দেশের খবর: নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনরত যেসব শিক্ষার্থীকে আটক করা হয়েছে তাদের নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানিয়েছেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যরা। বুধবার (৮ আগস্ট) রাজধানীর সেগুনবাগিচায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের সঙ্গে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন কর্তৃপক্ষের মতবিনিময় সভায় এ দাবি জানিয়েছেন উপাচার্যরা।
তবে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, ‘আমরা কাউকে মুক্তি দেওয়ার অধিকার রাখি না। ছাত্ররা যদি প্রকৃত অর্থেই অপরাধ করেন, আইন লঙ্ঘন করেন, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তবে কেউ যদি নিরপরাধ হয়, তা প্রমাণিত হলে সে মুক্তি পাবে।’
এই মতবিনিময় সভায় দেশের ১০৩ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সদস্য এবং কোনও কোনও বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের অনুপস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালগুলোর উপ-উপাচার্য, রেজিস্ট্রাররা উপস্থিত ছিলেন। মতবিনিময় সভায় সভাপতিত্ব করেন ইউজিসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক আব্দুল মান্নান।
সভায় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উপাচার্যরা বলেন, ‘কুর্মিটোলায় দুই শিক্ষার্থী বাসচাপায় নিহত হওয়ার পর একযোগে রাস্তায় নেমেছিল স্কুল ও কলেজ পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা। প্রথমদিকে আমাদের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নামেনি। একদম শেষ দিকে তারা ওই আন্দোলনে যোগ দিয়েছে। আমরা চেষ্টা করেছি তাদের নিয়ন্ত্রণ করার। নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছি বলেই প্রথমদিকে তারা সক্রিয় হয়নি। কিন্তু গত ৬ আগস্ট তাদের কোনও একটি পক্ষ ব্যবহার করেছে। তাদের প্রভাবিত করেছে, এর ভেতরে তৃতীয় পক্ষ ঢুকে গিয়েছে। তখনও আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করেছি ফিরিয়ে আনার। শক্ত অবস্থানে গিয়েছি। বাধ্য হয়ে কেউ কেউ তৎক্ষণাৎ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস পরীক্ষা স্থগিত করেছে। কারণ, তারা বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে পারে। তাছাড়া পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে উত্তেজিত ছাত্রদের সঙ্গে দফায় দফায় আলোচনা করা হয়। পুলিশের সঙ্গেও যোগাযোগ করা হয়, যেন তারা শিক্ষার্থীদের ওপর অ্যাগ্রেসিভ না হয়।’
আটক শিক্ষার্থীদের মুক্তির দাবি জানিয়ে ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটির উপাচার্য আব্দুল মান্নান বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা যাই করেছে তাদের সাধারণ ক্ষমা করা উচিত। কারণ, পরিস্থিতি কোনও না কোনও কারণেই তো সৃষ্টি হয়েছে। তাছাড়া নতুন করে কোনও ইস্যু তৈরি করে, সেই সুযোগ দেওয়া ঠিক হবে না।’ এ ইস্যুতে পুলিশে আটক সব শিক্ষার্থীর মুক্তির ব্যবস্থা করতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ জানান তিনি।
প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আব্দুল হান্নান চৌধুরী বলেন, ‘বনানীতে প্রাইম এশিয়াসহ বেশ কিছু বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। আমরা অনেক চেষ্টা করে ছাত্রদের নিয়ন্ত্রণ করেছি। বনানীতে কোনও বিশৃঙ্খলা হয়নি। আমরা ক্লাস পরীক্ষা চালু রেখেছিলাম। এ ধরণের ঘটনা ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ না করে ক্লাস চালু রাখা উচিৎ। যাতে শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে না গিয়ে ক্লাসে ব্যস্ত থাকে। যদি বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে দেওয়া হয় তবে আন্দোলন তীব্র হয়ে উঠতে পারে।
