স্পোর্টস ডেস্ক: মহাকালের পঞ্জিকায় সূর্যাস্ত হয়ে গেল আরেকটি বছরের। আজ নতুন সূর্যোদয়। নতুন এ চক্রে বাংলাদেশ ক্রিকেটও সূর্যস্নান করবে বলে প্রত্যাশা সবার। এটি যে বিশ্বকাপের বছর!
‘বছরের শুরুতে ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ সিরিজ আছে। বছরের শেষেও। কিন্তু সত্যি বলতে কী, আমাদের এ মুহূর্তের সব ভাবনা বিশ্বকাপ ঘিরে। বড্ড আশা নিয়ে ওই টুর্নামেন্টের দিকে তাকিয়ে আছি সবাই’—নির্বাচক হাবিবুল বাশারের এ কথাগুলোই যেন ১৬ কোটি ক্রিকেটপ্রাণের স্পন্দন। ৩০ মে শুরু হওয়া ওই বিশ্বকাপই পাখির চোখ। গত কয়েক বছর ওয়ানডে ক্রিকেটের সাফল্যের ধারাবাহিকতা ও ক্রমোন্নতির গ্রাফ স্বপ্ন পর্যন্ত দেখাচ্ছে বাংলাদেশকে। সে স্বপ্ন অলৌকিক হলেও অযৌক্তিক মনে হয় না হাবিবুলের কাছে, ‘২০১৫ বিশ্বকাপের চেয়ে অনেক ভালো অবস্থানে থেকে এবার বিশ্বকাপ খেলতে যাচ্ছি। দল অনেক পরিণত। ক্রিকেটাররাও অভিজ্ঞ। বড় কিছুর স্বপ্ন দেখাটা তাই আমাদের কাছে অযৌক্তিক মনে হচ্ছে না।’
বড় কিছু বলতে বড় কিছুই। ৩০ মে ইংল্যান্ডে শুরু হবে বিশ্বকাপ। বাংলাদেশের প্রথম খেলা ২ জুন দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে। ১০ দলের টুর্নামেন্টে লিগ পদ্ধতিতে সবাই খেলবে সবার সঙ্গে। তাতে শীর্ষ চার দলে থেকে সেমিফাইনাল খেলা প্রথম লক্ষ্য। আর শেষ চারে উঠে গেলে তো শিরোপার সঙ্গে দূরত্ব মোটেই দুই জয়ের। তখন আর কোনো কিছু অসম্ভব মনে হবে কেন?
ফেলে আসা বছরের দিকে তাকালে বাংলাদেশের ক্রিকেটানন্দের উপলক্ষ তো বড় কম নেই। দুটি ওয়ানডে টুর্নামেন্টের ফাইনালে ওঠা, ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জ থেকে সীমিত ওভারের দুটি সিরিজ জিতে ফেরা, বছরের শেষভাগে জিম্বাবুয়ে-ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টেস্ট-ওয়ানডে সিরিজ জয়—দলীয় এসব অর্জনের মালায় ব্যক্তিগত কত বীরত্বের ফুল গাঁথা! ২০১৯ সালের চ্যালেঞ্জের জন্য প্রস্তুত করছে ২০১৮-র সাফল্যই।
এ বছরে বিশ্বকাপই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। সে অগ্নিপরীক্ষার প্রস্তুতিতে ফেব্রুয়ারি-মার্চে নিউজিল্যান্ড সফর এবং মে মাসে আয়ারল্যান্ডে ত্রিদেশীয় ওয়ানডে সিরিজ। নিউজিল্যান্ড সফরে তিনটি করে টেস্ট-ওয়ানডে খেলবে বাংলাদেশ। ১৩ ফেব্রুয়ারি নেপিয়ার, ১৬ ফেব্রুয়ারি ক্রাইস্টচার্চ এবং ২০ ফেব্রুয়ারি ডানেডিনে তিনটি ওয়ানডে। আর টেস্টগুলো শুরু হবে ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে হ্যামিল্টনে, ৮ মার্চ থেকে ওয়েলিংটনে এবং ১৬ মার্চ থেকে ক্রাইস্টচার্চে। এরপর আয়ারল্যান্ডে বাংলাদেশ-ওয়েস্ট ইন্ডিজ নিয়ে ত্রিদেশীয় টুর্নামেন্ট শুরু হবে ৫ মে। এখানে প্রত্যেকের সঙ্গে প্রত্যেকে খেলবে দুবার করে। বাংলাদেশের ম্যাচ চারটি—৭, ৯, ১৩ ও ১৫ মে। তাতে সেরা দুইয়ে থাকতে পারলে ১৭ মের ফাইনাল।
নিউজিল্যান্ড ও আয়ারল্যান্ড সফরের গুরুত্বটা ভালোই বোঝেন হাবিবুল। কাল কুষ্টিয়া থেকে টেলিফোনে সেটিই বলছিলেন এই নির্বাচক, ‘এই সফর দুটি ভীষণ কঠিন। আবার সেখানে যদি আমরা ভালো করতে পারি, তাহলে বিশ্বকাপটা তুলনামূলক সহজ হয়ে যাবে। ঘরের মাঠে খেলার চেয়ে ওসব জায়গায় খেলে বিশ্বকাপ প্রস্তুতি নেওয়াটাকে আমি দারুণ সুযোগই বলব।’ সে সুযোগটা দল কাজে লাগাতে পারবে বলে আশাবাদী তিনি, ‘আমাদের দলের মতো অভিজ্ঞতা বিশ্বের খুব বেশি দেশের নেই। বিশ্বকাপে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হবে হয়তো ইংল্যান্ডের কন্ডিশনের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া। আশা করছি, নিউজিল্যান্ড ও আয়ারল্যান্ড সফরটা এ ক্ষেত্রে আমাদের খুব সাহায্য করবে।’
বছরের মধ্যভাগ পর্যন্ত বিশ্বকাপ নিয়েই ব্যস্ত থাকবে বাংলাদেশ। বছরে চ্যালেঞ্জ কিন্তু রয়েছে আরো। অক্টোবরেই যেমন তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলার জন্য আসার কথা অস্ট্রেলিয়ার। এক টেস্ট এবং দুটি টি-টোয়েন্টি খেলার জন্য আফগানিস্তানেরও এ মাসে আসার সূচি রয়েছে। এ দুই সিরিজ এখন পর্যন্ত চূড়ান্ত নয়। নভেম্বরের ভারত সফর অবশ্য আইসিসির ফিউচার ট্যুর প্রগ্রামের অন্তর্ভুক্ত। ওখানে দুটি টেস্ট তিনটি টি-টোয়েন্টি খেলবে বাংলাদেশ। ডিসেম্বরে শ্রীলঙ্কা যাবে তিন ওয়ানডে খেলার জন্য। এসবের মধ্যে ভারত সফরের কথা আলাদা করেই উল্লেখ করেন হাবিবুল, ‘টেস্ট মর্যাদা পাওয়ার বহু বছর পর আমরা ভারতে টেস্ট খেলতে গিয়েছিলাম ২০১৭ সালে। সেটি তো শুধু একটি টেস্ট, পূর্ণাঙ্গ সফর বলা যায় না। এবার যাব দুটি টেস্ট খেলতে, সঙ্গে টি-টোয়েন্টিও রয়েছে। ওখানে গিয়ে ভালো করাটা তাই আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জ। তবে…’। তবে? একটু থেমে বাক্যটি শেষ করেন হাবিবুল, ‘তবে এখনই আমরা ওসব নিয়ে ভাবছি না। ভাবনাটা বিশ্বকাপ ঘিরেই।’
ঠিকই। এত এত খেলা থাকলেও বাংলাদেশের ২০১৯ সালের ক্রিকেটভাবনা তো আবর্তিত ওই বিশ্বকাপ ঘিরেই।