ক্রীড়া ডেস্ক: প্রায় প্রতিটি দলেই এমন কিছু খেলোয়াড় থাকে যারা অনেকটা নীরবেই নিজের কাজটা করে যায়। দলের প্রয়োজনে এগিয়ে এসে নিজের সেরাটা খেলে থাকেন তাঁরা। বিশ্ব ক্রিকেটে বাংলাদেশের পরিচিতি খুব বেশি দিনের না হলেও পথটা কিন্তু কখনই সহজ ছিল না টাইগার বাহিনীর। আর তেমনই সব কঠিন সময়ে ব্যাট হাতে বারবার দলকে আগলে ধরেছেন ইমরুল কায়েস। সাধারণ ও সরল চরিত্রের এই ক্রিকেটার ব্যাটিং, ফিল্ডিং অথবা দলের মুমূর্ষু পর্যায়ে উইকেটের পেছনেও জ্বলে উঠেছেন। বিশ্ব ক্রিকেট ইতিহাসে নাম লিখেছেন বহুবার। ক্রিকেটীয় কৌশল আর প্রতিভা দিয়ে বর্তমানে জাতীয় দলের এক অপরিহার্য অংশ হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করেছেন বাঁ-হাতি এই ওপেনার। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ক্যারিয়ারের শুরুটা মোটেই ভালো করতে পারেননি বাঁ-হাতি এই ব্যাটসম্যান। ফলে দ্রুতই দল থেকে বাদ পড়ে যান। ঘরোয়া ক্রিকেটে নিজেকে প্রমাণ করে বারবারই জাতীয় দলে ফিরে আসেন ইমরুল। তবে কিছুইতেই কিছু হচ্ছিল না। ২০১০ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সেঞ্চুরির পর নিউজিল্যান্ড সফরেও পান সেঞ্চুরি। পরের বছরও মোটামুটি ভালো খেলেন এই ওপেনার। এর পরই দীর্ঘ রান-খরার কারণে জাতীয় দল থেকে বাদ পড়ে যান। ঘরোয়া ক্রিকেটে ভালো খেললেও জাতীয় দলে জায়গা পাচ্ছিলেন না ইমরুল। অবশেষে ২০১৪ সালে দলে ডাক পান ইমরুল। চট্টগ্রাম টেস্টে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে শতক করার পর জাতীয় দলে জায়গা নিয়ে তাঁকে আর ভাবতে হয়নি। তারপর এখন পর্যন্ত টাইগার হয়ে নিজের অপরিহার্যতা প্রমাণ করে চলেছেন ইমরুল। ইমরুল কায়েসের জন্ম ১৯৮৭ সালের আজকের দিনেই। কুষ্টিয়ার মেহেরপুরের ছেলে ইমরুল ছোট থেকেই ক্রিকেটের প্রতি আসক্ত ছিলেন। ঘরোয়া ক্রিকেটে খেলেছেন রংপুর রাইডার্স ও খুলনা বিভাগের হয়ে। এ ছাড়া, বাংলাদেশ এ দল ও বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড একাদশ দলে খেলেছেন এই ব্যাটসম্যান। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ইমরুলের অভিষেক হয় ২০০৬ সালে। জাতীয় দলে ডাক পাওয়ার আগেই তিনি ১৫টি প্রথম শ্রেণির ম্যাচ ও ১৬টি একদিনের ম্যাচ খেলে নিজের প্রতিভার প্রমাণ দেন। ২০০৮ সালের ১৪ অক্টোবর বাংলাদেশ-নিউজিল্যান্ড সিরিজের তৃতীয় ম্যাচে চট্টগ্রামের মাটিতে তাঁর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের অভিষেক হয়। একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ব্যাট হাতে তিনি মাঠে নেমেছেন ৬৫ বার। গড় রান ২৯.২৬ করে মোট রান করেন এক হাজার ৮৭৩। এর মধ্যে শতক আছে দুটি আর অর্ধশতক আছে ১৩টি। সাদা জার্সিতে ইমরুলের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার শুরু হয় দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে একই বছরের নভেম্বরে। ক্যারিয়ারে ২৭টি টেস্ট খেলে তিনি এখন এক হাজার ৪৩২ রানের মালিক। তিনটি সেঞ্চুরির পাশাপাশি আছে চারটি হাফ সেঞ্চুরি। আর সেরা ইনিংসটি ১৫০ রানের। রেকর্ডের দিক থেকেও ক্রিকেট বিশ্ব বারবার স্মরণ করে এই তারকা ব্যাটসম্যানকে। ২০১৫ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে ইমরুল-তামিমের ৩১২ রানের ওপেনিং জুটি নজর কেড়েছে বিশ্ব ক্রিকেট বোদ্ধাদের। উইকেটের পেছনে গ্লাভস হাতে সম্প্রতি তিনি ভেঙেছেন ১৪১ বছরের পুরোনো রেকর্ড। এ বছরের ১৫ জানুয়ারিতে ওয়েলিংটনের বেসিন রিজার্ভে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ইনজুরির কারণে উইকেট সামলাতে পারেননি মুশফিক। আর তখনই বদলি উইকেটরক্ষক হিসেবে সর্বোচ্চ পাঁচটি ক্যাচ নিয়ে নতুন বিশ্বরেকর্ড করেন এই অলরাউন্ডার। জাতীয় দলের অন্যতম এই ব্যাটিং সেনানী আজ ভারত সফরে বের হয়েছেন। টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়ার ১৬ বছর পর ভারত সফরে যাচ্ছে বাংলাদেশ। আগামী ৯ ফেব্রুয়ারি থেকে হায়দরাবাদে শুরু হচ্ছে সিরিজের একমাত্র টেস্ট ম্যাচটি। ভারতের বিপক্ষে ইমরুলের ব্যাটে রানের ফোয়ারা দেখতে চান বাংলাদেশের ক্রিকেটভক্তরা।
পূর্ববর্তী পোস্ট