এম. বেলাল হোসাইন/আমির হোসেন খান চৌধুরী: ভোমরা সীমান্তে গরুর খাটালে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। ভোমরা সীমান্তের পদ্ম শাখরা এলাকায় সাতক্ষীরা ৩৮ বিজিবি’র অধিনায়ক কর্তৃক নির্ধারিত টাকার পরিবর্তে খাটাল মালিকরা আদায় করছেন অতিরিক্ত টাকা। এ অতিরিক্ত টাকা গুণতে গিয়ে নিঃস্ব হচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। খাটাল মালিকদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছেন তারা। এ ধরনের অভিযোগ পদ্ম শাখরা এলাকার গরু ব্যবসায়ীদের। সূত্রে জানাগেছে, বর্তমান সাতক্ষীরা ৩৮ বিজিবি’র অধিনায়ক লে:কর্ণেল আরমান ভারত থেকে আসা গরুর খাটাল খরচ নির্ধারণ করেছেন ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকা। কিন্তু পদ্মশাখরার খাটাল কর্তৃপক্ষ ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে আদায় করছেন মোটা অংকের টাকা। টাকা দিতে অস্বীকার করলে তাদের মারপিটও করা হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। ওই খাটালের মালিক জেলা আওয়ামীলীগের একজন প্রভাবশালী নেতা (হাড়দ্দহা এলাকার মৃত বাদেল গাজীর ছেলে শহীদুল ইসলাম)। তিনি বিজিবি’র অধিনায়কের নির্দেশ অমান্য করে ব্যবসায়ীদের নিকট থেকে এ টাকা আদায় করছেন। সূত্র জানায়, বিজিবি কর্তৃক নির্ধারিত গরুপ্রতি ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকার পরিবর্তে ২৫০০ থেকে ২৬০০ টাকা আদায় করছেন তিনি। আর এসব টাকা আদায় করার জন্য তিনি কয়েক জন ব্যক্তিকে নিয়োগও দিয়েছেন। তাদের মধ্যে পদ্ম শাখরা গ্রামের আব্দুর রশিদের ছেলে জাকির ও মুনসুর আলীর ছেলে মন্টুসহ কয়েজন। তারা ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে জোরপূর্বক এসব টাকায় আদায় করে থাকেন। টাকা দিতে অস্বীকার করলে মারপিটও করেন তারা। প্রতিদিন এই খাটালে ৫০টি গরু করিডোরের মাধ্যমে ছাড় করা হয়। এতে প্রায় ১ লক্ষ ২৫ হাজার টাকা আদায় হয় ওই খাটালে। যার ৪০% নেন খাটাল মালিক (শহীদুল), ৩০% ঢাকা প্রবাসীর পকেটে, আর বাকি ৩০% যায় খাটালে কর্মরতদের পকেটে। ওই খাটালে জাকির ও মন্টুর কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা। অপরদিকে প্রতিটি খাটালে ৫০টি গরু ওঠার কথা রয়েছে। কিন্তু বিজিবি কর্তৃপক্ষের চোখ ফাঁকি দিয়ে করিডোর ছাড়াও প্রতিদিন প্রায় ১০ থেকে ১৫টি গরু ছাড় করানো হয় ওই খাটালে। সূত্র আরো জানায়, বিজিবি কর্তৃপক্ষের কঠোর নির্দেশনা রয়েছে বাংলাদেশি কোন গরু রাখাল ভারতে গরু আনতে যাবে না। কিন্তু ওই খাটাল কর্তৃপক্ষ স্থানীয় রাখালদের মোটা অংকের টাকার লোভ দেখিয়ে ভারতে গরু আনতে পাঠাচ্ছেন। এতে করে অকালে ঝরে যাচ্ছে অনেক তাজা প্রাণ। এছাড়া পদ্ম শাখরা এলাকার ঘাট দিয়ে গরু আনার অনুমতি থাকলেও গরুর পাশাপাশি আনা হচ্ছে ফেন্সিডিল, ইয়াবাসহ বিভিন্ন নেশা জাতীয় দ্রব্য। আর বাংলাদেশ থেকে পাঠানো হচ্ছে মাগুর মাছের বা””া, তেলাপিয়া ও প্যাংগাস মাছ। আর এসবের মদদ দিচ্ছেন জেলা আওয়ামীলীগের প্রভাবশালী ওই নেতা। এবিষয়ে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ঈসাইল গাজী বলেন, ওই খাটালে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের অভিযোগ আমার কাছেও এসেছে। আমি ইতোমধ্যে এ বিষয়ে বিভিন্ন দপ্তরে কথাও বলেছি। আশা করছি দ্রুত এর সমাধান হয়ে যাবে। এ ব্যাপারে পদ্ম শাখরা বিওপি ক্যাম্পের নায়েক সুবেদার ওমর ফারুক বলেন, আমি যত দুর শুনেছি এখানে গরু প্রতি ২৫০০ টাকা নেওয়া হয়। তবে এর থেকে ১৫০০ টাকা দেওয়া হয় ভারতীয় রাখাল কে। যিনি গরু ভারত থেকে বাংলাদেশ পার করে দেয়। আর বেড়িবাধের উপর থেকে বাংলাদেশি রাখালরা খাটাল পর্যন্ত এনে দেওয়ার জন্য নেয় ৫০ টাকা, গরু করিডোর করতে খরচ হয় ৫০০ টাকা। আর বাকি ৪৫০ টাকা খাটালের কর্মচারীদের মধ্যে বন্টন করা হয়। এব্যাপারে সাতক্ষীরা ৩৮ বিজিবি’র অধিনায়ক লে: কর্ণেল আরমান এর সাথে সোমবার সন্ধ্যায় যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ না করায় তা সম্ভব হয়নি। অন্যদিকে ব্যবসায়ীরা জানান, প্রতিটি গরুর পিছনে ২৫০০ থেকে ২৬০০ টাকা খরচ দিয়ে ব্যবসা অনেক কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। অবিলম্বে খাটাল খরচ না কমানো হলে এখানে ব্যবস্থা অসম্ভব হয়ে পড়বে। এ বিষয়ে তারা ৩৮ বিজিবি’র অধিকায়নের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
পূর্ববর্তী পোস্ট