খেলার খবর: শরীর ভেঙে পড়তে চাইছে; কিন্তু সংযুক্ত আরব আমিরাতের শরীরক্ষয়ী গরমেও তবু মনের জোর দিয়ে টিকে থাকার চেষ্টা বাংলাদেশ দলের। সেই চেষ্টার সাফল্যেই ফাইনালের পথ খোলা গেছে। আজ আবুধাবিতে পাকিস্তানের বিপক্ষে অঘোষিত সেমিফাইনাল জিতলেই ২৮ সেপ্টেম্বরের ফাইনালে মুখোমুখি ভারতের। তার আগে মনের জোর অটুট রেখে শরীরটাও ধরে রাখার চিন্তা মাশরাফি বিন মর্তুজার, ‘শরীরের ওপর চাপ পড়ে গেলে কিছু করার থাকে না। শরীর ভেঙে পড়লে মন দিয়ে চালানো কঠিন।’
আফগানিস্তান ম্যাচের পর পাওয়া দুই দিনের বিশ্রামে চার দিনে তিনটি ম্যাচ খেলার ক্লান্তি কিছুটা কাটিয়ে ওঠা বাংলাদেশের ওয়ানডে অধিনায়ক মনের জোরটাও রাখতে চান। কারণ সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স বিবেচনায় ভারতের কাছে টানা দুই ম্যাচ হারার পরও কোনোভাবেই পাকিস্তানকে পিছিয়ে রাখতে চান না তিনি। ২০১৫-তে দেশের মাটিতে ওয়ানডে সিরিজে হোয়াইটওয়াশ করা পাকিস্তানের সঙ্গেও বিস্তর ফারাক দেখছেন এখনকার দলের, ‘ওই পাকিস্তানের চেয়ে এখনকার দল ভালো। তখন হাসান আলী বা শাদাবরা ছিল না। বোলিং আক্রমণ ভালো। ভালো ব্যাটিংও। ভারতের বিপক্ষে দুটি ম্যাচ দিয়েই বিচার করলে তো হবে না। দল হিসেবে সম্প্রতি ওরা অনেক ভালো খেলছে। ভালো দল ওরা। তবে ওরা ভালো মানেই যে আমরা ভালো খেলতে পারব না, তা তো নয়।’
নয় বলেই আজকের ম্যাচে পাকিস্তানকে ফেভারিটের তকমা দিয়েও জয়ের আকাঙ্ক্ষায় বিন্দুমাত্র ঘাটতি নেই বাংলাদেশ দলের হেড কোচ স্টিভ রোডসেরও। যদিও ভারতের কাছে টানা দুই হারে মনোবলের দিক থেকে পিছিয়ে থাকা পাকিস্তানের শোয়েব মালিক সেটি মেনে নিয়ে চাপ বাড়াতে চাইলেন না, ‘আমি কাউকে আন্ডারডগ বা ফেভারিট বলায় বিশ্বাসী নই। নির্দিষ্ট দিনে ভালো খেলেই শুধু জেতা সম্ভব।’
সেই ভালো খেলার চেষ্টায় কমতি রাখছে না বাংলাদেশও। কিন্তু নিজেদের সামর্থ্যের পুরোটাও দেওয়া যাচ্ছে না এখানকার গরমের সঙ্গে বাড়তি লড়াইটা করতে গিয়ে। তবে এই পর্যায়ে এসে সেটিকে সামনে আনার সুযোগও দেখছেন না মাশরাফি, ‘কাজটি কঠিন। কিন্তু ম্যাচ হেরে গেলে এসব বলে লাভ নেই। এবার দুটি ম্যাচ হেরেছি। হারের ধরন নিয়ে কথা হয়েছে। কিন্তু আবহাওয়া কতটা কঠিন, লোকে এসব বুঝবে না। বোঝানোর চেষ্টা করেও লাভ নেই। মূল কথা হলো, লোকে চায় খেলতে হবে এবং জিততেও হবে। আমাদের কাছেও সে রকমই প্রত্যাশা করে। কাজেই জেতার জন্যই খেলতে হবে। কিভাবে জেতা যায়, মাঠে করতে হবে সেই চেষ্টাই।’
