দেশের খবর: গাজীপুরের কালীগঞ্জে চাঁদাবাজির মামলায় আসামি করে রিয়াজুল ইসলামের (২৮) পরিবারের কাছ থেকে অর্থ আদায়ের অভিযোগ উঠেছে পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) মোহাম্মদ গোলাম মওলার বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় গত ১৩ এপ্রিল গাজীপুর পুলিশ সুপারের (এসপি) কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী রিয়াজুল। উপজেলার উলুখোলা ফাঁড়ির ইনচার্জ অভিযুক্ত এসআই মোহাম্মদ গোলাম মওলার বিরুদ্ধে এর আগে নারী কেলেঙ্কারির অভিযোগ উঠেছিল।
পুবাইলের বিন্দান এলাকার ইউনুস আলীর ছেলে রিয়াজুল এসআইয়ের হয়রানি থেকে বাঁচতে এখন পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এসআই মোহাম্মদ গোলাম মওলা ২০১৪ সালে গাজীপুর জেলা পুলিশে যোগ দেন। তার বিরুদ্ধে টঙ্গী থানার তৎকালীন একজন নারী কনস্টেবল যৌন হয়রানির অভিযোগ করেন পুলিশ সুপারের কাছে। পরে গোলাম মওলা টঙ্গী থানা থেকে ক্লোজড হয়ে ২০১৬ সালে উলুখোলা ফাঁড়ির ইনচার্জের দায়িত্ব পান।
মাঝে ২০১৭ সালে সাড়ে তিন মাসের মতো ওই ফাঁড়ির ইনচার্জের দায়িত্বে ছিলেন এসআই সাইফুল। পরে আবার ইনচার্জ হিসেবে যোগ দেন গোলাম মওলা। দায়িত্ব পালনকালে তার বিরুদ্ধে অনিয়মের অসংখ্য অভিযোগ উঠলেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানা যায়নি।
ভুক্তভোগী রিয়াজুল ইসলামের অভিযোগ, গত ৫ ফেব্রæয়ারি সকালে কালীগঞ্জের নাগরী ইউনিয়নের উলুখোলা বাজার থেকে বাড়ি ফেরার পথে তাকে আটক করে উলুখোলা পুলিশ ফাঁড়িতে নিয়ে যান এসআই মোহাম্মদ গোলাম মওলা। এরপর রিয়াজুল জানতে পারেন, কালীগঞ্জ থানায় মো. বাবুল করিমের করা চাঁদাবাজির মামলায় তাকে আসামি করা হয়েছে।
ওই মামলার বাদী তাকে চেনেন না, তিনিও বাদীকে চেনেন না দাবি করে রিয়াজুল বলেন, গোলাম মওলা ওই চাঁদাবাজির মামলায় ওয়ারেন্টের কথা বলে প্রথমে ৫০ হাজার টাকা দাবি করে রিমান্ডের ভয় দেখান। খবর পেয়ে ওইদিন বিকালে তার বাবা মো. ইউনুস আলী ৫০ হাজার টাকা দিয়ে থানা থেকে ছাড়িয়ে নেন তাকে।
পরে মামলার চার্জশিট থেকে নাম বাদ দেওয়ার কথা বলে গোলাম মওলা আরও ৫০ হাজার টাকা দাবি করেন বলে অভিযোগ রিয়াজুলের। এজন্য গত ২৮ মার্চ বিকালে উলুখোলা পুলিশ ফাঁড়ির কনস্টেবল শাকিল আবারও তাকে উলুখোলা অটোস্ট্যান্ড থেকে আটক করে পুলিশ ফাঁড়িতে নিয়ে যান।
রিয়াজুল বলেন, ‘পরে এসআই গোলাম মওলা বাকি ৫০ হাজার টাকা দাবি করে বিভিন্নভাবে ভয়-ভীতি দেখান। খবর পেয়ে চাচা আতাউর রহমান ১৮ হাজার টাকার বিনিময়ে আমাকে ফাঁড়ি থেকে ছাড়িয়ে নেন।’
কালীগঞ্জ থানায় দায়ের করা চাঁদাবাজি মামলার বাদী বাবুল করিম বলেন, ‘কালীগঞ্জের উলুখোলায় মোয়াজ উদ্দিন গ্রæপের কেনা জমিতে সীমানাপ্রাচীর নির্মাণের সময় জাকিরের নেতৃত্বে কয়েকজন হামলা চালান। পরে আমি থানায় লিখিত অভিযোগ করি। পুলিশ অভিযোগের তদন্ত শেষে মামলা রেকর্ড করেছে। তবে মামলার আসামি রিয়াজুল ইসলামকে আমি চিনি না। রিয়াজুল ঘটনাস্থলে ছিলেন কি না সেটাও জানি না।’
এসআই গোলাম মওলা দাবি করেন, রিয়াজুলের অভিযোগগুলো মিথ্যা এবং ভিত্তিহীন। তিনি বলেন, ‘রিয়াজুলের সঙ্গে বহু মামলার আসামি স্থানীয় জাকিরের সখ্য রয়েছে। বিগত দিনে জাকির একটি ডাকাতি মামলায় আটক হন। সম্প্রতি জামিনে এসে অনুসারীদের দিয়ে আমাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করছেন।’
এসব ব্যাপারে তিনি জেলা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানিয়েছেন বলেও দাবি করেন ওই এসআই।
গাজীপুর জেলার পুলিশ সুপার শামসুন্নাহার জানান, অভিযোগগুলো তদন্ত করা হচ্ছে। রিয়াজুলের লিখিত অভিযোগের বিষয়টির খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।