ধরো, করোনা ভাইরাস আকারে যদি কুকুর বা শিয়ালের মতো হত, আর পাগলা কুকুরের মত তাড়িয়ে তাড়িয়ে এখনকার মত মানুষ মারত, তাহলে মানুষ কী করত? যত রাষ্ট্রে যত মারণাস্ত্র আছে, যত বন্দুক, যত কামান, যত গুলি, যুদ্ধ জাহাজ, সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনী, প্রয়োজনে পারমানবিক বোমা এনে আক্রমণ করে ভাইরাসের দফা শেষ করে ফেলত। কারণ এই ভাইরাসের ওপর ভিষণ ক্ষেপে আছে মানুষ। আজ পর্যন্ত যে খবর, পঁচিশ হাজারের বেশি মানুষ ইতিমধ্যে মেরে ফেলেছে এই ভাইরাস। এখনও মারতেই আছে। ১৭৭ টি দেশে হানা দিয়েছে। বাংলাদেশও এর বাইরে নয়। শুধু তাই নয়, বিশ্বজুড়ে তিনশ কোটি মানুষ ঘরে আটকে আছে। অজস্র শহর ফাঁকা হয়ে গেছে। কাজ-কর্ম বন্ধ হয়ে গেছে। ব্যবসা-বাণিজ্য ডকে উঠেছে। টাকা পয়সা খাবার-দাবার শেষ হতে চলেছে। বিশ্বের সব পন্ডিত, সব বড় বড় নেতাদের গালে মাছি গেছে। কিন্তু মানুষের এত অস্ত্র, সব গুদাম ঘরে। সব অকেজো। এখন কী করছে মানুষ ? প্রাকৃতিক প্রতিরোধের উপর ভরসা করছে। সেটা কী রকম? আমরা জানি, ভাইরাসকে যদি দেখা যেত, অস্ত্র দিয়ে তার নাড়ি-ভুড়ি চটকিয়ে দেয়া যেত। মানুষের তৈরী অস্ত্র, তাই সেটা মনুষ্য প্রতিরোধ। কিন্তু তা তো আর হচ্ছে না। ভাইরাস তো খুব ছোট। খালি চোখে দেখা যায় না। একেবারে শরীরের মধ্যে ঢুকে থাকে। যদি শরীরের বাইরেও থাকত, তাহলেও তো পিঁপড়ের মত ডলা দিয়ে মারা যেত, তাও যাচ্ছে না। তাই শরীরের রোগ প্রতিরোধ শক্তির উপর ভরসা করতে হচ্ছে। রোগ প্রতিরোধ শক্তি প্রকৃতিগত। তাই সেটা প্রাকৃতিক প্রতিরোধ। একটুখানি ভুল বলেছি, শরীরের মধ্যে না, শরীরের শরীরের মধ্যে, মানে কোষের মধ্যে। দেখো তো কী ভয়ানক যুদ্ধ কৌশল ! এখন যদি ভাইরাসেরা গল্প করতে পারত, তাহলে কী বলত ? আমার মনে হয়, এক ভাইরাস আরেক ভাইরাসকে বলত, “দেখ ভাই ! মানুষেরা রাস্তায় আর্মি আর পুলিশ নামিয়েছে, ওগুলো কী হবে?” আরেক ভাইরাস বলত , “ওগুলো মাছ না পেয়ে ছিপে কামড়, মানুষ তো ! দর্প ভারী ! খালি শক্তি দেখায়, বুক ফোলায়,আর অস্ত্র নামায়, আর্মি নামায়…ওগুলো হচ্ছে―’দাঁড়া ! এই করতে পারি, ও্ই করতে পারি, এক্ষুনি শেষ করব’ ইত্যাদি টাইপের গর্ব।” এর মধ্যে ধরো, একটা পুলিশ একটা মানুষকে ঠ্যাঙাচ্ছে, মাস্ক পরেনি তাই; অথবা চারটে আয়ের জন্য পথে নেমেছে তাই। তাই দেখে একটা ভাইরাস হাসছে আর বলছে, “হায় হায় এ ভাই ! মানুষ মানুষকে মারছে কেন !” আরেক ভাইরাস বলবে, “বললাম না মাছ না পেয়ে ছিপে কামড়, মাস্কে-ফাস্কে কী আমরা আটকাই! আমাদেরকে মারতে পারছে না তো, তাই নিজেদেরকে মেরে ঝাল জুড়িয়ে নিচ্ছে হিহিহি!” আবার সব করোনা ভাইরাস তো বুদ্ধিমান না, কিছু ন্যাকা ভাইরাসও আছে। তা সেরকম একটা ন্যাকা ভাইরাস তখন এসে বলবে, “কেন? আমাদেরকে মারবে কেন? আমরা কী করেছি?”
“কী করছ বুঝতে পারছ না ! পঁচিশ হাজার যে মেরে ফেলেছ, এখনও যত বাঁচবে, ওরা তত মরবে !”
