নিজস্ব প্রতিবেদক : জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে অবমাননা করেও বহাল তহিবয়তে সাতক্ষীরা মটর শ্রমিক ইউনিয়নের সাবেক নেতা আক্তারুজ্জামান মহব্বত। আর এ অভিযোগ ঢাকতে আওয়ামীলীগের একাংশের ছত্রছায়ায় সড়ক পরিবহন শ্রমিকলীগের জেলা সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন।
মটর শ্রমিক ইউনিয়ন সূত্র জানায়, বিগত বিএনপির-জোট সরকারের সময়ে বিএনপি ক্যাডার হিসাবে পরিচিত ছিলেন তিনি। তৎকালীন বাস-মিনিবাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক বিএনপি নেতা আব্দুর রউফের ডান হাত হিসাবে শ্রমিক ইউনিয়নের নেতৃত্ব দিত মহব্বত। সে সময় তার বিরুদ্ধে কথা বলার মত ক্ষমতা ইউনিয়নের কোন শ্রমিক ছিলো না। অথচ আজ জেলা আওয়ামীলীগের একজন শীর্ষ নেতার ছাত্রছায়ায় সাতক্ষীরা জেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিকলীগের সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন ওই আক্তারুজ্জামান মহব্বত। সাতক্ষীরা মটর শ্রমিক ইউনিয়নের শ্রমিকরা জানান, মহব্বত একজন সুবিধাবাদী নেতা। তার নিজস্ব কোন দল নেই। যখন যেদলই ক্ষমতায় থাকে তখন সেই দলের ক্যাডার হিসাবে সাধারণ মানুষের উপরে অত্যাচার নির্যাতন করে থাকে। এছাড়া তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় বিগত ২০০৬ সালের ১৫ অগাস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর শাহাদৎবার্ষিকী উপলক্ষ্যে ইউনিয়নে কাঙালি ভোজের আয়োজন করা হয়। এখবর পেয়ে আক্তারুজ্জামান মহব্বত এসে ভাতের হাড়িতে লাথি মেরে ফেলে দেন এবং চুলায় পানি ঢেলে পুরো অনুষ্ঠান প- করে দেন। এছাড়া সে হুমকি দিয়ে বলে শেখ মুজিবের জন্য কোন আয়োজন এখানে হবে না। এঘটনায় জাতির জনকের আর্দশের সৈনিকরা আক্তারুজ্জামান মহব্বত ও তার সহযোগিদের ইউনিয়ন থেকে বিতাড়িত করেন। অপরদিকে সাতক্ষীরা জেলা বিএনপির আয়োজনে ২০১৩ সালের ৬ সেপ্টেম্বর সাতক্ষীরা শহিদ আব্দুর রাজ্জাক পার্কে এক কর্মী সমাবেশের আয়োজন করে। সেখানে বিএনপির একাংশের হামলায় নিহত হন জেলা মৎস্যজীবী দলের সাধারণ সম্পাদক আমান উল্লাহ আমান। এহত্যার ঘটনায় আক্তারুজ্জামান মহব্বত এজাহার ও চার্জশিটভুক্ত আসামি।
এদিকে, গত ৪ ফেব্রুয়ারি ভোমরা সড়ক পরিবহন শ্রমিকলীগের অভিষেক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। সেখানে প্রধান অতিথি করা হয় নব-নির্বাচিত জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলামকে। ওই অনুষ্ঠানের বিশেষ বক্তা করা হয় বঙ্গবন্ধুর অবমাননাকারী মহব্বতকে। এঘটনায় আওয়ামীলীগের সমর্থকদের মধ্যে প্রতিক্রিয়া দেখা দিলে ৪ তারিখের ওই অনুষ্ঠানে স্থগিত করে ১০ ফেব্রুয়ারি করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। সেখানে অবশ্য আক্তারুজ্জামান মহব্বতকে অতিথিদের তালিকা থেকে বাদ রাখা হয়েছে।
বঙ্গবন্ধুর শাহাদাৎবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে খিচুড়ির ডেকে লাথি মেরে কীভাবে আওয়ামীলীগের অঙ্গ সংগঠনের জেলা কমিটির নেতা হলেন ওই মহব্বত তা নিয়ে জেলাব্যাপী চলছে নানাগুঞ্জন। কিন্তু জেলা আওয়ামীলীগের ওই শীর্ষ নেতার কারণে এখনও বহাল তবিয়তে আক্তারুজ্জামান মহব্বত। মহব্বতের মত পাল্টি খাওয়া নেতারা আওয়ামীলীগের মধ্যে প্রবেশ করে দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে দ্বন্দ্বের সৃষ্টি করেছেন বলে শ্রমিক নেতারা দাবি করেছেন।
এবিষয়ে সাতক্ষীরা জেলা শ্রমিকলীগের সভাপতি ছাইফুল করিম সাবু বলেন, বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময়ে ২০০৬ সালের ১৫ অগাস্ট বিএনপি ক্যাডার আক্তারুজ্জামান মহব্বত খিচুড়ির ডেকে লাথি মেরে অনুষ্ঠান প- করে দেয়। এঘটনায় আমরা স্থানীয় পত্র-পত্রিকায় বিবৃতিও প্রদান করেছিলাম।
এক ধরনের সুবিধাবাদীদের সহযোগিতায় মহ্ববতের মত ব্যক্তিরা দলে ঢুকে আওয়ামীলীগের সুনাম নষ্ট করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
বাস-মিনি বাস শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মীর মনিরুজ্জামান মনি বলেন, মহব্বত বিএনপি থেকে পাল্টি খেয়ে আওয়ামীলীগের মধ্যে অনুপ্রবেশ করে ইউনিয়নের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করার পায়তারা চালাচ্ছেন। আমরা সড়ক পরিবহন শ্রমিকলীগের পদ থেকে তার বহিস্কার ও বঙ্গবন্ধুকে অবমাননা করার অভিযোগে কঠোর শাস্তি দাবি করছি। সাধারণ সম্পাদক জাহিদ হোসেনও একই সুরে মহব্বতের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান।
এ বিষয়ে আক্তারুজ্জামান মহব্বত বলেন, ২০০৬ সালের আমি ঘটনাস্থলে ছিলাম না। আমি তখন শ্রমিক ইউনিয়নের সেক্রেটারি ছিলাম। আমার বিপক্ষের লোকজন ষড়যন্ত্র করে আমার বিরুদ্ধে অপ্রচার চালিয়েছে। আমান হত্যার আসামি হলেন কিভাবে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটিও ষড়যন্ত্র, আমি মনে মনে সমর্থন করতাম তবে কখনো বিএনপি করতাম না।
পূর্ববর্তী পোস্ট