আসাদুজ্জামান ঃ উপর্যুপরি ধর্ষনের শিকার হয়ে নীরবে মুখ লুকিয়ে পালিয়ে গেলেন খুলনার এক নারী। অভিযোগ করা তো দুরের কথা নিজের মানসিক যন্ত্রনার কথা একটি বারও কারও সাথে বলার সুযোগ পেলেন না তিনি । তার আগে এক জনপ্রতিনিধি পুলিশের সহায়তায় ধর্ষকদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা নিয়ে থানা পুলিশ ও বিজিবির ভয় দেখিয়ে গ্রাম থেকে সরিয়ে দিয়েছেন তাকে। বৃহস্পতিবার রাতে এ ঘটনাটি ঘটে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার সীমান্তবর্তী গ্রাম দক্ষিণ তলুইগাছায়। ধর্ষিতা নারী ভারত থেকে চোরাপথ দিয়ে পার হয়ে সাতক্ষীরার তলুইগাছায় আসার পর এ ঘটনার মুখে পড়েন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে গ্রামবাসীরা জানান, ৩৩ বছর বয়সী খুলনার ওই নারী ভারতের তারালি এলাকা থেকে পাচারকারীদের মাধ্যমে বিনা পাসপোর্টে বাংলাদেশে আসেন। সন্ধ্যায় তাকে পাচারকারীরা তলুইগাছার চোরাচালানি আবদুল আহাদের বাড়িতে নিয়ে যায়। সেখানে আহাদ, তার সঙ্গী ইয়ারুলসহ তিনজন ওই নারীকে জোরপূর্বক ধর্ষন করে। ‘এ কথা সবাইকে জানিয়ে দেবো’ বলতেই ধর্ষকরা তাকে ভয়ভীতি দেখিয়ে আহাদের বাড়ি থেকে রাস্তায় বের করে দেয়। রাত তখন ৯টা।
এদিকে অজানা অচেনা হওয়ায় দিশেহারা নারী রাস্তায় যখন কাঁদছিলেন তখন খবর যায় বাঁশদহা ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য আবদুস সামাদের কাছে। সামাদ ওই নারীর কাছ থেকে সব কথা শোনেন। এ সময় তিনি ধর্ষকদের ডেকে পাঠান । দুই পক্ষকে মুখোমুখি বসিয়ে কথা বলার পর ধর্ষনের অভিযোগ প্রমানিত হতেই তিনি ধর্ষকদের কাছ ঘুষ দাবি করেন। অন্যথায় পুলিশের হাতে তুলে দেওয়ারও হুমকি দেন তাদের। একই সময়ে তিনি বিষয়টি পুলিশের এসআই আবুল কালামকে জানিয়ে তাকে ম্যানেজ করে নেন। এর পর তাদের দুজনের কাছ থেকে ৪০ হাজার টাকা আদায় করে নেন সামাদ। পরে ওই নারীকে একই গ্রামের জামিলা খাতুনের বাড়িতে রাতে রেখে দেওয়া হয়। শুক্রবার সকাল হতেই তাকে তিনি এক মুহুর্ত দেরি না করে ইচ্ছা মতো চলে যাবার নির্দেশ দেন। অন্যথায় পুলিশ কিংবা বিজিবি তাকে গ্রেফতার করবে এই ভয় দেখান। ইউপি সদস্যের মুখে এই কথা শুনে ভয়ে ওই নারী সকালে তলুইগাছা ত্যাগ করেন বলে জানা গেছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ইউপি সদস্য আবদুস সামাদ বলেন, রাত ৯ টায় আমি ওই নারীকে রাস্তায় দাঁড়িয়ে কাঁদতে দেখেছি । তার আকুতি অনুযায়ী আমি তাকে রাতে স্থানীয় জামিলা খাতুনের বাড়িতে রেখে দেই। সকালে আমি তাকে তার গন্তব্য চলে যাবার কথা বলেছি। তাকে ধর্ষন করা কিংবা গা ঢাকা দিতে ধর্ষকদের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, না তেমন কিছু না । তবে তিনি স্থানীয় এক সাংবাদিকের কাছে সব অভিযোগ স্বীকার করে বলেছেন ‘২০ হাজার টাকা নিয়েছি’।
তবে গ্রামবাসী বলছেন, ইউপি সদস্য সামাদ ধর্ষকদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে ভারতের পাচারকারীদের সাথে যোগাযোগ করেন। পরে সকালে সেখানেই তাকে পাঠিয়ে দেন। এ ব্যাপরে জানতে চাইলে সদর থানার এসআই আবুল কালাম বলেন, আমি এ ঘটনাটি মেম্বরের কাছ থেকে শুনেছিলাম।
সাতক্ষীরা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফিরোজ হোসেন মোল্লা জানান, অভিযোগটি তিনি আমলে নিলেন। এ ব্যাপারে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবেন বলে তিনি আরো জানান।
০২.০৯.১৬