খেলার খবর: আরেকটি বিবর্ণ পারফরম্যান্সে ধরা দিলো সেই হতাশার গল্পই। আরও একবার বাংলাদেশের অসহায় আত্মসমর্পণ। ঘুরে দাঁড়ানোর আত্মবিশ্বাসের যে বাণী শোনা গিয়েছিল দল থেকে, মাঠের পারফরম্যান্সে তা খুঁজে পাওয়া গেল না। ফলে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে কলম্বোর দ্বিতীয় ওয়ানডে ৭ উইকেটে হারের সঙ্গে সিরিজও ফসকে গেল বাংলাদেশের।
সফরকারীদের হতাশায় ডুবিয়ে আনন্দের সাগরে ভেসেছে শ্রীলঙ্কা। সিরিজ জেতার স্বস্তি সবসময়ই অন্যরকম, আর সেটা যদি ঘরের মাঠে দীর্ঘ ৪৪ মাস পর ধরা দেয়, তাহলে বলার অপেক্ষা রাখে না অনুভূতিটা ঠিক কেমন হয়! ২০১৫ সালের নভেম্বরে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ জেতার পর এবারই প্রথম ঘরের মাঠে ৫০ ওভারের সিরিজ জিতলো শ্রীলঙ্কা।
বিপরীতে ২০১৭ সালের পর প্রথমবার টানা চার ওয়ানডেতে হারের মুখ দেখলো বাংলাদেশ। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে এই দুই ম্যাচের আগে বিশ্বকাপে ভারত ও পাকিস্তানের বিপক্ষেও হতাশা নিয়ে মাঠ ছাড়তে হয়েছিল টাইগারদের। যদিও বিশ্বকাপে এভাবে ভেঙে পড়া বাংলাদেশকে দেখা যায়নি। ব্যাটিং কিংবা বোলিং কোনও বিভাগেই পাওয়া গেল না গত কয়েক বছরের বাংলাদেশকে।
মুশফিকুর রহিমের হার না মানা ৯৮ রানে ভর করে বাংলাদেশের ৮ উইকেটে করা ২৩৮ রান মোটেও বড় স্কোর ছিল না। অল্প পুঁজি নিয়ে লড়াই করতে হলে বোলিংয়ে দুর্দান্ত শুরু দরকার ছিল। কিন্তু পারেনি, বরং উদ্বোধনী জুটিতে শ্রীলঙ্কা পেয়ে যায় ৭১ রান। সেই ভিতের ওপর দাঁড়িয়ে ৩২ বল আগেই ৩ উইকেট হারিয়ে লক্ষ্যে পৌঁছে যায় শ্রীলঙ্কা। একই সঙ্গে এক ম্যাচ আগেই ২-০তে সিরিজ নিশ্চিত করে স্বাগতিকরা।
উদ্বোধনী জুটিতে ম্যাচসেরার পুরস্কার জেতা অভিষ্কা ফার্নান্ডো (৮২) ও দিমুথ করুণারত্নের (১৫) গড়ে দেওয়া ভিতের ওপর দাঁড়িয়ে শ্রীলঙ্কাকে জিতিয়ে মাঠ ছাড়েন অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুজ (৫২*) ও কুশল মেন্ডিস (৪১*)। বাউন্ডারি হাঁকিয়ে দলের জয় নিশ্চিতের সঙ্গে নিজের হাফসেঞ্চুরি পূরণ করেন ম্যাথুজ। ৫৭ বলের ইনিংসটি তিনি সাজান ৭ বাউন্ডারিতে।
মাঝে মোস্তাফিজুর রহমান দ্রুত ২ উইকেট তুলে নিয়ে সামান্য আশা জাগালেও অন্য বোলাররা ছিলেন নিষ্প্রভ। মোস্তাফিজ ৮ ওভারে ৫০ রান দিয়ে পেয়েছেন ২ উইকেট। শ্রীলঙ্কার হারানো অন্য উইকেটটি মেহেদী হাসান মিরাজের।
আবারও মোস্তাফিজের উইকেট
বাংলাদেশকে আরও একটি সাফল্য এনে দিলেন মোস্তাফিজুর রহমান। এবার আগের ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান কুশল পেরেরাকে ফিরিয়েছেন তিনি। যাতে লঙ্কানরা হারিয়েছে ৩ উইকেট।
ওপেনার অভিষ্কা ফার্নান্ডোকে আউট করার পর আবারও উইকেট উদযাপনে মাতলেন মোস্তাফিজ। ফর্মে থাকা কুশল পেরেরাকে ফিরিয়ে স্বস্তি ফিরিয়েছেন তিনি। এই পেসারের বলে শর্ট কাভারে লঙ্কান ব্যাটসম্যান ধরা পড়েন সৌম্য সরকারের হাতে। প্যাভিলিয়নে ফেরার আগে ৩৪ বলে ৩ বাউন্ডারিতে তিনি করেন ৩০ রান।
অবশেষে অভিষ্কাকে ফেরালেন মোস্তাফিজ
