দেশের খবর: তাঁদের কয়েকজনের বিরুদ্ধে মন্ত্রণালয়ের কাজের শম্ভুক গতি, আস্থাহীনতা, বিতর্ক, দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগ ছিল। এসব অভিযোগের কারণে তাঁরাসহ সরকার থেকে আওয়ামী লীগকে আলাদা করতে সিনিয়র নেতারা মন্ত্রিসভা থেকে বাদ পড়েছেন। তবে এই সিনিয়র নেতাদের বেশির ভাগ এখন দল সামলাবেন। তাঁদের পরিবর্তে যে নতুন ও তরুণ মুখ বেছে নেওয়া হয়েছে তাঁরা সরকার সামলাবেন। সবার ওপরে দল ও সরকার চালাতে তাঁদের নির্ভরতার প্রতীক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তো আছেনই।
নতুন মন্ত্রিসভায় স্থান পাওয়াদের অধিকাংশই তৃণমূল থেকে উঠে আসা। মনে করা হচ্ছে, এই নতুনরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাজের গতির সঙ্গে তাল মেলাতে পারবেন। আওয়ামী লীগের কয়েকজন শীর্ষস্থানীয় নেতা ও গণভবনসংশ্লিষ্ট সূত্রের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, সরকার থেকে দলের ‘আলাদা সত্তা’ বজায় রাখতে আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতাদের নতুন মন্ত্রিসভায় রাখা হয়নি। তিনি বলেন, ‘কারো হারানোর কিছু নেই। নোবডি ইজ গোয়িং টু লুজ এনিথিং। আমার মনে হয় এটা দায়িত্বের পরিবর্তন, দায়িত্বের রূপান্তর।’
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আমাদের সরকারের মধ্যে দলটা হারিয়ে যাক আমরা সেটা চাই না। সেখানে সরকার আর দলের যে আলাদা সত্তা আছে, সেটা রাখতে হলে রেসপনসিবল লিডারদের একটা অংশকে দলের দায়িত্বে রাখতে হবে।’ কাদের বলেন, ‘কেউ বাদ পড়েছেন এটা আমি বলব না। কেউ সরকারে দায়িত্ব পালন করবেন, কেউ আরো বেশি করে দলের দায়িত্ব পালন করবেন।’
টানা তৃতীয় মেয়াদের আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রিসভায় ঠাঁই হয়নি বেশ কয়েকজন সিনিয়র নেতার। তাঁদের মধ্যে আছেন প্রবীণ নেতা আবুল মাল আবদুল মুহিত, আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, মতিয়া চৌধুরী, ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, নুরুল ইসলাম নাহিদ, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, শাজাহান খান প্রমুখ।
আওয়ামী লীগের ১৫ সদস্যের সভাপতিমণ্ডলীর মাত্র একজন ড. আবদুর রাজ্জাক মন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েছেন। সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বাদে সম্পাদকমণ্ডলীর ৩২ জনের মধ্যে আটজনের ঠাঁই হয়েছে মন্ত্রিসভায়। বাকিরা কেন্দ্রীয় কমিটির বাইরে ও তৃণমূল থেকে উঠে আসা।
সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য তোফায়েল আহমেদ গতকাল সচিবালয়ে বলেন, ‘নতুনদের জায়গা দিতে হয়, এটাই স্বাভাবিক, এটাই নিয়ম। আমি সৌভাগ্যবান। যাঁরা মন্ত্রী হচ্ছেন তাঁরা সবাই চমৎকার মানুষ, সৎ, পরীক্ষিত এবং দীর্ঘদিনের রাজনীতিক, এটা তাঁদের প্রাপ্য।’
সাবেক খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম গতকাল সচিবালয়ে তাঁর বিদায় উপলক্ষে এক অনুষ্ঠানে বলেন, ‘নতুনদের জন্য পুরাতনদের জায়গা ছেড়ে দিতে হয়। ভালো মন্ত্রিসভা হয়েছে। আশা করছি, উন্নয়নের ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকবে।’
বিদায় অনুষ্ঠানে সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, ‘আশা করছি তাঁরা (নতুন মন্ত্রী) ধারাবাহিকতা বজায় রেখে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে আরো উচ্চস্তরে নিয়ে যাবেন।’ অবসরে বই পড়ে সময় কাটাবেন বলে জানান তিনি।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, বিদায়ী ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলামের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। এ নিয়ে বিব্রত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নুরুল ইসলাম নাহিদের দপ্তরের লোকদের বিরুদ্ধেও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছিল। নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খানের বিভিন্ন সময়কার মন্তব্যে ক্ষুব্ধ ছিল আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড। অন্যদিকে অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করে যাওয়া আবুল মাল আবদুল মুহিত বয়সের কারণে আর মন্ত্রিত্বে থাকবেন না বলে আগেই ঘোষণা দিয়েছিলেন।