দেশের খবর: দেশেরঅর্থনীতিতে সড়ক দূর্ঘটনা তৈরি করছে সবচেয়ে বড় ক্ষত। কেড়ে নিচ্ছে জান ও মাল, ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে অসংখ্য মানুষ। যাত্রী কল্যাণ সমিতির তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে ২ হাজার ৪৭১ জন। গতবছর প্রায় পাঁচ হাজার সড়ক দুর্ঘটনায় সারা দেশে নিহত হয়েছে ৭ হাজার ৩৯৭ জন গত তিন বছরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী বছরে গড়ে পাঁচ হাজার মানুষ সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারাচ্ছেন।এদিকে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সড়ক দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের (এআরআই) একটি গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সড়ক দুর্ঘটনা এবং এর প্রভাবে ক্ষয়ক্ষতির আর্থিক পরিমাণ বছরে প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা। এসব দুর্ঘটনার কারণে বছরে মোট জাতীয় উৎপাদনের (জিডিপি) ২ থেকে ৩ শতাংশ হারাচ্ছে বাংলাদেশ।
আইন প্রয়োগে দুর্বলতাকেই সড়ক দুর্ঘটনার প্রধান কারণ হিসেবে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। সড়ক দুর্ঘটনার কারণ গুলোর অন্যতম ফিটনেসবিহীন যানবাহন এবং গাড়ি চালকদের অদক্ষতা ও বেপরোয়া মনোভাব।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউট-এআরআই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশে যত সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে তার মধ্যে শতকরা ৪৩ শতাংশ ক্ষেত্রেই দায়ী অতিরিক্ত গতিতে গাড়ি চালানো্। ৩১ শতাংশ ক্ষেত্রেই দ্বিতীয় প্রধান কারণ এই বাড়তি গতি। দুর্ঘটনার শতকরা ৬৫ ভাগ হয় ভারী ও হালকা যানবাহনের কারণে।
প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক অধ্যাপক মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, দুর্ঘটনার কারণে বছরে প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে। দুর্ঘটনায় জানমালের ক্ষতি ও দুর্ঘটনা থেকে সৃষ্ট যানজট অর্থনীতিকে বাধাগ্রস্ত করছে। দুর্ঘটনা হ্রাসে সরকার পদক্ষেপ নিলেও সুষ্ঠু পরিকল্পনার অভাব ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যকার সমন্বয়হীনতার অভাবে এ ক্ষেত্রে আশানুরূপ অগ্রগতি হচ্ছে না।
তিনি বলেন, সাধারণত দূরপাল্লার রুটে গাড়ি চালানোর সময় প্রতি ৫ ঘণ্টা পর চালককে বিশ্রাম দেয়ার নিয়ম। কিন্তু আমাদের দেশে এ নিয়মের তোয়াক্কা করা হয় না। উল্টো ঈদের সময় তাদের টানা একাধিক ট্রিপ দিতে বাধ্য করা হয়। একটানা দীর্ঘক্ষণ গাড়ি চালিয়ে ক্লান্ত চালকের পক্ষে গাড়ির নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখা কঠিন হয়ে পড়ে, যার ফলাফল দুর্ঘটনা।
অধ্যাপক মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, সারা দেশে অপরিকল্পিত গতিরোধকও সড়কে প্রাণ ঝরাচ্ছে। সারা দেশের সড়ক-মহাসড়কে অপরিকল্পিত গতিরোধক থাকলেও এগুলোর বেশির ভাগই আনমার্কড। অনেক গতিরোধকের সামনে আবার সাইনবোর্ডও নেই। ফলে সহজেই এসব গতিরোধক চালকের চোখ এড়িয়ে যাচ্ছে। দুর্ঘটনা কমানোর বদলে এগুলো হয়ে উঠছে দুর্ঘটনার কারণ।
বুয়েটের এই অধ্যাপক আরো বলেন,চালকের মাদকাসক্তিও সড়ক দুর্ঘটনা বাড়াচ্ছে। মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, সড়ক দুর্ঘটনার ৩০ শতাংশ ঘটাচ্ছেন মাদকাসক্ত চালক। দুর্বল তদারকির কারণে মাদকাসক্ত চালকরা দিব্যি গাড়ি চালিয়ে নিচ্ছেন।
তিনি বলেন, শুধু অবকাঠামোগত উন্নয়ন দিয়ে দুর্ঘটনা রোধ করা সম্ভব নয়। ব্যবস্থাপনা, শিক্ষা ও সচেতনতার ওপর জোর দিতে হবে। যানবাহনের গতি পর্যবেক্ষণে আধুনিক স্পিড ক্যামেরা স্থাপন, মহাসড়কে নজরদারির জন্য স্থায়ী লোকবল নিয়োগ এবং দুর্ঘটনার পর তাৎক্ষণিক উদ্ধার ও সেবাদানের জন্য ভ্রাম্যমাণ হাসপাতাল চালুর পরিকল্পনা করা জরুরী। পাশাপাশি উন্নত ড্রাইভিং স্কুল স্থাপন, ড্রাইভিং সিমুলেটর প্রযুক্তি ব্যবহার করে চালকদের আবাসিক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করলে দূর্ঘটনার হার কমবে।
বছরে সড়ক দূর্ঘটনায় প্রাণহানি ৫ হাজার, ক্ষতি ৪০ হাজার কোটি টাকা
পূর্ববর্তী পোস্ট