দেশের খবর: ঈদে ঘরে ফেরার প্রস্তুতি অনেকটা আগে ভাগেই। কারণ এবারে ছুটি বেশি হওয়ায় এমন প্রস্তুতির কথা জানিয়েছেন অনেকেই। তাইতো ঘরে ফেরা মানুষের মূল টেনশন টিকেট। প্রিয়জনের সানিধ্য পেতে হলে সবার আগে টিকেট নিশ্চিত করা চাই। সবচেয়ে বড় অগ্রিম ঝক্কিই হল টিকেট পাওয়া। ট্রেন ও বাসের টিকেট সংগ্রহে রীতিমতো যুদ্ধ চলছে। ২৪ ঘন্টা লাইনে দাঁড়িয়ে কাঙ্খিত টিকেট না পাওয়ার অভিযোগ করেছেন অনেকে। আবার বাসের টিকেটের জন্য ছুটির দিনে দীর্ঘ লাইন দেখা গেছে কল্যাণপুর ও গাবতলী এলাকায়।
কাউন্টার থেকে টিকেট বিক্রি শুরু হয় সকাল ৮টায়। কিন্তু সোনার হরিন টিকেট পেতে আগের দিন রাত থেকেই লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন অনেকেই। রাত যত গভীর হয়, ততো লাইনের পরিধি বাড়ে। সকাল ১০টা পর্যন্ত লোকে লোকারণ্য কমলাপুর। প্ল্যাট ফরম ছাপিয়ে জন স্রোত ঠেকেছে রাস্তা পর্যন্ত। কোন লাইন কোথায় শেষ হয়েছে তা দেখার জন্যও বেগ পেতে হবে। পরিস্থিতি ঠিক এরকমই। টিকেট সংগ্রহে এত মানুষের ভীড় কমই হয়, খোদ এমন কথা বলছেন টিকেট বিক্রির সঙ্গে যুক্ত অনেকেই। কমলাপুরে ২৬টি কাউন্টার থেকে একযোগে চলেছে টিকেট বিক্রি। শুক্রবার তৃতীয় দিনে ১৯ আগস্টের টিকেট বিক্রি হয়েছে।
যারা সর্বোচ্চ ২৪ ঘন্টা পরিশ্রম করে টিকেট সংগ্রহ করতে পেরেছেন তারা তো প্রশান্তির হাসি মুখে নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন। যারা পাননি তাদের ঘরে ফেরার দুঃশ্চিন্তা রয়েই গেছে। সবচেয়ে মজার বিষয় হলো নারীদের দুটি কাউন্টারেও হাজার ছাপিয়ে মানুষের উপস্থিতি। তবে সবার অভিযোগ টিকেট পেতে ধীরগতি। আর প্রতি বছরে টিকেট পেতে ভোগান্তি নিরসনে করনীয় নিয়ে আলোচনা তো আছেই। অর্থাত বছরের পর বছর প্রায় নির্দিষ্ট কাউন্টার থেকেই টিকেট বিক্রি হচ্ছে। অথচ প্রতি বছরই টিকেটের জন্য লোক সমাগম বাড়ছে অনেক। সে তুলনায় কাউন্টার বাড়ানো হচ্ছে না। এরমধ্যে ৬৫ভাগ টিকেট সাধারণ যাত্রীদের জন্য অপ্রতুল বলা হচ্ছে গ্রাহকদের পক্ষ থেকে।
এ বিষয়ে রেলওয়ের মহাপরিচালক মো. আমজাদ হোসেনের বলেন, প্রতি বছর টিকেট প্রত্যাশীর সংখ্যা বাড়ছে। একারণে জনভোগান্তি বাড়ছে এটা সত্য। কিন্তু আমরা মানুষের কষ্ট কমাতে প্রতি বছরই সর্বোচ্চ সেবা নিশ্চিত করার চেষ্টা করি। আগে নারীদের জন্য পৃথক কোন বুথ ছিল না। কয়েক বছর ধরে নারীদের জন্য পৃথক বুথ স্থাপন করা হয়েছে। জনভোগান্তি নিরসনে আরো ৫০টি বুথ বাড়ানোর দাবি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বুথ বাড়াতে হলে কম্পিউটার, পৃথক জনবল, সার্ভার আপডেট সহ নানা প্রক্রিয়া রয়েছে। তবুও আমরা আগামী বছর আরো ভাল সেবা দেয়ার চেষ্টা করবো। যেন মানুষের ভোগান্তি কম হয়।
এদিকে সাধারণ যাত্রীরা বলছেন,ঈদ উপলক্ষে চার ভাগে টিকেট বিক্রি ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করার। এরমধ্যে পূর্ব, পশ্চিম, উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চল। কমলাপুরে নারায়নঞ্জ রেল স্টেশন প্ল্যাট ফরমে অন্তত একটি অঞ্চলের টিকেট ব্যবস্থা নিশ্চিত করা গেলে মূল প্ল্যট ফরমে ভীড় কমবে। এছাড়াও ঈদকে কেন্দ্র করে বিশেষ ব্যবস্থায় আরো বুথ বাড়ানো সময়ের দাবি। অর্থাত চার অঞ্চলের টিকেট বুথ পৃথক করে বিক্রির দাবি টিকেট প্রত্যাশীদের।
