অনলাইন ডেস্ক: যক্তিত্ব একটি সুবিশাল ধারনা। সুস্পষ্টভাবে একে সংজ্ঞায়িত করা কঠিন। তবে মনোবিজ্ঞানের ভাষায়, ব্যক্তিত্ব হচ্ছে কোনো একজনের মানসিক প্রক্রিয়া ও আচরণের এমন এক স্বতন্ত্র ধরন, ‘যা কেবল তার মধ্যেই বিদ্যমান থাকবে যেটি কিনা অন্যদের কাছ থেকে সেই ব্যক্তিকে আলাদা করবে।’ কমবেশি আমরা সবাই আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্বের অধিকারী হতে চাই।
এ বিষয়ে ব্রায়ান ট্রেসি বলেছেন ‘Positive expectations are the mark of the superior personality.’ আসলে জীবনে সফল হওয়ার জন্য এর অপরিহার্যতা অনেক বেশি। চলুন জেনে নেয়া যাক ইতিবাচক ব্যক্তিত্ব ও চিন্তাশক্তি গঠনের কিছু কার্যকর পদ্ধতি।
১. সুন্দর পোশাক নির্বাচন করুন: কথায় বলা হয়, ‘আগে দর্শণধারী পরে গুণবিচারী।’ তাই মানুষের কাছে গ্রহনযোগ্য ও আকর্ষণীয় হতে হলে সুন্দর পোশাক পরিধানের গুরুত্ব অপরিসীম। এমন নয় যে, এর জন্য আপনাকে অনেক দামী বা অভিজাত পোশাক কিনতে হবে। আসলে সিম্পল জামা-কাপড়কেও যদি পরিষ্কার করে আয়রন করেন তো তার মাহাত্ন্যই আলাদা হয়ে যাবে। সেইসাথে যদি বর্তমান ট্রেন্ড ও ফ্যাশনের সাথে সাযুজ্য রেখে নিজের একটা পরিমার্জিত লুক নির্ধারণ করতে পারেন তাহলে তো কথাই নেই।
২. কথা বলায় পরিমিত হোন: খুব বেশি কথা বলা যেমন অনুচিত, তেমনি একদম নির্বাক হওয়াও কোনো কাজের কথা নয়। কর্মক্ষেত্র থেকে শুরু করে সব জায়গাতেই একটা ভারসাম্য রক্ষা করুন। গুছিয়ে সুন্দর করে নিজেকে উপস্থাপন করতে জানলে, মানুষের সাথে আপনার কমিউনিকেশন স্কিলটাও বেড়ে যাবে অনেকগুণ।
৩. অর্জন করুন আত্নবিশ্বাস: প্রতি পদক্ষেপেই জীবনে আত্নবিশ্বাসী হতে হবে। সমস্যার সামনে বুক চিতিয়ে লড়াই করা শিখতে হবে আপনাকে। মনে রাখবেন, জীবনে সমস্যা থাকবেই। তাই তাকে এড়িয়ে না গিয়ে সামনে থেকে আত্নবিশ্বাস নিয়ে মোকাবেলা করাই বুদ্ধিমানের কাজ। যেসব বন্ধু বা আত্নীয়-স্বজন আপনাকে ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ বা তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে, তাদের বক্তব্যগুলো এড়িয়ে চলুন।
৪. ইতিবাচক থাকুন সব বিষয়ে: অনেক নেতিবাচক বিষয় সামনে আসবে আপনার। হয়তো তা আপনাকে মানসিকভাবে দুর্বলও করে দিতে পারে। তবে ভেঙ্গে পড়বেন না। সংযম ধরে রেখে নিজের কাজ ও সাধনায় স্থির থাকুন। মনে রাখবেন সবকিছুরই একটা পজেটিভ দিক আছে। সেটা খুঁজে ইতিবাচক থাকুন, অবশ্যই সাফল্য আসবে। ইতিবাচক মানসিকতা থাকলে আপনার ব্যক্তিত্ব সবাইকে আকর্ষণ করবে, এতে সন্দেহ নেই।
৫. অনুশীলন করুন চিন্তাশীলতার: আপনার চারপাশ, আপনার সমাজ ও রাষ্ট্রে প্রতিনিয়তম অনেক কিছু ঘটছে। জ্ঞান ও যুক্তির আলোকে সেগুলো পর্যালোচনা করার অভ্যেস গড়ে তুলুন। কেবল নিজেকে নিয়ে ভাবলেই চলবেনা। হতে হবে আরো উদার ও সর্বজনীন। এতে করে আপনার সচেতনতা ও চিন্তার পরিধি বিস্তৃত হবে। মানুষ হিসেবে গড়পড়তা লোকজনের চেয়ে আপনার ব্যক্তিত্ব অনেক মননশীলতা ও প্রজ্ঞায় পরিপূর্ণ হয়ে উঠবে।
৬. প্রচুর বই পড়ুন: অবসরে যেটুকু সময় পান, তা বই পড়ার পেছনে ব্যয় করুন। জীবন ও জগৎতে বুঝতে হলে চাই বিপুল জ্ঞান। আর সেটা সরবরাহ করবে বই। যত বেশি পড়াশোনা করবেন, আপনার ব্যক্তিত্ব ততো বেশি মজবুত ও শক্তিশালী হবে। সেইসাথে পাল্টে যাবে জীবনবোধ ও দৃষ্টিভঙ্গী। বই থেকে লব্ধ জ্ঞান প্রয়োগ করতে পারবেন জীবনের সামগ্রিক প্রেক্ষাপটে। তাই সাহিত্য, ইতিহাস, দর্শন, বিজ্ঞান, রাজনীতি, ধর্ম সককিছু নিয়েই চালিয়ে যান আপনার পড়াশোনা।
৭. অনুসরন করুন মহৎ ব্যক্তিদের: মণিষী ও বড় মাপের মানুষদের জীবন ও কর্মপদ্ধতি অনুসরন করার চেষ্টা করুন। তাদের মত অত বিশাল কিছু হতে না পারলেও, আপনার চিন্তাশক্তি ও ব্যক্তিত্বের ইতিবাচক পরিবর্তন অবশ্যই আসবে। মহানবী (সাঃ) থেকে যীশুখ্রিস্ট, কিংবা গৌতম বুদ্ধ বা স্বামী বিবেকানন্দ যে কেউ হতে পারে আপনার পছন্দের ব্যক্তিত্ব। সেই সাথে এ যুগের নেলসন ম্যান্ডেলা, স্টিভ জবস বা অন্য যেকোনো সফল মানুষকে ফলো করতে পারেন নিজের ব্যক্তিত্বের উন্নতির জন্য।