নিজস্ব প্রতিবেদক: সাতক্ষীরায় লাউ চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছে চাষিরা। খরচ কম ও দাম বেশি পাওয়ায় সাতক্ষীরা জেলার বিভিন্ন স্থানে এখন লাউ চাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে। মাছের খামারের পাশে বা পতিত জমিতে লাউ চাষ করে বাড়তি আয় করতে পেরে খুব খুশি লাউ চাষিরা। কিটনাশকমুক্ত এই সবজি জেলার চাহিদা মিটিয়ে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হচ্ছে।
শীতকালীন সবজিগুলোর মধ্যে অন্যতম সুস্বাদু ও স্বাস্থ্যকর হলো লাউ। এটি খুবই সহজলভ্য এবং দামেও সস্তা। লাউয়ের পানি ও আঁশ আমাদের পরিপাক ক্রিয়াকে পরিষ্কার করে। এ কারণে যাদের কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা রয়েছে তাদের জন্য এ সবজিটি খুবই উপকারী। লাউয়ে গ্লুকোজ ও চিনি নেই বললেই চলে। ফলে ডায়বেটিসের রোগিরা লাউ খেলে উপকার পাবেন। সহজে হজম হয় এবং শরীর ঠা-া রাখে বলে ডায়রিয়ার সময় এক গ্লাস লাউয়ের রসে এক চিমটি লবণ মিশিয়ে খেলে শরীর থেকে বেরিয়ে যাওয়া পানি ও সোডিয়ামের চাহিদা পূরণ হয়। এছাড়া লাউ মূত্রনালীর বিভিন্ন রোগ ও জ্বালাপোড়া রোধে খুবই উপকারী। লাউ কোষ্ঠকাঠিন্য ও পাইলস রোগ রোধেও খুব কার্যকর ভূমিকা রাখে। আয়ুর্বেদিক চিকিৎসকরা লিভারের কার্যক্ষমতা বাড়াতে লাউ খাওয়ার ওপর গুরুত্ব দিয়ে থাকেন। কাজেই লাউ লিভারের সংক্রমণে ভালো পথ্য হিসেবে কাজ করে।
লাউয়ে পর্যাপ্ত আয়রন, থায়ামিন, ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস থাকে, যা সুস্বাস্থ্যের জন্য দরকারি। লাউয়ের রস এপিলেপ্সি, পাকস্থলীর এসিডিটি, আলসার এবং অন্যান্য স্নায়ুরোগ নিরাময়ে ভূমিকা রাখে। সহজে হজম করা যায় বলে জ্বরসহ অন্যান্য অসুস্থতায় লাউ পথ্য হিসেবে খাওয়া যেতে পারে।
সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার কামারালী গ্রামের লাউ চাষী আইয়ুব আলী সানা জানান, শীতকালিন সবজি হলেও সারা বছর লাউ ধরে তার বাগানে। পোকামাকড় মুক্ত থাকায় কিটনাশক লাগে না লাউ চাষে। অধিক ফলন ও বাজার মুল্য বেশী পাওয়ায় লাউ চাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে মৎস ঘেরের পাশের পতিত জমিতে। অনেকে পুকুর ধার বা বাড়ির চালে সহজে এই লাউ চাষ করছে। তিনি আরো জানান, প্রতিটি লাউ ২০ থেকে ৪০ টাকা দরে বিক্রি করতে পেরে তিনি খুব খুশি। এক বিঘা জমিতে তার লাউ চাষ করতে খরচ হয়েছে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা। এর থেকে তিনি লাউ বিক্রি করবেন এক লাখের অধিক টাকা বলে তিনি জানান।
সাতক্ষীরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কাজী আব্দুল মান্নান জানান, সাতক্ষীরায় চলতি মৌসুমে ৬ ’শ ৫০ হেক্টর মাছের খামারের পতিত জমিতে সবজি চাষ করা হয়েছে। এর মধ্যে লাউ চাষ করা হয়েছে প্রায় ৩ ’শ হেক্টর জমিতে। আগমীতে এই লাউ চাষ আরও প্রসারিত হবে। তিনি আরো জানান, জেলার চাহিদা মিটিয়ে রাজধানি ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রয় হচ্ছে সাতক্ষীরর উৎপাদিত এই লাউ। তাই সবজি উৎপাদনে সাতক্ষীরার লাউ একটি অর্থকারি ফসল হিসেবে ভূমিকা রাখবে বলে মনে করেন তিনি।
পূর্ববর্তী পোস্ট