শুক্রবার সবচেয়ে বেশি ভিড় ছিল উত্তরবঙ্গগামী ট্রেনগুলোর কাউন্টারের সামনে। বারবার হইচই হয়েছে এসি চেয়ার ও কেবিনের টিকেট নিয়ে। অনেক কাউন্টার থেকে বেলা ১২টার আগেই জানানো হয়েছে এসি চেয়ার ও কেবিন না থাকার কথা। রাজশাহীর যাত্রী কাসেম জানালেন, রাত ১টায় এসেও কেবিন ও এসি চেয়ারের টিকেট পাইনি। আবার নারী কাউন্টারে ভোর পাঁচটায় দাড়িয়ে রাজশাহীর টিকেট সংগ্রহ করেছেন দিবানিতা। তাই কারো মাুখে হাসি আর কারো মুখে ছিল কষ্টের ছাপ।
বেলা সাড়ে ১০টার দিকে নারী কাউন্টারের সামনে গিয়ে দেখা গেছে, ১৭ এবং ১৮ নম্বর কাউন্টার থেকে নারীদের টিকেট দেয়ার কথা থাকলেও ১৮ নম্বর কাউন্টারটি বন্ধ। আর ১৭ নম্বর কাউন্টার খোলা থাকলেও সেখানে ধীরগতিতে টিকেট বিক্রির অভিযোগ করেন কয়েকজন। টিকেট বিক্রি শুরু হওয়ার পর সাড়ে ১০টা পর্যন্ত ওই কাউন্টার থেকে ৭০ জনকে টিকেট দেয়া হয়। ততক্ষণে অপেক্ষায় থাকা নারীদের লাইন আরও দীর্ঘ হয়েছে। প্রায় দেড় ঘন্টার বেশি সময় কাউন্টার বন্ধ থাকায় এ নিয়ে কমলাপুর স্টেশনজুড়ে হইচই দেখা দেয়। পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়ার চেষ্টা করে। তারা কাউন্টার মাস্টারদের পক্ষ নিয়ে যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলায় বাক বিতন্ডার সৃষ্টি হয়।
এসিব বিষয়ে কমলাপুরের স্টেশন ম্যানেজার সিতাংশু চক্রবর্ত্তী বলেন, শুক্রবার ৩৫টি আন্তঃনগর ট্রেনের ২৬ হাজার ৮৯৫টি টিকেট ছাড়া হয়েছে। যাত্রীদের চাহিদা অনুযায়ী টিকেট দেয়ার চেষ্টা করছেন তারা। তিনি জানান, নারীদের জন্য মোট ৩টা কাউন্টার। একটা চলতি কাউন্টার থেকেও নারীদের টিকেট দেয়া হয়। এ কারণে অগ্রিম টিকেটের দুটো কাউন্টারের একটা বন্ধ রাখা হয়েছিল। চাহিদা বেশি থাকলে সেটা থেকেও টিকেট দেয়া হয়। কিন্তু প্রশ্ন হলো টিকেট কিনতে যখন শত-শত মানুষ লাইনে দাঁড়িয়ে তখন কেন কাউন্টার বন্ধ করে দেয়া হল। স্টেশন ম্যানেজার এ ব্যাপারে যে যুক্তি উপস্থাপন করলেন তার সঙ্গে বাস্তবতার কোন মিল ছিল না।
আজ পাওয়া যাবে ২০ আগস্টের টিকেট আর ১২ আগস্ট মিলবে ২১ আগস্টের টিকেট। এই দিনগুলোতে ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টেশন থেকে বিশেষ ব্যবস্থাপনায় সকাল ৮টা থেকে টিকেট বিক্রি হবে।
বরাবরের মত এবারও মোট টিকেটের ৬৫ শতাংশ দেয়া হচ্ছে কাউন্টার থেকে। বাকি ৩৫ শতাংশের ২৫ শতাংশ অনলাইন ও মোবাইলে। ৫ শতাংশ ভিআইপি ছাড়াও রেল কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য বরাদ্দ রয়েছে ৫ শতাংশ। এদিকে ১৫ আগস্ট থেকে শুরু হবে ঈদ ফেরত যাত্রীদের জন্য ট্রেনের অগ্রিম টিকেট বিক্রি। ঈদ ফেরত অগ্রিম টিকেট রাজশাহী, খুলনা, রংপুর, দিনাজপুর ও লালমনিহাট স্টেশন থেকে বিশেষ ব্যবস্থাপনায় বিক্রি শুরু হবে। ফিরতি টিকেট ১৫ আগস্টে পাওয়া যাবে ২৪ আগস্টের টিকেট। একইভাবে ১৬,১৭, ১৮,১৯ আগস্ট যথাক্রমে পাওয়া যাবে ২৫,২৬,২৭,২৮ আগস্টের টিকেট। টিকেট বিক্রি শুরু হবে সকাল ৮টায়।
বাংলাদেশ রেলওয়েতে প্রতিদিন ২ লাখ ৬০ হাজার যাত্রী চলাচল করলেও ঈদুল আজহা উপলক্ষে দৈনিক ৩ লাখ যাত্রী চলাচল করার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছিলেন রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। সেই সঙ্গে সুষ্ঠু ও নিরাপদে ট্রেন চলাচলের সুবিধার্থে ট্রেন পরিচালনার সঙ্গে সম্পৃক্ত রেলওয়ে কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সকল প্রকার ছুটি বাতিল করা হবে।