আসাদুজ্জামান : বিরল এক ব্যধির কবলে পড়েছে সাতক্ষীরার ১২ বছরের শিশু মুক্তামনি। সে সদর উপজেলার কামারবায়সা গ্রামের মুদি দোকানী ইব্রাহীম হোসেনের মেয়ে। ইব্রাহীম হোসেন দাম্পত্য জীবনে দুই যমজ কন্যা ও এক পুত্র সন্তানের জনক। তার দুই যমজ সন্তানের মধ্যে হীরামনি বড় ও মুক্তামনি ছোট। আর ছোট ছেলে আল-আমিনের বয়স এক বছর তিন মাস।
মুক্তামনির বাবা ইব্রাহীম হোসেন জানান, জন্মের প্রথম দেড় বছর যাবত ভালোই ছিল হীরা মনি ও মুক্তা মনি। কিছুদিন পর মুক্তা মনির ডানহাতে একটি ছোট মার্বেলের মতো গোটা দেখা দেয়। এরপর থেকে তা বাড়তে থাকে। সাথে চলে স্থানীয় চিকিৎসাও। দেখলে মনে হবে গাছের বাকলের (ছালের) মত ছেয়ে গেছে পুরো হাতটি। আক্রান্ত ডান হাত তার দেহের সব অঙ্গের চেয়েও ভারি হয়ে উঠেছে। ভেতরে পোকা জন্মেছে। বিকট যন্ত্রণায় মুক্তামনি সব সময় অস্থির। ডাক্তার বলছেন এ ব্যাধি তার দেহের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ছে। তিনি জানান, মুক্তার সারা দেহে রোগ ছড়িয়ে পড়েছে। তার শরীর শুকিয়ে যাচ্ছে। শুধু হাতের ভার বাড়ছে। দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে দেখানো হয়েছে মুক্তামনিকে। কেউ কোনো সঠিক চিকিৎসা দিতে পারেন নি। রোগের মাত্রা শুধু বেড়েই চলেছে। হতাশ বাবা ইব্রাহীম গত ছয় মাস যাবত চিকিৎসাবিহীন অবস্থায় মুক্তাকে বাড়িতে রেখে কেবল ড্রেসিং করছেন।
তিনি আরো জানান, মেয়ের চিকিৎসার জন্য অনেক হাসপাতালে গিয়েছি। এখন সর্বস্বান্ত হয়ে পড়েছি। সঠিক চিকিৎসা পাইনি। তবে ডাক্তার বলছেন রোগটি বিরল হলেও বাংলাদেশে এর চিকিৎসা রয়েছে। বাংলাদেশে বৃক্ষ মানবের সফল চিকিৎসা হয়েছে বলেও জানান ডাক্তার। তাই তিনি আবেগজড়িত কন্ঠে বলেন, প্রধানমন্ত্রী আমার মেয়ের চিকিৎসার দায়িত্ব নিলে আমি কৃতজ্ঞ থাকবো।
যন্ত্রণায় কাতর মুক্তামনি জানায়, শুধু চুলকায়। আর যন্ত্রণা করে। গরমে ঠা-ায় বাড়ে। সে আক্ষেপ করে আরো বলে, বাইরের দুনিয়া আমি দেখতে পারি না। স্কুলে যেতে পারিনা। খেলতে পারিনা। আমার জীবনে কোনো আনন্দ নেই।
মুক্তামনির বড় বোন হীরামনি জানায়, বোনের জন্য কষ্ট হয়। ভাল থাকলে এক সাথে খেলতে পড়তে পারতাম। মুক্তার যমজ বোন হীরামনি আরো বলে, এবার ঈদে নতুন জামা নেয়নি। কারণ মুক্তা জামা পরতে পারবে না তাই।
মুক্তামনির দাদা এজাহার আলী গাজী কান্না জড়িত কন্ঠে জানান, বছর চারেক আগে থেকে মুক্তামনির ব্যাধির মাত্রা বেড়ে যায়। বন্ধ হয়ে যায় তার চলাফেরা, স্কুলে যাওয়া, খেলাধুলা। মুক্তামনি এখন বসতে পারে না। দাঁড়াতে পারে না। হাঁটতেও পারে না সে। দিনরাত কেবল শুয়ে কাটাতে হয় তাকে।
এরই মধ্যে আক্রান্ত হাত ক্রমেই ভারি হয়ে উঠছে। এতে পোকা ধরেছে। মশা ও মাছির উৎপাত বাড়ছে। বাড়িময় বিকট গন্ধ ছুটছে। এ কারণে তাদের বাড়িতে আত্মীয় স্বজনরা আসতে চায় না। গ্রামের লোকজনও শুধু দুর থেকে নজরে দেখে চলে যায়।
মুক্তামনির মা আয়েশা খাতুন জানান, আমার মেয়ের কষ্ট দেখতে পারিনা। সারা দেহে পোকার কামড়ের যন্ত্রণা। ঈদে নতুন জামা পরাতে পারিনি তাকে। মেধাবী মেয়ে। সুরেলা গলায় গজল গায়। গান গায়। মুক্তামনির হাতে পঁচন ধরায় দুর্গন্ধের কারণে গ্রামের লোকজন এমনকি আত্মীয় স্বজনরাও আমাদের বাড়িতে আসে না।
সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজের সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. নাসিরউদ্দিন জানান, মুক্তামনির এ রোগটি বিরল। প্রাথমিকভাবে বলা যায় এর নাম হাইপারকেরাটসিস। এটি স্কীন ক্যান্সারও হতে পারে। বাংলাদেশে এর চিকিৎসা আছে। বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় অথবা ঢাকা মেডিকেলে এর চিকিৎসা সম্ভব।
তাই, সরকারি সহায়তার পাশাপাশি কোনো সহৃদয় ব্যক্তি এগিয়ে এলে মুক্তামনি ও তার পরিবারে হাসি ফুটবে বলে জানালেন স্থানীয় এলাকাবাসী।
পূর্ববর্তী পোস্ট