিয়ে আয়োজকরা বলেন, গত পাঁচ দশকে ধান উৎপাদন বেড়ে এখন তা ১০ লাখ মেট্রিক টন ছাড়িয়ে গেছে। এই উৎপাদন আরও বৃদ্ধির জন্য কাজ করতে হবে বলে মন্তব্য করেন তারা।
প্রধান অতিথির বক্তৃতায় জেলা প্রশাসক বলেন, ইচ্ছা করলেই জলবায়ু পরিবর্তনের এই ক্ষতি থেকে রক্ষা পাওয়া সহজ কথা নয়। আর একারনে শুধুমাত্র ধান উৎপাদনের ওপর নির্ভর না করে সাতক্ষীরার আম, উন্নত জাতের কুল, বহু ধরনের সবজি এবং অন্যান্য কৃষি ফসলের চাষ করে উপকূলের উৎপাদন বঞ্চনাকে অনেকটাই ঠেকিয়ে রাখা সম্ভব। তিনি বলেন, সরকার কৃষিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে কৃষক ও কৃষিকাজে সব ধরনের সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে। লবনাক্ত পানির চিংড়ী মাছ ছাড়াও মিষ্টি পানিতে অন্যান্য মৎস্য উৎপাদনে সরকারের সহযোগিতা অব্যাহত রয়েছে।
উন্মুক্ত আলোচনায় আরও অংশগ্রহন করেন সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সভাপতি মমতাজ আহমেদ বাপী, সাবেক সভাপতি অধ্যক্ষ আবু আহমেদ, সাবেক সভাপতি সুভাষ চৌধুরী, সাবেক সহসভাপতি অধ্যক্ষ আশেক ই এলাহী, সাধারন সম্পাদক মোহাম্মদ আলী সুজন, সাবেক সাধারন সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান উজ্জ্বল, সাবেক সাধারন সম্পাদক এম কামরুজ্জামান, সাবেক সাধারন সম্পাদক মোজাফফর রহমান, ৭১ টিভির বরুন ব্যানার্জী প্রমুখ সাংবাদিক।##