বিদেশের খবর: চলতি সপ্তাহে সৌদি আরবের ইতিহাসে একসঙ্গে সবচেয়ে শিরশ্ছেদ কার্যকর করার ঘোষণা দেয়ার বহু আগে তাদের কয়েকজন অভিযোগ করে বলেছেন, যারা আমাদের নির্যাতন করেছেন, তারাই আমাদের নামে মিথ্যা স্বীকারোক্তি লিখেছে। আমরা সম্পূর্ণ নিরপরাধ।
শুক্রবার মার্কিন গণমাধ্যম সিএনএনের খবরে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। শিরশ্ছেদ হওয়া এসব লোক আদালতের কাছে তাদের জীবন রক্ষার করুণ আবেদন করেছিলেন। কিন্তু দেশটির আদালত সেই আবেদন আমলে নেননি।
জেরাকারীদের হাতে নির্যাতিত হওয়ার প্রমাণ থাকার কথাও তাদের কয়েকজন বলেছিলেন। বিচারের নথিপত্রে দেখা গেছে, তাদের একজন আদালতে করুণা পাওয়ার প্রত্যাশায় বাদশাহ সালমান ও তার ছেলে মোহাম্মদ বিন সালমানের আনুগত্য প্রকাশ করেন।
তবে ২০১৬ সালে যখন বিচার চলছিল, তখন এসব কিছুই বিচারকের মনে নাড়া দিতে পারেনি। তাদের সন্ত্রাস সংশ্লিষ্ট অপরাধে দোষী সাব্যস্ত করে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছে।
৩৭ জনের শিরশ্ছেদ কার্যকর করার কথা মঙ্গলবার ঘোষণা দিয়েছে রিয়াদ। এদের মধ্যে তিনজন অপ্রাপ্তবয়স্ক ছিল। সৌদি আরব বলছে, তাদের বয়স কম হলেও তারা অপরাধ করেছে।
তাদের একজনকে ক্রুশবিদ্ধ করে হত্যা করে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে, যাতে অন্যরাও সতর্ক হন। মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের খবরে বলা হয়েছে, নিহতদের মধ্যে সবচেয়ে বয়স কম ছিল আবদুল কারিম আল-হাওয়াজের। ষোলো বছর বয়সে সহিংস বিক্ষোভে অংশ নেয়ার অভিযোগ আনা হয়েছিল তার বিরুদ্ধে।
তাকে শিরশ্ছেদের ঘটনায় জাতিসংঘ থেকে ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়েছে। সৌদি আরবকে তার নীতি পরিবর্তনের আহ্বান জানানো হয়েছে।
১৭ বছর বয়সী মুজতবা আল শওকত ২০১২ সালে বিক্ষোভ অংশ নিয়েছিলেন। পরে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশে উড়াল দিতে দাম্মাম বিমানবন্দর গেলে সেখান থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ে তার ভর্তি হওয়ার কথা ছিল।
২০১৬ সালে করা ২৫ জনের তিনটি বিচারের কয়েকশ পাতার নথি হাতে পেয়েছে সিএনএন। চলতি সপ্তাহে তাদের শিরশ্ছেদ করা হয়েছে। এদের মধ্যে ১১ জনের বিরুদ্ধে ইরানের হয়ে সৌদি আরবের বিরুদ্ধে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগ আনা হয়েছে।
আর ১৪ জনের বিরুদ্ধে অপরাধ হচ্ছে, তারা ২০১১ ও ২০১২ সালে শিয়া সংখ্যাগরিষ্ঠ শহর আল আওয়ামিয়ায় সরকারবিরোধী বিক্ষোভের সময় ‘সন্ত্রাস সেল’ গঠন করেছেন বলে অভিযোগ বলা হয়েছে।
শিরশ্ছেদ হওয়া অধিকাংশেই দেশটির সবচেয়ে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী শিয়া সম্প্রদায়ের লোক।
সৌদি কর্তৃপক্ষ ন্যায়বিচার সম্পন্ন হওয়ার দাবি করলেও নথিতে দেখা গেছে, অপরাধে জড়িত হওয়ার স্বীকারোক্তি দূরের কথা আদালতে তারা বলেছেন, তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ মিথ্যা। নির্যাতন করে এসব আদায় করা হয়েছে।
তবে কেউ কেউ বলেছেন, তারা আঙুলের ছাপ ছাড়া কিছুই দেননি। তাদের যারা নির্যাতন করেছেন, তারাই এসব স্বীকারোক্তি লিখে নিয়েছেন।
বিচারের সময় মুনির আল আদম নামের একজন বলেন, আমি এসব বলিনি। আমি কোনো চিঠি লিখিনি। আমাকে যারা নির্যাতন করেছেন, তারাই আমার বিরুদ্ধে এসব অপবাদ লিখেছেন।
মঙ্গলবার শিরশ্ছেদ কার্যকর করা এক ব্যক্তি ছিলেন কিছুটা দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ও বধির। তবে এ ব্যাপারে জানতে চেয়ে সৌদি কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে কোনো সাড়া পায়নি বলে দাবি করেছে সিএনএন।
শিক্ষার্থী মুজতবার বিরুদ্ধে ‘সন্ত্রাস-সেল’ গঠনের অভিযোগ করা হলেও তার বাবার দাবি, সেখানে এমন কিছু ছিল না।