বিনোদনের খবর: কিডনি রোগে আক্রান্ত হয়ে চলচ্চিত্র পরিচালক রফিক শিকদারের মা রওশন আরা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। সেখানে ঘটেছে ভয়াবহ এক কাণ্ড। এক কিডনি সারাতে গিয়ে মায়ের আরেক কিডনিও হারাতে হয়েছে বলে অভিযোগ করলেন রফিক শিকদার।
তার অভিযোগ, তার মায়ের বাম কিডনিটি অস্ত্রোপচার করে ফেলে দেওয়ার কথা ছিল, কিন্তু অস্ত্রোপচারের পর সিটি স্ক্যান করে দেখা যায়, মায়ের শরীরে ডানের কিডনিটিও নেই। তার মায়ের অবস্থা ধীরে ধীরে খারাপের দিকে যাচ্ছে। মায়ের এমন পরিণতির জন্য যারা দায়ী তাদের শাস্তি দাবি করেন রফিক শিকদার।
তবে বিএসএমএমইউ’র ইউরোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. হাবিবুর রহমান দুলাল বলছেন, কিডনি কোনো কারণে নন-ফাংশনাল হলে সিটি স্ক্যানে ধরা পড়ে না।
তবে চিকিৎসকের এই যুক্তি মিথ্যে বলে দাবি করেছেন চলচ্চিত্র পরিচালক রফিক শিকদার। তিনি বলেন, ‘চিকিৎসক যা বলছেন তা পুরোপুরি মিথ্যে। আমি অন্য কয়েকজন চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা নিশ্চিত করেছেন, দৃশ্যমান জিনিস পেটের মধ্যে থাকলে তা কাজ করুক বা না করুক দেখা যাবেই।
রফিক শিকদার বলেন, ‘আমার মা রওশন আরার (৫৫) বাম কিডনিতে সমস্যা ছিল। মূত্রনালীতে ইনফেকশন ছিল। কিন্তু ডানের কিডনিটি পুরোপুরি ভালো ছিল, ঠিক সুস্থ মানুষের মতো। তার ডায়বেটিস নাই, হাই প্রেসার নাই, বাড়তি কোনো রোগ নাই। বাম কিডনির যে ইনফেকশন ছিল তা সার্জারি করা হলে মা পুরোপুরি সুস্থ হয়ে যান। ইনফেকশন অপসারনের পর মা সুস্থভাবে চলাফেরা করছিলেন।
এরপর ঈদুল আজহায় আমারা তখন মাকে নিয়ে পাবনায়। ঈদের পরে হঠাৎ করে পিজি হাসপাতাল (বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হাসপাতাল) থেকে ফোনে করে জানানো হলো, আপানার মায়ের বাম কিডনিটা ফেলে দিতে হবে। ফেলে দিলে পুরোপুরি সুস্থ হয়ে যাবেন। তা না হলে পরবর্তী সময়ে সমস্যা হতে পারে। আমরাও রাজি হই। কারণ, চিকিৎসক তো ভালোর জন্যই বলবেন।
অস্ত্রোপচারের পর মা হাসপাতালে ছিলেন। এ সময় চিকিৎসকরা বলেন, আপনার মাকে আইসিইউতে নিতে হবে। তখন মায়ের জ্ঞান আছে, কথাও বলছে। আমি বললাম, তাকে দেখে তো মনে হচ্ছে না, আইসিইউতে নিতে হবে। এসময় চিকিৎসকরা তাকে আইসিইউতে নেওয়ার জন্য আমার ওপর চাপ সৃষ্টি করেন। বিএসএমএমইউতে আইসিইউ খালি না থাকায় মাকে মগবাজারের ইনসাফ কিডনি হাসপাতালে নিয়ে গেলাম। ওই হাসপাতালের প্রফেসর ছিলেন ফখরুল সাহেব। তিনি বললেন, আপনার মায়ের কিডনি কেন ফাংশন করছে না তা জানা দরকার। তিনি ল্যাবএইড হাসপাতালে পরীক্ষার জন্য পাঠালেন।
সিটি স্ক্যানের পর ল্যাবএইডের চিকিৎসকরা বলেন, আগের কাগজপত্রে দেখা যাচ্ছে আপনার মায়ের বাম কিডনি কেটে ফেলা হয়েছে। কিন্তু পরীক্ষার পর দেখা যাচ্ছে ডানের কিডনিও নেই। কিডনিটা কোথায় গেল? ওটা কি ফেলে দেওয়া হয়েছে? আমি বললাম, তাতো জানি না!’
