তিন বছরের শিশু অহনা আফজাল। কাঁদছিল অনবরত। তবে কান্নার সঙ্গে তাঁর চোখ দিয়ে পানি নয়, বেরিয়ে আসছিল টাটকা রক্ত। আর সেই রক্তে ভেসে যাচ্ছিল অহনার সারা মুখ।
ভারতের তেলেঙ্গানা রাজ্যের হায়দরাবাদ শহরের বাসিন্দা অহনার এই ‘রক্তকান্না’ দেখে ভয় পেয়েছিলেন হাসপাতালের চিকিৎসকরাও। তাঁরা জানান, ছোট্ট অহনা ‘হেমাটিড্রোসিস’ নামে এক বিরল রোগে আক্রান্ত। রোগটি সম্পর্কে সাধারণ মানুষের ধারণা নেই বললেই চলে।
অহনার পরিবারের সদস্যরা জানান, প্রায় ১৯ মাস আগে অহনা জ্বরে আক্রান্ত হয়। সেই প্রথম অহনার নাক থেকে রক্ত বের হতে শুরু করে। তার বাবা-মা বিষয়টি স্থানীয় চিকিৎসককে জানালেও তিনি রোগ ধরতে পারেননি। অহনার বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে রোগের প্রকোপও। পরে নাক, মুখ, চোখ এমনকি গোপনাঙ্গ দিয়েও রক্তপাত শুরু হয়।
এরপর বিভিন্ন হাসপাতালের খ্যাতনামা চিকিৎসকদের কাছে নিয়ে যাওয়া হয় অহনাকে। সেখানেই ধরা পড়ে তার রোগ।
অহনার বাবা মহম্মদ আফজল ও মা নাজিমা বেগম জানান, ছোটবেলায় নিউমোনিয়া হয়েছিল অহনার। তার পর থেকেই তার এই সমস্যা। সন্তানের এই রোগের জন্য বিভিন্ন চিকিৎসকের কাছে গিয়েছেন তাঁরা। কিন্তু উপকার পাননি।
এদিকে তেলেঙ্গানার হাসপাতালের চিকিৎসক সিরিশ কুন্তল জানিয়েছেন, এই রোগে আক্রান্ত হলে শরীর থেকে ঘামের মতোই রক্ত ঝরে। তবে চিকিৎসার ফলে অহনার শরীর থেকে রক্তপাতের পরিমাণ আনুপাতিক হারে অনেকটাই কমে গেছে।
চিকিৎসক আরো জানান, ‘হেমাটিড্রোসিসে’ আক্রান্ত হলে শরীরের বিভিন্ন অংশ দিয়ে আঘাত ছাড়াই রক্ত বের হতে থাকে। সাধারণত চোখ, মুখ ও নাক দিয়েই রক্ত বের হয়। বিরল হলেও সাধারণত প্রাণঘাতী নয় রোগটি। তবে খুব বেশি মানসিক চাপ হলে নাক, মুখ বা চোখ দিয়ে বের হতে থাকে টাটকা রক্ত। ফলে রোগীর শরীরে রক্তের পরিমাণ অনেকটাই কমে যায়। প্রয়োজনে বাইরে থেকে শরীরে রক্তও দিতে হয়। আর এই রোগের চিকিৎসা অত্যন্ত ব্যয়বহুল।
এখন ভারতের তেলেঙ্গানা হাসপাতালে চিকিৎসা চলছে ছোট্ট অহনার। কিন্তু তার বাবার সামান্য আয়ে দুষ্কর হয়ে পড়েছে চিকিৎসা চালিয়ে যাওয়া। ফলে বাধ্য হয়ে মুহম্মদ আফজাল মেয়ের চিকিৎসার জন্য সাহায্য চেয়ে চিঠি লিখেছেন তেলেঙ্গানা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী কে সি রাও ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে।