খেলার খবর: জয়ের পথ রচনা করেছিলেন তামিম ইকবাল। বাস্তবে রূপ দিলেন সৌম্য সরকার। বিকেএসপিতে দুই বাঁহাতির ঝড়ো সেঞ্চুরির কাছে উইন্ডিজের ৩৩১ রানও কম হয়ে গেল!
বিসিবি একাদশ ৪১ ওভারে ৬ উইকেট হারিয়ে ৩১৪ রান তোলার পর আলোকস্বল্পতায় খেলা বন্ধ হলে ডাকওয়ার্থ ও লুইস মেথডে বিসিবি একাদশের জয় লেখা হয় ৫১ রানে। শুরুতে ব্যাট করে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৮ উইকেটে ৩২১ রান তোলে।
আগামী রোববার মিরপুরে ওয়ানডে সিরিজ শুরুর আগে বিকেএসপিতে টাইগার ক্রিকেটাররা প্রস্তুতি সেরেছেন দারুণ। প্রস্তুতি ম্যাচ বলেই জয়ের উদযাপন হল সাদামাটা। নিজেদের মধ্যে হাত মেলানোতেই থাকল সীমাবদ্ধ।
বৃহস্পতিবার ৭০ বলে শতক পূর্ণ করা তামিম মাইলফলক উদযাপন করেছেন কেবল ব্যাট উঁচিয়ে। তবে বিশাল ছক্কায় প্রতিপক্ষের ড্রেসিংরুমে বল ফেলে তিনঅঙ্ক ছুঁয়ে চেনা ভঙ্গিতেই শতরান উদযাপন করেছেন সৌম্য। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে বিকেএসপিতেই প্রস্তুতি ম্যাচে ১০৩ রানের অপরাজিত ইনিংসটার কপিই যেন দেখালেন একই রানে অপরাজিত থেকে।
তামিম ৭৩ বলে ১০৭ রানের ইনিংস খেলে দলীয় দুইশ পার করে সাজঘরে ফেরেন। বাকি পথ এগিয়ে নেয়া সৌম্য, ৮৩ বলে ১০৩ রান করে অপরাজিত থাকেন। তার ইনিংসে ছিল ৬টি ছক্কা, ৭টি চারের মার।
চোট কাটিয়ে ২ মাস ২০ দিন পর ম্যাচ খেলতে নামা তামিম শুরু থেকেই দারুণ সব শট খেলে মাঠ মাতিয়ে রাখেন। হোয়াট অ্যা শট! উইন্ডিজের বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচে বিসিবি একাদশের ইনিংসের সময় সবচেয়ে বেশি উচ্চারিত বাক্য এটি। দর্শকসারি থেকে শুরু করে বিকেএসপির তিন নম্বর গ্রাউন্ডের মিনি প্রেসবক্স; সর্বত্রই ছড়ায় এ ড্যাশিং ওপেনারের শটের মুগ্ধতা। প্রত্যাবর্তন রাঙান দুর্দান্ত সেঞ্চুরিতে।
তিন অঙ্ক ছুঁয়ে সোজা ব্যাটে সাইডস্ক্রিনের উপর দিয়ে বিশাল ছক্কায় তামিম হারান বলও। ৩৩২ রানের লক্ষ্যে নেমে বিসিবি একাদশকে জয়ের কক্ষপথে রেখেই আউট হয়েছেন। ক্যারিবীয় অফস্পিনার রোস্টন চেজের ডেলিভারি এগিয়ে মারতে গিয়ে স্টাম্পড হন।
ব্যাকফুটে কাট, ফ্রন্টফুটে কাভার ড্রাইভ, স্কুপ, আলতো ছোঁয়ায় সিঙ্গেল, পুল, ফ্লিক, সুযোগ বুঝে ডাউন দ্য উইকেটে এসে দুর্দান্ত টাইমিং, কোন শটটি খেলেননি তামিম। রানিং বিটুইন দ্য উইকেটেও ছিলেন দারুণ। চনমনে ১৩ চার ও চার ছক্কায় সাজানো তামিমের ইনিংসে ছিল দুর্দান্ত শটের মহড়া।