রফিক শিকদার বলেন, ‘সব রিপোর্ট দেখার পর ইনসাফ হাসপাতালের চিকিৎসক ফখরুল স্যার মাকে আর তার হাসপাতালে রাখতে চাইলেন না। পরে মাকে আবার বিএসএমএমইউতে নিয়ে আসলাম। সেখানকার চিকিৎসক অধ্যাপক হাবিবুর রহমান দুলাল বলেন, আমার হাসপাতালের আইসিইউ খালি নেই তা আমাকে ফোনে বলতে পারতো। কেন তাকে (রোগীকে) প্রাইভেট হাসপাতালে পাঠানো হলো? আমি বললাম, আপনার হাসপাতালে রাখলে কি লাভ হতো, যদি দুটি কিডনিই না থাকে? তখন তিনি বলেন, আপনি কারও কথায় কান দিবেন না। আপনার মায়ের পেটে কিডনি আছে। কিন্তু ফাংশনাল না, দেখা যাবে না।’
বিএসএমএমইউ এর চিকিৎসা ডা. হাবিবুর রহমান দুলাল বলেন, ‘আমরা বাম দিকের কিডনি অস্ত্রোপচার করেছি। ডান দিকের কিডনি নিতে চাইলে আমাকে ডান দিকের কিডনি অস্ত্রোপচার করতে হবে। আর আমি নিয়েই বা কি করবো? রফিক আমাকে জিজ্ঞেস করেছে, ‘স্যার আপনি চলে আসার পর কেউ কেটে নিয়েছে কি-না।’ কিন্তু এটা কিভাবে সম্ভব! আমি নিজে একজন কিডনি ট্রান্সপ্ল্যান্টার। আমি কিডনি নিয়ে কী করবো? এটা তো কোনও কাজে লাগবে না।’
এ প্রসঙ্গে বিএসএমএমইউ এর উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি এই রোগীর সব রিপোর্ট দেখে দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন। তিনি বলেন, কমিটির একটি ঘটনার তদন্ত করবে এবং অপরটি রওশন আরার চিকিৎসা করবে।
রওশন আরার ডান কিডনিটি অস্ত্রোপচারের সময় কেটে ফেলা হয়েছে কিনা তা তদন্তে গঠিত কমিটিতে সাত জন সদস্য রয়েছেন। কমিটির প্রধান করা হয়েছে কিডনি ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক হারুন অর রশিদকে। এছাড়াও কমিটিতে আছেন– বিএসএমএমইউ’র ইউরোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক একেএম খুরশিদুল আলম, নেফ্রোলজি বিভাগের অধ্যাপক অসীম কায়েস, রেডিওলজি বিভাগের চেয়ারম্যান, সার্জারি বিভাগের ডিন, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ইউরোলজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ও বিএসএমএমইউ’র অ্যাডিশনাল রেজিস্ট্রার অধ্যাপক আসাদুল ইসলাম।
এদিকে রওশান আরার চিকিৎসায় গঠিত ছয় সদস্যের মেডিক্যাল বোর্ডে আছেন– বিএসএমএমইউ’র ইউরোলজি বিভাগের অধ্যাপক আনোয়ারুল ইসলাম, নেফ্রোলজি বিভাগের অধ্যাপক শহিদুল ইসলাম সেলিম। সার্জারি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তৌহিদুল আলম, কার্ডিয়োলজি বিভাগের অধ্যাপক হারিফুল হক, ইন্টারনাল মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক জলিল চৌধুরী এবং ইউরোলজি বিভাগের অধ্যাপক মো. হাবিবুর রহমান।
কমিটি গঠন করা প্রসঙ্গে রফিক শিকদার বলেন, ‘তদন্ত রিপোর্টের ব্যাপারে আমার কোনো বিশ্বাস নেই আর। আমি রোববার আদালতে একটি রিট আবেদন করবো। মায়ের প্রতি হওয়া অন্যায়ের বিচার চাই আমি। প্রয়োজনে সেই চিকিৎসকের চিকিৎসা কার্যক্রম আপাতত বন্ধ রাখার জন্য বলবো।