কালো রাত্রির শেষে..
– শেখ মফিজুর রহমান
জেলা ও দায়রা জজ, সাতক্ষীরা।
এই আঁধার রাতের গহীন পর্দা ভেদ করে
সকালের আলো ফুটবেই।
সূর্যের লাজ রাঙা হাসিতে
ঘুম ভাঙবে সুরভিত ফুলের।
মৌ লোভী মৌমাছিরা লুটোপুটি খাবে
রং ছড়াতে, মন ভরাতে
হাজির হবে রঙিন প্রজাপতি।
শিশির ভেজা দূর্বা ঘাসে ঘুঙুরপরা ছোট খুকি টলমল পায়ে হাঁটবে
ধর ধর ধর – পড়ে গেল
এই রব ঠিক উঠবে!
সকাল হতেই বাড়ির কর্তীর উঠবে নাভিশ্বাস!
কর্তার লাঞ্চ, বাচ্চার টিফিন –
এক হাতে কিভাবে সামলাবে সব!
অফিস পাড়ায় গুনগুনানি হবে -কার প্রমোশন, কে কার স্বার্থের লোক এইসব নিয়ে চলবে হাসি – ঠাট্টা, বিতর্ক প্রহসন।
দিনশেষে কর্মক্লান্ত পথিক হাতে বাজার সদাই নিয়ে ঘরের মানুষের মুখোচ্ছবি ভাবতে ভাবতে বাড়ি ফিরবে।
হোটেল, রেস্টুরেন্টে, পথের পাশের চটপটি – ফুচকার দোকানে আর চায়ের কাপের গরম ধোয়ার উচ্ছ্বলতায় ফোয়ারা ছুটাবে তরুণ – তরুনী, যুবা – বৃদ্ধ, নারী – শিশু।
রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে প্রেমিক – প্রেমিকার মোবাইলে টুং করে বেজে উঠবে ক্ষুদে বার্তা – ‘শুভরাত্রি’!
সারাদিনের এই কর্মযজ্ঞ দেখে আকাশের চাঁদ, রাতের তারা বিমুগ্ধ হয়ে জ্বল জ্বল করে জ্বলতে থাকবে
আর দখিনা হাওয়ার সাথে,
নিভু নিভু জ্বলা জোনাকির সাথে,
গল্প করবে।
তখন এই মৃত্যুর মিছিল থাকবে না,
লাশের সারি দেখে গুনতে ভুল করবে না হাসপাতালের নির্ঘুম রাত জাগা
ডাক্তার – নার্স!
মানুষ এভাবে ভয়ে ভয়ে
অতি সঙ্গোপনে শ্বাস নেবে না,
বিষাক্ত জীবাণুর মৃত্যু শীতল স্পর্শের ভয়ে জানালা দরজা বন্ধ করে বন্দি হবে না চার দেয়ালের মাঝে।
নিজের সন্তানকে জড়িয়ে ধরে আদর
করতে ভয় পাবে না কোন পিতা – মাতা!
দরজায় আত্নীয় – বন্ধুর ছায়া দেখলে
ভয়ে আৎকে উঠবে না কেউ!
আকাশে – বাতাসে মৃত্যুর দূত হয়ে
লুকিয়ে থাকবে না কোন অদৃশ্য শত্রু ।
মৃত স্বজনের লাশ ফেলে প্রাণভয়ে
পালাবে না কেউ!
সবাই প্রাণখুলে হাসবে
হৃদয় দিয়ে ভালোবাসবে
হাতে হাত দিয়ে
কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে
সাদা – কালো, ধর্ম – বর্ণের বিভেদ ভেদ করে
গড়ে উঠবে একটি শুদ্ধ পৃথিবী।
দূষণের শোষন
যুদ্ধের দামামা,
করোনার ভয়ানক ছোবল
সবকিছু ছাপিয়ে একটি
আত্মশুদ্ধ প্রেমময় পৃথিবী।