ডেস্ক রিপোর্ট: পুলিশের কিছু সদস্যের বিরুদ্ধে র্যাবের মহাপরিচালক (ডিজি) অভিযোগ করেছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব বরাবরে। অভিযোগপত্রে তিনি উল্লেখ করেছেন, এ ব্যাপারে এখনই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নিলে পরবর্তী সময়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অস্ত্রধারী দু’টি দলের মধ্যে বড় ধরনের দুর্ঘটনা সৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া পুলিশ বাহিনী তথা সরকারের ভাবমূর্তিও ক্ষুণ্ন হতে পারে।
সিনিয়র সচিব বরাবরে দেওয়া চিঠিতে র্যাবের ডিজি বেনজীর আহমেদ উল্লেখ করেন, ‘র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) বাংলাদেশ পুলিশের একটি স্বতন্ত্র বিশেষায়িত এলিট ফোর্স। বাংলাদেশের সাতটি নিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী (সশস্ত্র বাহিনী, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ, বাংলাদেশ পুলিশ, বাংলাদেশ আনসার বাহিনী ও কোস্টগার্ড) থেকে আগত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়ে এই বাহিনী গঠিত। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই র্যাব জঙ্গিবাদ দমন, অবৈধ অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী গ্রেফতার, অবৈধ মাদক উদ্ধারসহ দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে সমগ্র বাংলাদেশের র্যাব ক্যাম্প থেকে প্রতিনিয়ত র্যাবের অসংখ্য আভিযানিক ও গোয়েন্দা দল এবং সরকারি কাজে নিয়োজিত প্রশাসনিক দল প্রয়োজনবোধে ইউনিফর্ম বা সাদা পোশাকে সশস্ত্র বা নিরস্ত্র অবস্থায় সরকারি যানবাহনে অভিযান চালায়। একইসঙ্গে সরকারি কাজেও যাতায়াত করে থাকে। সম্প্রতি এ সব অভিযান বা সরকারি কার্যক্রম পরিচালনাকালে র্যাবের আভিযানিক ও গোয়েন্দা দলের সদস্যরা পুলিশ বাহিনীর কতিপয় পুলিশ সদস্য কর্তৃক র্যাবের পরিচয় দেওয়ার পরেও র্যাব সদস্যদের সঙ্গে অশ্লীল ভাষায় আক্রমণাত্মক কথা বলে, বিভিন্ন বাহিনী সম্পর্কে কটূক্তিপূর্ণ মন্তব্যসহ শারীরিকভাবে হেনস্থা করে। কিছু ক্ষেত্রে র্যাবের সদস্যদের লাঠি এমনকি রাইফেল দিয়ে আঘাত করে রক্তাক্ত করার ঘটনাও ঘটেছে।’
চিঠিতে আরও বলা হয়, ‘বর্ণিত ঘটনাগুলো পর্যালোচনায় দেখা যায় যে, অধিকাংশ সময়েই এ সব ঘটনায় র্যাবের পরিচয় পাওয়ার পরেও পুলিশ সদস্যরা র্যাব সদস্যদের ওপর চড়াও হচ্ছে। প্রায় সব ক্ষেত্রেই র্যাব সদস্যরা আক্রান্ত হলেও অত্যন্ত ধৈর্য, পেশাদারী মনোভাব ও দক্ষতার পরিচয় দিয়ে নিষ্ক্রিয় থেকে পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করেছে বিধায় বড় ধরনের কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা এড়ানো সম্ভব হয়েছে। এ সব ঘটনায় জড়িত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পত্রালাপ করা হলেও কোনও প্রকার কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়নি। অথবা কার্যক্রম সম্পর্কে র্যাবকে অবগত করা হয়নি বিধায় দোষীদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি, এমন বিরূপ ধারণা র্যাব সদস্যদের মনে সৃষ্টি হচ্ছে। যা তাদের মনোবল বা আভিযানিক কর্মকাণ্ডে ব্যাঘাত সৃষ্টি করছে। র্যাব সদস্যদের মনে ক্ষতের সৃষ্টি করছে। ফলে পরবর্তী সময়ে অস্ত্রধারী দু’দলের মধ্যে এরূপ ঘটনা ঘটলে যেকোনও সময়ে তা বড় আকারের দুর্ঘটনার সৃষ্টি করতে পারে যা পুলিশ বাহিনী তথা সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করবে। এ পরিপ্রেক্ষিতে পরবর্তী সময়ে এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ও পরিস্থিতি এড়ানোর লক্ষ্যে দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণসহ অন্যদের প্রয়োজনীয় প্রেষণা দেওয়ার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ করা হলো।’ চিঠির সঙ্গে অভিযোগ সংক্রান্ত একটি বিবরণও দেন র্যাবের ডিজি।
বৃহস্পতিবার দুপুরে পুলিশ সদর দফতরে একটি মোবাইল অ্যাপস উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এ প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আইজিপি এ কে এম শহীদুল হক বলেন, ‘স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পুলিশের বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ করেননি র্যাবের ডিজি। তাছাড়া আইজিপিকে বাদ দিয়ে তিনি এমন অভিযোগ করতেও পারেন না। কোনও অভিযোগ করতে চাইলে তা আইজিপি বরাবরই করতে হবে। তবে র্যাবের কাছ থেকে এমন অভিযোগ পেয়েছেন জানিয়ে তিনি বলেন, এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’