বিদেশের খবর: শ্রীলংকার বহিষ্কৃত প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহের ডাকে রাজপথে নেমে এসেছে দেশটির জনগণ। দ্বীপরাষ্ট্রটির রাজধানী কলম্বোর কলাপেতির লিবার্টি রাউন্ডঅ্যাবাউট চত্বরে মঙ্গলবার দুপুর ১২টায় এক বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
অনুষ্ঠানে যোগ দিতে রাজপথে ছিল হাজার হাজার মানুষের ঢল। সোমবার বিক্রমাসিংহের ডাকা গণবিক্ষোভে সাড়া দিয়ে রাস্তায় নেমে এসেছেন নেতাকর্মীরা।
এছাড়া শহরের বিভিন্ন এলাকায় রাস্তা বন্ধ করে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন সমর্থকরা। রাজপথ দখলে নেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে ইউনাইটেড ন্যাশনাল পার্টি (ইউএনপি)।
এদিকে প্রেসিডেন্টের মতামত উপেক্ষা করে শুক্রবার পার্লামেন্ট অধিবেশন চালুর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন স্পিকার কারু জয়াসুরিয়া। মঙ্গলবার সব দলের নেতাদের অংশগ্রহণে বৈঠকের পর এ সিদ্ধান্তের কথা জানান তিনি। খবর শ্রীলংকা গার্ডিয়ানের।
গত শুক্রবার বিক্রমাসিংহেকে বরখাস্ত করে মাহিন্দা রাজাপাকসেকে নতুন প্রধানমন্ত্রীর শপথ দেন প্রেসিডেন্ট সিরিসেনা। পরের দিন শনিবার মন্ত্রিসভা ভেঙে দিয়ে পার্লামেন্ট স্থগিত করেন তিনি। এতে দেশটির রাজনৈতিক সংকট আরও তীব্র হয়।
সোমবার নতুন প্রধানমন্ত্রী রাজাপাকসের মন্ত্রিসভার শপথ দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট সিরিসেনা। এর আগে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন টেম্পল ট্রিসে এক সংবাদ সম্মেলনে গণবিক্ষোভের ডাক দেন বিক্রমাসিংহে। শ্রীলংকায় প্রেসিডেন্টের অসাংবিধানিক কর্মকাণ্ড রুখতে ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় এ ডাক দেন তিনি।
বিক্রমাসিংহে বলেন, ‘দেশের সংকটময় মুহূর্তে নাগরিকদের রাজনৈতিক বিভেদ ভুলে রাজপথে নামতে হবে। দেশের উত্তম ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার এ র্যালিতে সবাইকে কাঁধে কাঁধ মেলাতে হবে।’
বিক্রমাসিংহে তার বিরুদ্ধে আনা সব ধরনের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। রোববার জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে প্রেসিডেন্ট সিরিসেনা বলেন, বিক্রমাসিংহের মন্ত্রিসভার এক মন্ত্রী তাকে হত্যার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকায় বিক্রমাসিংহেকে বরখাস্ত করা হয়েছে।
গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় ২০১৫ সালের গণবিক্ষোভের কথা উল্লেখ করে বিক্রমাসিংহে বলেন, ‘দেশের গণতন্ত্র ফেরাতে, শান্তি ও সমৃদ্ধি পুনরুদ্ধারে ২০১৫ সালের ৮ জানুয়ারি ৬২ লাখ জণসংখ্যার এ দেশের সবাই এক কাতারে এসেছিল। দুর্নীতির বিরুদ্ধে আমরা র্যালি করেছিলাম, সমাবেশ করেছিল। দেশের অর্থনৈতিক উন্নতির স্বার্থে সরকারের ভণ্ডামি ও জালিয়াতির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিলাম। এখন দেশ তেমন আরেকটি সংকটের মুখে।’
বিক্রমাসিংহের এ ঘোষণার পরপরই বিক্ষোভ সমাবেশের ডাক দেন ইউএনপির সাধারণ সম্পাদক আকিলা ভিরাজ কারিয়াওয়াসাম। মঙ্গলবার সকাল থেকে নেতাকর্মীরা রাজপথে দখলে দিতে শুরু করেছে। এ সময় তাদের মাথায় ছিল দলের লোগো সংবলিত নীল রঙা ক্যাপ। প্রধানমন্ত্রী বাসভবনের আশপাশের রাস্তাগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
টেম্পল ট্রিসের সামনে মোতায়েন করা হয়েছে সেনা সদস্য। সমাবেশে প্রায় ১ লাখ সমর্থক উপস্থিত ছিলেন বলে দাবি করেছে ইউএনপি। তবে পুলিশ বলছে, ২৫ হাজারের বেশি হবে না। বিক্ষোভকে কেন্দ্র করে অতিরিক্ত আড়াই হাজার পুলিশ মোতায়েন করা হয়। মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে বিক্রমাসিংহে বলেন, ‘দেশের এ সংকট কোনো ব্যক্তিগত বিষয় নয়।
এটি রাজনৈতিক দলেরও কোনো বিষয় নয়। এ সংকট দেশের পরবর্তী প্রজন্মের জন্য ভয়ঙ্কর। শ্রীলংকার সাংবিধানিক এ অভ্যুত্থান দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলবে।’
এদিনই সবাইকে এককাতারে শামিল হওয়ার ডাক দেন তিনি। বিক্রমাসিংহে বলেন, ‘শ্রীলংকার নাগরিক হিসেবে আমাদের সংবিধান ও অধিকার রক্ষায় চলুন আমরা জোটবদ্ধ হই।’