“ওমা তাই নাকি ! তা তো জানিনে!” বলেই ন্যাকা ভাইরাস মানুষের ফুসফুস কোষে সুড়সুড় করে সেঁধিয়ে যাবে।
তা যাই হোক, তাহলে বোঝো ! মানুষের সব অস্ত্র বস্তা পচা। প্রয়োজনে কোন কাজে লাগে না। শুধু কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা নষ্ট। কেন বলোতো ? মানুষ ব্যবসা করে। তাই নিজেদের মধ্যে মারামারি জিইয়ে রাখে। একটা ইয়া বড় যুদ্ধ বিমান বিক্রি করলে কোটি কোটি টাকা পায়। ওরা জানে, প্রকৃতির নিষেধ অমান্য করে ওরা যুদ্ধ করে। সে বেলায় প্রাকৃতিক প্রতিরোধের তোয়াক্কা করে না। তাই নিজেদের সামলানোর জন্য অস্ত্র বানায়। কিন্তু যখন বিপদে পড়ে, এই যেমন এখন, তখন সুড়সুড় করে প্রাকৃতিক প্রতিরোধে ভরসা করে। বাঁচার অধিকার সবার আছে। প্রকৃতিই এটা দেয়। কিন্তু ওরা কী করে? অকাতরে গাছ কাটে, কীট পতঙ্গ মারে। আবার নিজেদেরকেও মারে। জানো? ওদের রোহিঙ্গা বলে এক জাত আছে। খুব নিরীহ জাত! তাদের ছুঁড়ে ছুঁড়ে ফেলে দেয় সাগরে! কী কারণ? বাপ-দাদাদের আমল থেকে বাস-করা জায়গা নাকি ওদের না ! কী নৃশংস তাই না?
মানুষ কিন্তু বোঝে সব। কিন্তু দেরিতে। ওরা কিন্তু জানে, ক্ষুদ্র শত্রু শক্তিমান বেশি। কিন্তু ক্ষুদ্রকে কি কেউ দাম দেয়? তাহলে হেরে যেতে হবে না? এমন গোয়ার ওরা। এখন বুঝতে পারছে। তাই এবার অস্ত্র বানাবে। কী করে জানো ? ওই যে শরীর যেভাবে প্রতিরোধ গড়ে, সেটা শিখে তাই বানাবে। সে অস্ত্রের নাম কী জানো ? ওষুধ। এ এমন অস্ত্র যে, খেতে হয়। ট্যাবলেট, ক্যাপসুল, ভ্যাকসিন, স্যালাইনের মাধ্যমে নিজের শরীরের মধ্যে ঢালতে হয়। তাহলে বোঝো, এমন অস্ত্র যে, খেতে হবে। এখন আমার এই কথোপকথন যদি ভিনগ্রহী কেউ শুনতে পায়, তাহলে তারা কী করবে বলো তো ? ভিষণ হাসবে। ধরো, ভিনগ্রহীদের একটা মেয়ে আছে। তার নাম-টিংকু। টিংকু যদি শোনে, মানুষেরা ভাইরাসের এমন অস্ত্র বানায় যে, তা খেতে হয়। তাহলে সে হেসে গড়াগাড়ি যাবে।
টিংকু মায়ের কাছে শুনবে, “মা, অস্ত্র আবার খায় নাকি !’’
টিংকুর মা হাসি চেপে বলবে, “মানুষেরা খায়।’’
টিংকু হয়ত তখন কৌতুহলের বশে বলবে, ‘‘আমরা কেন অস্ত্র বানিয়ে খাই না?’’
টিংকুর মা বলবে, “ওসব আমাদের এই ভিনগ্রহীরা পনেরশ বছর আগে বানাত, পৃথিবীর মানুষেরা অত বুদ্ধিমান নয়, এখন আমরা…এই যে এটা বানিয়েছি।’ বলেই টিংকুর মা মাইক্রোফোনের মত দেখতে কী একটা টিংকুর হাতে বেধে দেবে।
সেটা কী হতে পারে জানো ? সেটাই ওদের ভাইরাস তাড়ানোর অস্ত্র। ঘড়ির মত হাতে বেধে রাখতে হবে। অদৃশ্য কোন শত্রু দেখলেই চুম্বকের মতো টেনে নেবে, আর ফিনিশ করে ফেলবে।
যা হোক, মানুষেরা ওষুধ-অস্ত্র বানাবে। আর সে খবর যদি করোনা ভাইরাস জানতে পারে, তবে কী হবে বলো তো ? প্রথম প্রথম বুঝতে পারবে না। দুম-দাম করে মরবে দু একটা। যে ক’টা বাঁচবে, ঘাপটি মেরে বসে বসে ভাববে, ‘‘তাই তো ! এখন কী করি ?’’
কিন্তু ওদেরও তো প্রাকৃতিক প্রতিরোধ আছে। তা যে শুধু মানুষের আছে তা তো নয়। ওরা সেই প্রাকৃতিক প্রতিরোধের শক্তিতে ওষুধ-অস্ত্রের মধ্যে ঢুকে যাবে। যেমন করে এখন শরীরের মধ্যে ঢুকছে। তাহলে কী হবে ? সেই অস্ত্রেও আর কাজ হবে না পরে। আবার তখন সব ফেলে-টেলে দিয়ে হুড়মুড়িয়ে ঘরে ঢুকবে মানুষ।
Email : bablujbl@gmail.com