অনলাইন ডেস্ক: জাতীয় অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান মারা গেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাহি রাজিউন)। বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি।
অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের ছেলে আনন্দ জামান জানান, বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টা ৫৫ মিনিটে তার বাবার মৃত্যু হয়।
ড. আনিসুজ্জামানের বয়স হয়েছিল ৮৩ বছর। তার মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
গত ২৭ এপ্রিল হৃদরোগ সমস্যার পাশাপাশি কিডনি ও ফুসফুসে জটিলতা, পারকিনসন্স, প্রোস্টেটের সমস্যা ও রক্তে সংক্রমণের সমস্যা নিয়ে অধ্যাপক আনিসুজ্জামানকে রাজধানীর ইউনিভার্সেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
এরপর গত শনিবার অধ্যাপক আনিসুজ্জামানকে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) স্থানান্তর করা হয়। বৃহস্পতিবার সেখানেই মারা যান তিনি।
জাতীয় অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায় ১৯৩৭ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন। ভারত ভাগের পর তার পরিবার এপার বাংলায় চলে আসে। তিনি ছয় দশকেরও বেশি সময় শিক্ষকতা পেশার সঙ্গে জড়িত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনার আগে তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন। ভাষা আন্দোলন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনসহ পরবর্তী প্রতিটি গণতান্ত্রিক আন্দোলনের সঙ্গে তিনি ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিলেন। এছাড়া ধর্মান্ধতা ও মৌলবাদবিরোধী নানা কর্মকাণ্ডে সর্বজনশ্রদ্ধেয় ব্যক্তিত্ব আনিসুজ্জামানের সক্রিয় ভূমিকা রয়েছে।
আনিসুজ্জামানের শিক্ষাজীবনের শুরু হয়েছিল কলকাতার পার্ক সার্কাস হাইস্কুলে। এদেশে চলে আসার পর অষ্টম শ্রেণীতে ভর্তি হন খুলনা জিলা স্কুলে। এক বছর পরই পরিবারের সঙ্গে চলে আসেন ঢাকায়। ১৯৫১ সালে ম্যাট্রিক পাস করে ভর্তি হন জগন্নাথ কলেজে। সেখান থেকে ১৯৫৩ সালে আইএ পাস করে ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে। তারপর ১৯৫৬ ও ১৯৫৭ সালে স্নাতক সম্মান এবং এমএ পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণীতে প্রথম স্থান অধিকার করেন আনিসুজ্জামান। অনার্সে পেয়েছিলেন সর্বোচ্চ নম্বর। সেই কৃতিত্বের স্বীকৃতিস্বরূপ পেয়েছিলেন ‘নীলকান্ত সরকার স্বর্ণপদক’।
১৯৬৫ সালে শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টরেট ডিগ্রি নিয়ে দেশে ফেরেন। ভাষা আন্দোলন, রবীন্দ্রসঙ্গীত উচ্ছেদবিরোধী আন্দোলন, রবীন্দ্র জন্মশতবার্ষিকী আন্দোলন এবং ঐতিহাসিক অসহযোগ আন্দোলনে তিনি সম্পৃক্ত ছিলেন। ১৯৭১ সালে তিনি মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। শহীদ জননী জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে গঠিত গণআদালতে তার ছিল সক্রিয় অংশগ্রহণ। ১৯৮৫ সালে তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এসে শিক্ষক হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে।
আনিসুজ্জামানের উল্লেখযোগ্য রচনাবলির মধ্যে রয়েছে- ‘স্মৃতিপটে সিরাজউদ্দীন হোসেন’, ‘শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ স্মারকগ্রন্থ’, ‘নারীর কথা’, ‘মধুদা’, ‘ফতোয়া’, ‘ওগুস্তে ওসাঁর বাংলা-ফারসি শব্দসংগ্রহ’, ‘আইন-শব্দকোষ’, ‘আঠারো শতকের বাংলা চিঠি’ ও ‘কাল নিরবধি’।
বাংলা সাহিত্যে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার, একুশে পদক, অলক্ত পুরস্কার, আলাওল সাহিত্য পুরস্কারসহ নানা পুরস্কার ও রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানসূচক ডি-লিট ডিগ্রিতে ভূষিত হয়েছেন। সাহিত্যের জন্য ভারতের তৃতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা পদ্মভূষণে ভূষিত হয়েছেন এই গুণী ব্যক্তিত্ব।