নিজস্ব প্রতিনিধি ঃ দেশি বিদেশী ষড়যন্ত্রে ধ্বংসের দ্বার প্রান্তে সাতক্ষীরার ভোমরা স্থল বন্দর। ব্যক্তি স্বার্থের কারণে একের পর এক হয়রানির শিকার হচ্ছে ব্যবসায়ীরা। ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে বন্দর নির্ভরশীল হাজারো শ্রমিক। দেশী এবং বিদেশী চোরাকারাবারিদের চক্রান্তে একের পর এক নানা সংকটে পড়তে হচ্ছে এ বন্দরের ব্যবসায়ীদের। ফলে ভোমরা বন্দর থেকে ব্যবসা গুটিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা করছেন অনেক ব্যবসায়ী।
বন্দর সূত্রে জানা গেছে, এসব বিষয়ে ভোমরার যেসব সংগঠনগুলোর স্বোচ্চার হওয়ার কথা সেগুলোর বাণিজ্যিকভাবে পকেট কমিটি হওয়ার ফলে সেটি সম্ভব হচ্ছে না। স্থানীয় প্রভাবশালীদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত কমিটির ব্যবসায়ীদের অধিকার নিয়ে কথা বলার সাহস রাখে না বলে বন্দরের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন।
বছরের পর বছর ধরে পাতানো নির্বাচন হয় এসব সংগঠনের। নির্বাচনে প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি ও সাংবাদিক নামধারী সংশ্লিষ্টদের ‘ম্যানেজ’ করেই করা হয়। যে টাকার একটি বড় অংশের জোগান দিয়ে থাকেন চোরাকারবারিরা।
এদিকে, সম্প্রতি ভারতের ঘোজাডাঙ্গায় সিরিয়ালের নামে চাঁদাবাজি শুরু হয়। ফলে আমদানি পণ্যের দাম বৃদ্ধিসহ ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্থ হতে থাকে। তবে ঘোজাডাঙ্গায় সিরিয়ালের জন্য অনলাইন চালু করায় চাঁদাবাজি বন্ধ হওয়ায় কিছুটা স্বস্তি পেয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
এর কিছুদিন যেতে না যেতেই গত ২৪ আগস্ট থেকে বন্দরের তিনটি শ্রমিক সংগঠন বাড়তি বকশিসের দাবিতে আন্দোলন শুরু করে। শ্রমিকদের দাবি মেনে না নেওয়ায় তারা পন্য উঠানো নামানো বন্ধ করে দিয়ে কর্মরিবতি শুরু করে। এ বিরোধের জেরে সিএন্ডএফ এজেন্ট কর্মচারী অ্যাসোসিয়েশন ও হ্যান্ডলিং শ্রমিক ইউনিয়নের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। এতে শ্রমিকদের হামলায় কর্মচারী অ্যাসোসিয়েশনের তিন শ্রমিক কর্মচারী আহত হলে বন্দরের লোড আনলোড বন্ধ রেখে সকাল থেকে কর্মবিরতি পালন করে। এরফলে মালামাল খালাসের অপেক্ষায় ভোমরা বন্দরে পন্যবাহি ট্রাকের দীর্ঘ লাইন পড়ে যায়। এঘটনায় সাতক্ষীরা সদর থানা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ আব্দুল কায়ুম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে হামলাকারির বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের আশ^াস দিলে কর্মচারীরা তাদের কর্মবিরতি প্রত্যাহার করে।
ভোমরা সিএন্ডএফ এজেন্টস কর্মচারী অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি পরিতোষ কুমার ঘোষ বলেন, পুলিশ হামলাকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন এবং উশৃঙ্খল শ্রমিকদের কার্ড বাতিলের আশ^াসে কর্মবিরতি প্রত্যাহার করে কাজ শুরু করা হয়েছে।
হ্যান্ডলিং শ্রমিক ইউনিয়নের (১১৫৫) এর সভাপতি নজরুল ইসলাম বলেন, ট্রাক প্রতি শ্রমিকদের ৬৪০ টাকা পাওয়ার কথা থাকলেও ঠিকাদার আমাদের দেন ৪০০ টাকা। এই টাকা মাস শেষে শ্রমিক প্রতি দৈনিক ২ থেকে ৩ শ টাকা ভাগ হয়। এই দ্রব্য মূল্যের উর্ধ্বগতির বাজারে সংসার চালানো সম্ভব না হওয়ায় আমরা আন্দোলন করেছি। আমাদের দাবির প্রেক্ষিতে আমদানীকারকরা ৩ শ টাকা দিতে সম্মত হওয়ায় আমার আন্দোলন প্রত্যাহার করেছি। তবে কর্মচারী অ্যাসোসিয়েশনের তিনজনের উপর হামলার বিষয়ে তিনি বলেন সে সময় আমরা কার্যালয়ে অবরুদ্ধ ছিলাম। পরে শুনেছি শ্রমিকদের সাথে কর্মচারী অ্যাসোসিয়েশনের কয়েকজনের ধাক্কা ধাক্কি হয়েছিল। যাই হোক বিষয়টির সমাধান হয়েছে।
ভোমরা স্থলবন্দর সিএন্ডএফ এজেন্ট এ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান নাসিম জানান, হ্যান্ডলিং শ্রমিকরদের মালালামাল লোড আনলোড করার জন্য ট্রাকপ্রতি সরকার নির্ধারিত ঠিকাদারের কাছে প্রায় ২২’শ টাকা পরিশোধ করতে হয়। এছাড়া শ্রমিকদের ট্রাক প্রতি আরো ৮’শ টাকা বকশিস দিতে হয়। এই বকশিস সম্প্রতি তারা তা বাড়িয়ে আরো ৪’শ টাকা দাবী করে আসছিল যা অযৌক্তিক বলে তিনি দাবী করেন। কিন্তু ব্যবসায়ীরা তা দিতে রাজী না হওয়ায় তারা গতকাল থেকে লোড আনলোড বন্ধ করে দেয়।
এবিষয়ে সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুল কাইয়ুম বলেন, আমাদের উপস্থিতিতে উভয়পক্ষ নিজেরাই বিষয়টির সমাধান করে নিয়েছেন। পরবর্তীতে সেখানে যাতে আর আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি না ঘটে বিষয়টিও তারা খেয়াল রাখবে বলে তারা প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
এদিকে, ভারতীয় পণ্যবাহি একটি ট্রাক মালামাল নিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশের সময় ভোমরা কাষ্টমস অফিসের সামনে গাড্ডায় পড়ে সড়কের উপর পাল্টি খেয়ে পড়ে যাায়। এতে সড়কটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পণ্যবাহি ট্রাক ওপার থেকে এপারে প্রবেশ করতে পারছেনা। যা মরার উপর খাড়ার ঘা মত অবস্থা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বন্দরের সহকারী কমিশার আমীর মামুন। ফলে ভারতে ঘোজাডাঙ্গা এলাকায় পন্য বাহি ট্রাকের দীর্ঘ লাইন পড়ে গেছে। তিনি আরো জানান, ইতিমধ্যে ট্রাকটি সড়কের উপর থেকে সরানোর কাজ চলছে। খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে পণবাহি ট্রাক ভোমরা বন্দরে প্রবেশ করতে পারবে।##