নিজস্ব প্রতিবেদক : সাতক্ষীরা জেলা পরিষদের প্রশাসনিক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে খেয়াঘাট ইজারার টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। প্রতিকার চেয়ে স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণলয়সহ বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
সাতক্ষীরা জেলা পরিষদ সূত্রে জানা গেছে, জেলা পরিষদের আওতাধীন জেলায় ২৮টি খেয়াঘাট ছিল। ব্রীজ নির্মাণ ও নদী মজে যাওয়ার কারণে সাতটি খেয়াঘাট স্থায়ীভাবে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। বাকী ২১টির মধ্যে ঘোলা-হিজলা-কল্যানপুর খেয়াঘাট ও হাজরাখালি -বিছট খেয়াঘাট নিয়ে ইজারাগ্রহীতা আশাশুনির শ্রীউলা ইউপি চেয়ারম্যান আবু হেনা শাকিল মহামান্য হাইকোর্টে ২৫/২০১২ এবং মানিকখালি খেয়াঘাট নিয়ে সাতক্ষীরা শহরের রসুলপুরের কওছার আলীর দায়েরকৃত ২২৭৯/২০০৫ নং রিট পিটিশন বিচারাধীন থাকায় ওইসব খেয়াঘাট ইজারা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।
স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন দপ্তরে হাইকোর্টের আইনজীবী অ্যাড. সত্যরঞ্জন মণ্ডলের পাঠানো চলতি বছরের ১৩ মে এর অভিযোগ(তথ্য অধিকার আইনে জেলা পরিষদের সম্প্রতি বদলী হওয়া প্রধান নির্বাহী এএনএম মঈনুল ইসলামের স্বাক্ষরিত কাগজপত্র) থেকে জানা যায়, ঘোলা-হিজলা-কল্যাণপুর খেয়াঘাটের ১০ বছরের মোট ইজারা মূল্য ১৮ লাখ ৩৮ হাজার ৫১০ টাকা দেখানো হয়েছে । এর মধ্যে বাংলা ১৪১৮ সালে এক লাখ ৩২ হাজার ১১০ টাকা ও ১৪১৯ সালে এক লাখ ৪৮ হাজার ৯০ টাকা দেখানো হয়। একইভাবে হাজরাখালি-বিছট খেয়াঘাটের ১০ বছরের ইজারা মূল্য নির্ধারণ করা হয় ১০ লাখ ৬৯ হাজার ৭৫ টাকা। বাংলা ১৪১৯ ও ১৪১৯ সালে ওই খেয়াঘাট বাবাদ গ্রহণ করা হয়েছে ১০ লাখ ৫২৮ টাকা। ওই দু’টি খেয়াঘাট ইজারা নেন আশাশুনি উপজেলার শ্রীউলা ইউপি চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা আবু হেনা শাকিল। একইভাবে ইজারা নেওয়ার কিছুদিন পর খেয়াঘাটের শ্রেণী পরিবর্তণ করার অভিযোগে কেন তার ইজারা বাতিল করা হবে না জানতে চেয়ে প্রশাসনিক কর্মকর্তা এসএম মাহাবুবর রহমান নোটিশ করেন। এরই বিরুদ্ধে তিনি মহামান্য হাইকোর্টে দু’টি খেয়াঘাটের বিপরীতে ২০১২ সালের ২ জানুয়ারি ২৫/১২ রিট পিটিশন দাখিল করেন। রিট পিটিশনে ঘোলা- হিজলা- কল্যাণপুর খেয়াঘাট বাবদ বাংলা ১৪১৮ ও ১৪১৯ সালে ১২ লাখ ৪০০ টাকা ইজারা গ্রহণ করা হয়। এর মধ্যে ১৪১৮ সালের ইজারা মূল্য বাবদ তিন লাখ ৫০ হাজার ৪০০ টাকা ছাড়াও ভ্যাট, আয়কর ও ১% প্রিমিয়াম বাবদ ৭৩ হাজার ৫৮৪ টাকা জেলা পরিষদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা এসএম মাহাবুবর রহমান ২০১১ সালের ২৬ জুন রশিদ বই এর মাধ্যমে গ্রহণ করেন। একই তারিখে হাজরাখালি বিছট খেয়াঘাটে বাংলা ১৪১৮ ও ১৪১৯ সালে ১০ লাখ ৫২৮ টাকার ইজারা গ্রহণ করার পর ১৪১৮ সাল বাবদ দু’ লাখ ২০ হাজার টাকা গ্রহণ ছাড়াও ভ্যাট, আয়কর ও ১% প্রিমিয়াম বাবদ ৪৬ হাজার ২০০ টাকা রশিদের মাধ্যমে গ্রহণ দেখানো হয়েছে। যেখানে আত্মসাতের বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যায়।
সেক্ষেত্রে ঘোলা- হিজলা ও কল্যাণপুর খেয়াঘাট থেকে দু’ বছরে দু’ লাখ ৮০ হাজার ২০০ টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দেখানোয় ইজারা মূল্য ৯ লাখ ২০ হাজার ২০০ টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে।
একইভাবে মানিকখালি খেয়াঘাটটি ১০ বছরে ২৫ লাখ ৩১২ হাজার টাকায় ইজারা দেওয়া হয়। ইজারা গ্রহীতা কওছার আলী কারণ দর্শানোর নোটিশ পেয়ে ২২৭৯/২০০৫ নং রিট পিটিশন দাখিল করলে তাতে ইজারার টাকা লুটপাটের বিশাল অসামজ্ঞস্য ধরা পড়ে।
এ ছাড়া চলতি বছরের মে মাসে জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে কক্সবাজারে আনন্দ ভ্রমনে যাওয়ার আগে শ্যামনগরের নোয়াবাকি খেয়াঘাট ইজারা দেওয়া নিয়ে জেলা পরিষদের প্রশাসনিক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ আনেন কয়েকজন সদস্য।
জানতে চাইলে শ্রীউলা ইউপি চেয়ারম্যান আবু হেনা শাকিল ও সুলতানপুরের কওছারের পক্ষে তার আত্মীয় সুলতানপুরের বাবু বলেন, তাদের দায়েরকৃত রিট পিটিশনগুলি বিচারাধীন রয়েছে।
এক বছরের ছুটিতে থাকায় খেয়াঘাট সংক্রান্ত কোন তথ্য জানা সম্ভব হয়নি জেলা পরিষদের প্রশাসনিক কমকর্তা এসএম মাহাবুবর রহমানের মোবাইল ফোন থেকে।
জেলা পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান আমিনুর রহমান বাবু বলেন, ঘোলা-হিজলা-কল্যানপুর, হাজরাখালি-বিছট ও মানিকখালি খেয়াঘাট নিয়ে চলমান মামলাগুলি পরিচালনা করার জন্য ইতিপূর্বে সরকারিভাবে কোন আইনজীবী নিয়োগ দেওয়া হয়নি। এ নিয়ে তাদের মাসিক সভায় উপস্থাপন হওয়ায় সদস্য আব্দুল হাকিম, আল ফেরদৌস আলফা ও অ্যাড. শাহানাজ পারভিন মিলিকে প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। নওয়াবেকী খেয়াঘাট নিয়ে অনিয়মের কথা তিনি অস্বীকার না করেই বলেন, আগামিতে খেয়াঘাটসহ সকল ইজারার ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা আনা হবে।
পূর্ববর্তী পোস্ট