বাংলাদেশ যখন জেতার ছক সাজাচ্ছে, তখন এখানকার কন্ডিশনে দারুণ অভ্যস্ত পাকিস্তান শিবির চেষ্টা করছে ভারতের কাছে দুটো হারের কথা ভুলে যেতে। অলরাউন্ডার শোয়েব মালিক জানালেন তেমনই, ‘এটি এখন নক আউট ম্যাচ হয়ে গেছে। আর আপনি যখন নির্দিষ্ট কোনো দলের কাছে ভালো না খেলে হারবেন, তখন ড্রেসিংরুমে অনেক নেতিবাচক কথাও উড়ে বেড়ায়। ভারতের কাছে দুটো হারকে পেছনে ফেলতে তাই আমরা একাধিক সভাও করেছি। চেষ্টা করছি সব ভুলে মাঠে নিজেদের সেরাটা দেওয়ার।’
সেরাটা দেওয়ার ক্ষেত্রে কোনো কমতি রাখতে চায় না বাংলাদেশও। সে জন্য একাদশে আজ দেখা যেতে পারে বেশ কিছু পরিবর্তনও। তামিম ইকবালের জায়গায় ওপেনিংয়ে লিটন কুমার দাশের সঙ্গী হয়ে তিন ম্যাচ খেলেও উল্লেখযোগ্য কিছু করতে না পারা নাজমুল হোসেনের আজ একাদশ থেকে ছিটকেই পড়ার কথা। স্টিভ রোডসও কাল দুবাই স্পোর্টস সিটির আইসিসি একাডেমি মাঠে দলের ঐচ্ছিক অনুশীলনের পর সেই ইঙ্গিত দিলেন, ‘দল নির্বাচনী সভায় ওর (নাজমুল) ব্যাপারেও কথা বলব আমরা।’
নাজমুলের জায়গায় যাঁকে ওপেনিংয়ে ফিরিয়ে আনা প্রায় নিশ্চিত, সেই তিনিও অনেক দিন থেকে রানে নেই। টানা ব্যর্থতায় বাদ পড়া সেই সৌম্য সরকারের আবার আছে ব্যাট হাতে পাকিস্তানকে চুরমার করার দুর্দান্ত স্মৃতিও। ২০১৫-র সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ম্যাচে তাঁর হার না মানা ১২৭ রানের ইনিংসেই পাকিস্তানের বিপক্ষে হোয়াইটওয়াশ-কাণ্ড সম্পন্ন করেছিল বাংলাদেশ। পাকিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশের সব শেষ ম্যাচ হয়ে আছে সেটিই। এর পরও দুই দলের দেখা হয়েছে এবং তাতে পাকিস্তানও জিতেছে। কিন্তু সেটি ছিল গত বছর আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফির ওয়ার্ম আপ ম্যাচ। ওই আসরেও বাজেভাবে হেরে শুরু করা পাকিস্তান কিন্তু শেষ পর্যন্ত চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারতকে উড়িয়ে দিয়েই চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। কাজেই তাদের খেলার ধরনের অনিশ্চিত চরিত্রের কথাও মাথায় রাখছে বাংলাদেশ শিবির।
নিজের সংবাদ সম্মেলনে রোডস সে কথা বারবার মনেও করিয়ে দিলেন। তাই বলে নিজেরাও বসে নেই। পাকিস্তানের বিপক্ষে সর্বশেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচের সুখস্মৃতি যদি সৌম্যকে ফর্মে ফেরাতে পারে, তাহলে টপ অর্ডারের সমস্যাও মিটে যায় অনেকটা। আফগানিস্তান ম্যাচে ৫ নম্বরে নামলেও এই ম্যাচে আবার তিনে ফিরছেন সাকিব আল হাসানও। মোহাম্মদ মিঠুনও ৫ নম্বরেই ফিরছেন। ইমরুল কায়েস থাকছেন ছয়েই। আর একাদশে আরেকটি পরিবর্তন আসাও প্রায় নিশ্চিত। বাঁহাতি স্পিনার নাজমুল ইসলামের জায়গায় তৃতীয় পেসার হিসেবে ফিরছেন রুবেল হোসেনও।
আফগানিস্তান ম্যাচে যিনি থাকলে মুস্তাফিজুর রহমানকে দিয়ে জোর করে আর বোলিং করাতে হতো না। ওই ম্যাচও এই বার্তাই দিচ্ছে যে শরীর ভেঙে পড়তে চাইলেও মনের জোর দিয়ে ঠিক চালিয়ে নিতে পারছে বাংলাদেশ।