দেশের খবর: ঢাকাসহ সারাদেশে সড়কে প্রতিদিনই ঝরছে প্রাণ। ওভারটেকিং ও অসুস্থ প্রতিযোগিতার পাশপাশি চালকের অদক্ষতা এসব দুর্ঘটনার জন্য বেশি দায়ী। অধিকাংশ চালকেরই নেই কোনো প্রাতিষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ। বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট করপোরেশন (বিআরটিসি) মনে করছে চালকের অদক্ষতা, যান্ত্রিক ত্রুটি, চালক ও পথচারীদের অসাবধানতা প্রভৃতি কারণে এসব সড়ক দুর্ঘটনা ঘটছে।
এসব বিবেচনায় দক্ষ গাড়িচালক তৈরিতে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে অতিরিক্ত বরাদ্দ চেয়ে পরিকল্পনা কমিশনে বুধবার (৮) চিঠি দিয়েছে বিআরটিসি।
‘দক্ষ চালক তৈরির লক্ষ্যে প্রশিক্ষণ প্রদানের জন্য বিআরটিসি’র তিনটি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট, ১৭টি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র আধুনিকায়ন ও শক্তিশালীকরণ’ প্রকল্পের আওতায় অতিরিক্ত ১২ কোটি ৬ লাখ টাকা চাওয়া হয়েছে। অথচ চলতি এডিপিতে প্রকল্পের আওতায় বরাদ্দ ছিল মাত্র ৩ কোটি ১৩ লাখ টাকা। ফলে এই প্রকল্পে সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) মোট বরাদ্দ দাঁড়াবে ১৫ কোটি ১৯ লাখ টাকা। সম্প্রতি বিভিন্ন স্থানে সড়ক দুর্ঘটনার কথা উল্লেখ করে প্রকল্পটি আরও গুরুত্ব দিয়েছে সরকার।
অনুমোদিত প্রকল্পের মোট ব্যয় ১৫ কোটি ১৯ লাখ টাকা। অথচ প্রকল্পের আওতায় বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে মাত্র ৩ কোটি ১৩ লাখ টাকা। এ স্বল্প বরাদ্দ দিয়ে প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে না বলে জানায় বিআরটিসি।
বিআরটিসির ম্যানেজার (পরিকল্পনা) আবু বকর সিদ্দিক বলেন, পাঁচ বছরে এক লাখ দক্ষ চালক তৈরি করা হবে। এর মধ্যে বিআরটিসি তৈরি করবে ৩৬ হাজার। এই লক্ষ্যে আমরা একটি প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়ন করছি। প্রকল্পের মোট ব্যয় ১৫ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। কিন্তু আমরা এক টাকাও বরাদ্দ পাইনি। বরাদ্দ না পেলে কীভাবে কাজ করবো। সেজন্য জরুরিভিত্তিতে আমরা বরাদ্দ চেয়েছি। প্রকল্পের আওতায় আমরা অর্থব্যয় করতে পারিনি। ৩ কোটি ১৩ লাখ টাকা দিয়ে কাজ করাও সম্ভব না।
বিআরটিসি, জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি) এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ের স্কিল ফর এমপ্লয়মেন্ট ইনভেস্টমেন্ট প্রোগ্রাম (সেইফ) সমন্বিতভাবে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে। বিআরটিসির তিনটি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট ও ১৭টি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। প্রকল্পের টাকায় এসব প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউশন ও কেন্দ্রগুলোর উন্নয়ন করা হবে। পাশাপাশি প্রশিক্ষণের জন্য গাড়িও কেনা হবে। বিএমইটি প্রশিক্ষণ দেবে ৩২ হাজার জনকে। আর বাকি ৩২ হাজার জনকে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।
বেসরকারিখাতের প্রশিক্ষণের মূল দায়িত্বে থাকবে সেইফ। বিটিআরসি ও বিএমইটির প্রশিক্ষণের তদারকিও করবে স্কিলস ফর এমপ্লয়মেন্ট ইনভেস্টমেন্ট প্রোগ্রাম (সেইফ)। অচিরেই সেইফের সঙ্গে এ দুই সংস্থা সমঝোতা স্মারক সই করবে। এসব কাজ বাস্তবায়ন করতে অতিরিক্ত বরাদ্দের প্রয়োজন বলে মনে করে বিআরটিসি।
প্রকল্পের আওতায় চলতি সময় থেকে ২০২০ সালের জুনের মধ্যে পর্যায়ক্রমে এক লাখ দক্ষ চালক তৈরি করা হবে। প্রকল্পটি যদিও ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে বরাদ্দহীন অননুমোদিত নতুন প্রকল্প তালিকায় অন্তর্ভুক্ত নেই। এজন্য পরিকল্পনামন্ত্রীর অনুমোদন চেয়েছে বিটিআরসি।
প্রশিক্ষিত চালকদের একটি বড় অংশের জন্য বিদেশে কর্মসংস্থানের উদ্যোগও নেওয়া হবে। এজন্য তাদের ইংরেজি ও আরবি ভাষার প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। এছাড়া নারী চালকদেরও প্রশিক্ষণের আওতায় আনার লক্ষ্য রয়েছে। বর্তমানে বিআরটিসির তিনটি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট ও ১৭টি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র রয়েছে। এগুলো বর্তমানে জরাজীর্ণ ও ভঙ্গুর অবস্থায়। এসব কেন্দ্রে প্রশিক্ষণের কোনো আধুনিক উপকরণও নেই।
বরাদ্দ পেলে বিআরটিসির নিজস্ব জনবলের মাধ্যমে গাজীপুর, মিরপুর, তেজগাঁও, জোয়ার সাহারা, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী, মানিকগঞ্জ, টুঙ্গীপাড়া, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, সিলেট, দিনাজপুর, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, পাবনা, খুলনা, যশোর, ঝিনাইদহ ও বরিশালের প্রশিক্ষণকেন্দ্রগুলোতে এ প্রশিক্ষণের আয়োজন করা হবে।
দক্ষ চালক তৈরিতে জরুরি বরাদ্দ চায় বিআরটিসি
পূর্ববর্তী পোস্ট