আব্দুল হান্নান চৌধুরি বলেন, ‘আমরা জানতে পেরেছি আগের কোনও অজ্ঞাত মামলায় আটক শিক্ষার্থীদের ঢুকিয়ে দেওয়া হচ্ছে। আমরা চাই, যা হবার হয়েছে, যেহেতু এখন পরিস্থিতি শান্ত, ফলে শিক্ষার্থীদের নিঃশর্ত মুক্তি দেওয়া হোক।’
হামদর্দ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বলেন, ‘আমরা নানাভাবে এমন পরিস্থিতির মধ্যে শিক্ষার্থীদের শান্ত রাখতে সক্ষম হয়েছি। শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে যুক্ত হতে চাইলেও সঠিক বিষয়টি শিক্ষার্থীদের বোঝানোর চেষ্টা করেছি। যার কারণে আমাদের শিক্ষার্থীরা আর ক্যাম্পাস ছেড়ে বাইরে যায়নি।’ পুলিশের হাতে আটক হওয়া শিক্ষার্থীদের মুক্তির দাবি জানান তিনি।
উত্তরা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ উপাচার্য ইয়াসমিন আরা রেখা বলেন, ‘বেশিরভাগ শিক্ষার্থীরা না বুঝেই আন্দোলনে যুক্ত হয়। শিক্ষকরা যদি শিক্ষার্থীদের সামনে গিয়ে দাঁড়ায় এবং তাদের বোঝানোর চেষ্টা করেন তবে শিক্ষার্থীরা আর আন্দোলনে যুক্ত হয় না। তাই তিনি শিক্ষকদের তৎপর থাকার পরার্মশ দেন।’
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শেখ কবির বলেন, ‘৬ আগস্ট বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে যা ঘটেছে তা অনেক জটিল ছিল, তার মাধ্যমে আমরা শিখেছি। বিভিন্নভাবে আমরা শিক্ষার্থীদের আন্দোলন থেকে বিরত রাখতে সক্ষম হয়েছি। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আমি সার্বক্ষণিক খোঁজ নিয়েছি, পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করেছি, ছাত্রদের শান্ত করার চেষ্টা করেছি। সম্মলিতভাবে কাজ করলে সুবিধা পাওয়া যায়।’ তাই যেকোনও সমস্যাতে অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পরামর্শ দিয়েছি।’সভায় শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, ‘স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের রাস্তায় দাঁড়িয়ে আন্দোলন যৌক্তিক ছিল। আমরা তাদের এ দাবির সমর্থন করি। আমাদের সমাজ ও রাষ্ট্রের যেসব সমস্যা তা তারা চোখে আঙুল দিয়ে আমাদের দেখিয়ে দিয়েছে। যৌক্তিক বলেই প্রধানমন্ত্রী শিক্ষার্থীদের ৯ দফা দাবি মেনে নিয়েছেন। বর্তমানে তা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। নতুন সড়ক আইন করা হয়েছে। তাই আর ছাত্রদের রাস্তায় থাকার কোনও অবকাশ নেই।’
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘আমরা স্কুল-কলেজ শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফেরাতে রাজধানীর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সব প্রধানদের নিয়ে মতবিনিময় সভা করেছি। এরপর আর তারা রাস্তায় না নামলেও এখন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নামছেন। তৃতীয় পক্ষ উসকে দিয়েছে, সুবিধা নিতে চাইছে। তাই আন্দোলনের ভয়ে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ রাখবেন না। এতে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে।’ তিনি বলেন, ‘উপাচার্যরা অনকেই বলেছেন, আটক ছাত্রদেরকে মুক্তি দিতে। কিন্তু আমরা কাউকে মুক্তি দেওয়ার অধিকার রাখি না। ছাত্ররা যদি প্রকৃত অর্থেই অপরাধ করেন, আইন লঙ্ঘন করেন, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে আইশৃঙ্খলাবাহিনী। তবে কেউ যদি নিরাপরাধ প্রমাণিত হয় তবে সে মুক্তি পাবে।’
মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা সচিব সোহরাব হোসেন বলেন, ‘সঠিক তথ্যের মাধ্যমে প্রতিবাদ করা দরকার, মিথ্যা গুজবে বিচার বিশ্লেষণ না করে প্রতিবাদ কারা উচিৎ নয়। কোনও শিক্ষার্থী যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেটিকে গুরুত্ব দিতে আমি পুলিশ প্রধানের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। এ বিষয়ে আমরাও সজাগ রয়েছি।’
আটক শিক্ষার্থীদের মুক্তির দাবি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্যদের
পূর্ববর্তী পোস্ট