প্রিন্স আল-ওয়াহেদ বিন তালাল বিন আবদুল আজিজ আল সৌদ। বিশ্বজুড়ে যিনি ‘অ্যারাবিয়ান ওয়ারেন বাফেট’ নামে পরিচিত। মূলত বিপুল পরিমাণ সম্পদের মালিক হওয়াতেই এমন উপাধি পেয়েছেন তালাল।
গেল নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে সৌদি আরব দুর্নীতির অভিযোগে যে কয়জন প্রিন্স ও মন্ত্রীকে আটক করেছে তার মধ্যে তালালও রয়েছেন। আটকের পর থেকে বিশ্ব মিডিয়াতে তাকে নিয়ে হচ্ছে ব্যাপক আলোচনা ও সমালোচনা। এবার সৌদি প্রিন্স ওয়ালিদকে মুক্তির বিনিময়ে ছয় বিলিয়ন বা ৬০০ কোটি ডলার দাবি করেছে সৌদি কর্তৃপক্ষ। বর্তমানে দেশটির কারাগার ‘বিলাসবহুল রিজ কার্লটন হোটেলে’ দুই মাস ধরে বন্দি রয়েছেন ওয়ালিদ।
ওয়ালিদের মুক্তির জন্য সৌদি কর্তৃপক্ষের দাবি নিয়ে দেনদরবার এখনও চলছে। যাদের আটক করা হয়েছে তাদের মধ্যে ওয়ালিদের কাছ থেকেই সবচেয়ে বেশি অর্থ দাবি করা হচ্ছে। এর আগে সাবেক সৌদি বাদশাহ আবদুল্লাহর পুত্র মিতেব বিন আবদুল্লাহ ১০০ কোটি ডলারের বিনিময়ে মুক্তি পেয়েছেন।
জানা গেছে, ওয়ালিদ অর্থের বিনিময়ে মুক্তি নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। তার বদলে রিয়াদের শেয়ার মার্কেটের তালিকায় থাকা কিংডোম হোল্ডিংসের একটি গুরুত্বপূর্ণ শেয়ার কর্তৃপক্ষকে দেওয়ার প্রস্তাব করেছেন।
তালালের জন্ম ১৯৫৫ সালের ৭ মার্চ। তিনি একাধারে সৌদি রাজ পরিবারের সদস্য, একজন ব্যবসায়ী, বিনিয়োগকারী এবং সমাজকর্মী।
২০০৮ সালে প্রভাবশালী ও ঐতিহ্যবাহী মার্কিন সাময়িকী টাইম বিশ্বের শীর্ষ একশ প্রভাবশালী ব্যক্তিদের যে তালিকা করে তাতে স্থান করে নেন তালাল বিন আবদুল আজিজ।
সৌদি রাজ পরিবারের সাথে তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। তালাল সৌদি আরবের প্রথম রাজা ইবনে সৌদের নাতি এবং তারপর সৌদি আরবের সিংহাসনে বসা সব রাজাদের সৎ ভাইপো। তার আর একটি পরিচয় হচ্ছে তিনি লেবাননের প্রথম প্রধানমন্ত্রী রিয়াদ আল সোলহ’র ও নাতি।
তালাল রাজকীয় পরিবারের বাইরে একজন সফল ব্যবসায়ী। তিনি রিয়াদভিত্তিক বিনিয়োগ বিষয়ক হোল্ডিং প্রতিষ্ঠান ‘কিংডম হোল্ডিং কোম্পানি’র প্রতিষ্ঠাতা, চেয়ারম্যান এবং ৯৫ শতাংশ শেয়ারের মালিক।
বাণিজ্য সাময়িকী ফোর্বসের তৈরি করা বিশ্বের শীর্ষ ২ হাজার কোম্পানির তালিকাতে থাকা কিংডম হোল্ডিং কোম্পানি বিভিন্ন ক্ষেত্রে তার বিনিয়োগ করেছে। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হচ্ছে অর্থনৈতিক সেবা, পর্যটন, গণমাধ্যম, বিনোদন, খুচরা ব্যবসায়, কৃষি, পেট্রোক্যামিকেলস, এভিয়েশন, প্রযুক্তি এবং নির্মাণ শিল্প।
আল-ওয়ালিদ মার্কিন বহুজাতিক আর্থিক, ব্যাংকিং, বিনিয়োগ সেবা প্রতিষ্ঠান সিটি গ্রুপের সবচেয়ে বেশি ব্যক্তিগত শেয়ারের মালিক, মার্কিন গণমাধ্যম কোম্পানি টোয়েনটি ফাস্ট সেঞ্চুরি ফক্সের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ শেয়ারের মালিক, প্যারিসে অবস্থিত পাঁচ তারকা হোটেল ‘ফোর সিজনস হোটেল জর্জ ভি’র মালিক এবং নিউইয়র্কে অবস্থিত অপর পাঁচ তারকা হোটেল ‘প্লাজা হোটেল’র আংশিক মালিক। তাছাড়া তালাল বিনিয়োগ করেছেন টুইটার,অ্যাপল, রুপার্টি মার্ডকের নিউজ কর্পোরেশনস এবং রাইড শেয়ারিং কোম্পানি লিফট এ।
২০১৩ সালের এক হিসেবে দেখা গেছে তালালের কোম্পানির মূলধনের বাজার মূল্য ১ হাজার ৮০০ কোটি ডলার। তবে বর্তমানে তা আরও অনেক বেশি।
২০১৭ সালের নভেম্বরে ফোর্বস তালাল বিন আবদুল আজিজকে বিশ্বের শীর্ষ ৪৫তম ধনী ব্যক্তি হিসেবে চিহ্নিত করেছে। এ সময় তার সম্পত্তির নেট মূল্যমান ছিল ১ হাজার ৮০০ কোটি ডলার। টাইম ম্যাগাজিন তালাল বিন আবদুল আজিজকে ‘অ্যারাবিয়ান ওয়ারেন বাফেট’ নামে আখ্যায়িত করে।
গত বছর তালাল বিন আবদুল আজিজ ভবিষৎতে তার সম্পত্তি মানবসেবায় দান করে দেওয়ার ঘোষণা দেন। একই সাথে তিনি নারী ক্ষমতায়ন ও সাংস্কৃতিক বুদ্ধি বৃদ্ধির জন্য কাজ করে যাওয়ারও অঙ্গীকার করেন। এতকিছুর পর তাকে কেন আটক করা হয়েছে এ বিষয়ে কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। প্রিন্স তালালের প্রতিষ্ঠান কিংবা নিকটাত্মীরাও এখনও মুখ খোলেননি।