উইকেটটি হতে পারতো তাইজুল ইসলামের, কিন্তু হলো না। বল হাতে নিয়েও মোসাদ্দেক হোসেন জমাতে না পারায় বেঁচে যান অভিষ্কা ফার্নান্ডো। যদিও ‘জীবন’ পেয়ে বেশিদূর যেতে পারেননি তিনি। পরের ওভারেই মোস্তাফিজুর রহমানের শিকার হয়ে প্যাভিলিয়নে ফিরেছেন শ্রীলঙ্কান ওপেনার।
মোস্তাফিজের আগের বলেই বাউন্ডারি হাঁকিয়েছিলেন অভিষ্কা। শুরু থেকেই কঠিন পরীক্ষা দেওয়া মোস্তাফিজ পরের বলটি দিলেন কাটার। তাতেই ঘায়েল লঙ্কান ব্যাটসম্যান। বল উঠিয়ে মারতে গিয়ে মিড-অনে সহজ ক্যাচ দেন তামিম ইকবালকে। ফেরার আগে অবশ্য খেলে যান ৮২ রানের কার্যকরী ইনিংস। তার ৭৫ বলের ঝড়ো ইনিংসে ছিল ৯ বাউন্ডারির সঙ্গে ২ ছক্কার মার।
মিরাজের হাত ধরে প্রথম সাফল্য
অবশেষে ভাঙা গেল শ্রীলঙ্কার উদ্বোধনী জুটি। বাংলাদেশকে প্রথম সাফল্য এনে দিলেন মেহেদী হাসান মিরাজ। এই স্পিনারের বলে বোল্ড হয়ে প্যাভিলিয়নে ফিরে গেছেন দিমুথ করুণারত্নে।
বাংলাদেশ রিভিউ নিলে শ্রীলঙ্কান অধিনায়ক ফিরতে পারতেন আগেই। যদিও খুব বেশিদূর যেতে পারেননি তিনি। মিরাজের বলে বোল্ড হওয়ার আগে ২৯ বলে করেন ১৫ রান। তবে উদ্বোধনী জুটিতে অভিষ্কা ফার্নান্ডোর সঙ্গে ৭১ রান যোগ করে শক্ত ভিত গড়ে যান দলের।
শ্রীলঙ্কার দারুণ শুরু
বোলিংয়ে বাংলাদেশকে অল্পতে বেঁধে রেখে ব্যাটিংয়েও দারুণ শুরু পেয়েছে শ্রীলঙ্কা। দুই ওপেনার অভিষ্কা ফার্নান্ডো ও দিমুথ করুণারত্নে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন স্বাগতিকদের। ৭.৪ ওভারেই উদ্বোধনী জুটিতে পায় ৫০ রান।
স্পিন আক্রমণ দিয়ে বোলিং শুরু করে বাংলাদেশ। মেহেদী মিরাজের সঙ্গে নতুন বলে শুরু করা শফিউল ইসলাম কাঙ্ক্ষিত উইকেট এনে দিতে পারেননি। অবশ্য তাতে অধিনায়ক তামিম ইকবালের ভুল সিদ্ধান্তও কিছুটা দায়ী। করুণারত্নের ব্যাট ছুঁয়ে যাওয়া বল বদলি উইকেটরক্ষক এনামুল হকের গ্লাভসে জমা পড়লেও রিভিউ নেয়নি বাংলাদেশ। অথচ রিভউ নিলে ৫ রানেই থামতে পারতেন করুণারত্নে।
মুশফিকের লড়াকু ইনিংসে বাংলাদেশের ২৩৮
আবারও সেই ছন্নছাড়া ব্যাটিং। শ্রীলঙ্কার বোলারদের সামনে খেই হারালো বাংলাদেশের টপ অর্ডার। রক্ষাকর্তা হিসেবে আবির্ভূত হলেন সেই মুশফিকুর রহিমই। চাপের মধ্যে একা হাতে লড়াই করে গেলেন তিনি। তার সঙ্গে মেহেদী হাসান মিরাজের প্রতিরোধে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৮ উইকেটে বাংলাদেশ করেছে ২৩৮।
রবিবার কলম্বোর আর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দুর্দান্ত এক ইনিংস খেললেন মুশফিক। তবু আক্ষেপ থেকে গেল তার। ২ রানের জন্য যে সেঞ্চুরি হলো না! অপরাজিত ব্যাটসম্যান হিসেবে মাঠ ছাড়েন তিনি ৯৮ রান করে। ব্যক্তিগত অর্জনের খাতায় সেঞ্চুরি যোগ না হলেও দলীয় পারফরম্যান্সে তিনি ছিলেন অনন্য। প্রচণ্ড চাপের মধ্যে একপ্রান্ত আগলে রেখে বাংলাদেশের স্কোর নিয়ে গেছেন ২৩৮-এ।
৪৩ রান করা মিরাজের যোগ্য সঙ্গ পেয়ে মুশফিক সপ্তম উইকেটে গড়েন ৮৪ রানের জুটি। মিরাজ আউট হলেও ১১০ বলে ৯৮ রান করে অপরাজিত থাকেন মুশফিক। ঝলমলে ইনিংসটি তিনি সাজান ৬ বাউন্ডারি ও ১ ছক্কায়। তার সঙ্গে ইনিংস শেষ করা মোস্তাফিজুর রহমান অপরাজিত থাকেন ২ রানে।