ইনিংসের ২২তম ওভারে দেবেন্দ্র বিশুকে লংঅনে ঠেলে তামিম সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন ৭০ বলে। গত সেপ্টেম্বরে এশিয়া কাপের প্রথম ম্যাচে আঙুলে চোট পাওয়ার পর থেকে মাঠের বাইরে ছিলেন দেশসেরা ওপেনার।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে চট্টগ্রাম টেস্টে ফেরার সম্ভাবনা জাগলেও ছিটকে যান সাইড স্ট্রেইনের চোটে পড়ে। তবে ৯ ডিসেম্বর থেকে মিরপুরে শুরু হতে যাওয়ায় ওয়ানডে সিরিজে ফিরছেন। তার আগে প্রস্তুতি ম্যাচে দুর্দান্ত সেঞ্চুরি করে জানান দিলেন, আছেন চেনা ছন্দেই।
ওপেনিংয়ে তামিমের সঙ্গী ইমরুল কায়েস ফিরে যান ২৭ রান করে। মোহাম্মদ মিঠুন ৫, আরিফুল হক ২১, তৌহিদ হৃদয় ০, শামিম পাটোয়ারি ৯ রান করে সাজঘরে ফেরেন। দুই চার ও এক ছক্কায় ১৮ বলে ২২ রান করে অপরাজিত থাকেন মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা। সৌম্যর সঙ্গে অধিনায়কের জয়ে নোঙর করানো অবিচ্ছিন্ন জুটিটি ৪৯ রানের।
বিকেএসপির তিন নম্বর মাঠ এমনিতেই রানপ্রসবা। প্রস্তুতি ম্যাচে ফ্ল্যাট উইকেট পেয়ে শুরুটা দুর্দান্ত হয় উইন্ডিজেরও। ওপেনিং জুটিতে শাই হোপ ও কাইরেন পাওয়েল ১৫ ওভারে তুলে ফেলেন শতরান। মাঝে নিয়মিত বিরতিতে উইকেট পড়লেও শেষদিকে রোস্টন চেজ ও ফ্যাবিয়েন অ্যালেনের ঝড়ে তিনশ’ পেরিয়েছে ক্যারিবীয়রা।
উইন্ডিজ প্রথম উইকেট হারায় ১০১ রানে। পাওয়েলকে (৪৩) সাজঘরে পাঠিয়ে ব্রেক-থ্রু আনেন বাঁহাতি স্পিনার নাজমুল ইসলাম অপু। পরে নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারায় সফরকারীরা।
৩৮তম ওভারে ২১৫ রানের মাথায় ৬ ব্যাটসম্যান সাজঘরে ফিরলে অলআউটের সম্ভাবনা জাগে। সপ্তম উইকেট জুটির প্রতিরোধ গড়া ৭৮ রান বড় সংগ্রহের পথে নিয়ে যায় ক্যারিবীয়দের।
৩২ বলে ৮ চার ও এক ছক্কায় ৪৮ রানের ইনিংস খেলা অ্যালেন সাজঘরে ফিরলে ভাঙে ওই জুটি। অন্যপ্রান্তে চেজ চালিয়ে যান চার-ছক্কার ফুলঝুরি। ৫১ বলে ৬৫ রান করে অপরাজিত থাকেন এ ডানহাতি ব্যাটসম্যান।
উইন্ডিজ ইনিংসের ভিত গড়ে দেয়া হোপ সেঞ্চুরির সম্ভাবনা জাগিয়ে আউট হন ৮১ রানে। ৮৪ বলের ইনিংসে ছিল ৬টি চার ও ৩টি ছয়ের মার।
নাজমুল ইসলাম অপু, রুবেল হোসেন ও মেহেদী হাসান রানা নিয়েছেন দুটি করে উইকেট। একটি করে উইকেট নিয়েছে মাশরাফী অনূর্ধ্ব-১৯ দলের অফস্পিনার শামীম পাটোয়ারি।