মিয়ানমার নির্যাতন ও সহিংসতা থেকে বাঁচতে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা বেশির ভাগ রোহিঙ্গার জীবনের গল্প ইয়োসার হোসেনের মত। ইয়োসার হোসেনের বয়স মাত্র সাত বছর। গায়ে এখনো স্কুল ড্রেস, জীবনের তাগিদে ছোট বোনকে কাঁধে নিয়ে মেঠো পথে ধরে হাঁটতে শুরু করেছেন। গন্তব্য বাংলাদেশ।
২৫ আগষ্ট সহিংসতার পর থেকে এভাবেই বাংলাদেশে পাড়ি জমিয়েছে প্রায় পাঁচ লাখের বেশি মুসলিম রোহিঙ্গা। যাদের দুই তৃতীয় অংশ শিশু বলে জানিয়েছে এবিসি নিউজ।
রোহিঙ্গা শিশু ইয়োসার হোসেন জানায়, ‘সে(বোন) খুব ভারী। গত সপ্তাহে আমি বাবাকে হারিয়েছি, অামরা বাড়ি-দেশ সবকিছু হারিয়েছি। আমি ভাবতেও পারিনি সমস্ত রাস্তায় ওকে (বোন) বহন করতে পারব।’
ইয়োসার মা ফিরোজা বেগম বলেন, তাদের বাড়ি রাথাডং ছিলো , দুই সপ্তাহ আগে তাদের বাড়িঘর পুড়িয়ে দিয়েছে। হঠাৎ করেই দেখে সবাই চিৎকার করছে এবং চারিদিকে শুধু আগুন আর আগুন। আমাদের সব কিছু পুড়ে গেল, ইয়োসার বাবা পালিয়ে আসতে গেলে তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়। তিন বাচ্চা এবং আমি বেঁচে আসতে পেরেছি।
ইয়োসারা ছয়দিন ধরে হাঁটছে। সঙ্গে আছে তার দুই খালা ও খালাতো ভাই বোন। তারা পথে যা পাচ্ছে তাই খাচ্ছে। খুব অল্প সময় নিয়ে বিশ্রাম নিচ্ছে। যতক্ষণ নাফ নদীর কূল খুঁজে না পাওয়া যাবে ততক্ষণ চলতে থাকে ইয়োসারদের জীবন বাঁচানোর সংগ্রাম। এপির ছবিতে ফুঠে উঠেছে ইয়োসার সংগ্রামের সেই চিত্র।
বাংলাদেশে পৌঁছাতে এখনো তাদের পরিবারকে একদিন ধরে রিক্সা, ট্রাক,হেঁটে বাংলাদেশে আসতে হয়েছে। ইয়োসার এখনো স্কুল ড্রেস পড়া, গায়ে সাদা শার্ট, আর সবুজ প্যান্ট পড়া। সে এভাবেই মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আসে।
ইয়োসার জানায়, তার কালো জুতা ও মোজা ছিল, কিন্তু আসার সময় আনতে ভুলে গেছে। স্কুলের কথা তার খুব মনে পড়ছে।
অবশেষে ২ অক্টোবর ইয়োসার এবং তার পরিবার বাংলাদেশে তাদের এক আত্মীয়র বাড়িতে এসে পৌছায়। এই দীর্ঘ পথ ইয়োসারকে তার ছোট বোনকে কাঁধে করে নিয়ে আসতে হয়েছে।