মীর খায়রুল আলম/কেএম রেজাউল করিম: দেবহাটার নওয়াপাড়া ইউনিয়নে ভিজিএফ’র ৫৫ বস্তা চাউল আতœসাত করে বিক্রয় করার পর শুক্রবার ঝটিকা অভিযানে বিভিন্ন স্থান থেকে সরকারি খাদ্য অধিদপ্তরের লেবেলকৃত ও অন্যান্য বস্তা ভর্তি ১৪ বস্তা চাউল উদ্ধার হয়েছে। মঙ্গলবার ৪নং নওয়াপাড়া ইউনিয়নে ভিজিএফ’র চাউল চুরি করে বিক্রয়ের অভিযোগ দেওয়ার পর থেকে অভিযুক্তরা দৌড়ঝাপ শুরু করে। কিন্তু অবশেষে তাদের চুরির ঘটনা জনসম্মুখে প্রকাশ পায়। বিভিন্ন ওয়ার্ড ঘুরে জানা গেছে, অতিদারিদ্রদের জন্য পবিত্র ঈদুল আযহা উপলক্ষ্যে বরাদ্দকৃত ১০ কেজি করে চাউল দেওয়ার কথা থাকলেও দেওয়া হয়েছে ৪/৫ কেজি হারে প্রদান করে এবং জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে ৫৫ব স্তা চাউল আতœসাত করা হয়েছে বলে। আতœসাতকৃত চাউল মঙ্গলবার সকাল ৬টার দিকে ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান আবুল কাশেম, ৪নং নওয়াপাড়া ইউনিয়নের ট্যাগ অফিসার ও উপজেলা সহকারী মৎস্য কর্মকর্তা হাফিজুর রহমান ও ৪নং ওয়ার্ডের গ্রাম পুলিশ এমদাদুল হক বাবুর সহযোগীতায় দেবিশহরস্থ ইউনিয়ন পরিষদ হতে উক্ত চাউল ভ্যান বোঝায় করে বিক্রয়ের উদ্যোশে নিয়ে গেলে স্থানীয়রা দেখতে পায়। পরে বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পূর্বে হাদিপুর গ্রামের চাউল ব্যবসায়ী আব্দুর রউফের পুত্র আজগর আলীর কাছে ৫৫ বস্তা চাউল বিক্রয় সম্পন্ন হয়। এ বিষয়ে নওয়াপাড়া ইউনিয়ন পুলিশিং কমিটির সাধারন সম্পাদক আনিছুর রহমান বকুল বিক্রয়কৃত চাউল ৩নং ওয়ার্ড ইউপি সদস্য নুরুজ্জামান সরদারের ১০ বস্তা, ৫নং ওয়ার্ডের আসমোতুল্ল আসমানের ১১ বস্তা, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ১৮বস্তা ও অফিস খরচ বাবদ ৫ বস্তাসহ মোট ৫৫ বস্তা অর্থাৎ ২৭৫০ কেজি চাউল আতœসাত করে বিক্রয় করায় বাদী হয়ে বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দায়ের করে। অভিযুক্তরা নিজেদের দোষ ঢাকতে কিছু সংবাদকর্মীদের দিয়ে অর্থের বিনিময়ে ইউনিয়ন পরিষদের একটি কক্ষে দরজা বন্ধ করে মিথ্যা সংবাদ সম্মেলন করে। পরে শুক্রবার সকালে উপজেলার নওয়াপাড়া ইউনিয়নের হাদিপুর গ্রামের ৫৫বস্তা চাউল ক্রেতা আজগরের বাড়ি হতে সরকারি খাদ্য অধিদপ্তরের লেবেলের চাউল ভর্তি এক বস্তা, শেখ মকবুল এর পুত্র ফজলুর রহমানের বাড়ি থেকে ভিজিএফ’র ৪বস্তা, জামাত আলীর পুত্র ভ্যানচালক মাসুমের বাড়ি হতে ৬বস্তা, একই গ্রামের আছাদুর রহমান বুলুর বাড়ি হতে ৩ বস্তা চাউল উদ্ধার হয়। এসময় চাউল উদ্ধারের কথা জানতে পেরে তাৎক্ষণিক বেজরআটি গ্রামের আহছানিয়া রাইচ মিল হতে ১২ বস্তা চাউল সরিয়ে ফেলে। তবে ৫৫ বস্তা চাউল ক্রেতা আজগর আলীকে আটক করা হলে বাকি চাউলের বস্তা গুলো কোথায় সরবরাহ করা হয়েছে তা জানাজাবে বলে জানিয়েছে স্থানীয়রা। আরো জানাগেছে, ঘটনার দিন চাউল ব্যবসায়ী আজগর ভ্যানচালক মাসুম কে দিয়ে বিভিন্ন স্থানে এ চাল পাঠিয়ে দেয়। এঘটনায় পুলিশকে খবর দিলে আটককৃত চাউলের বস্তাগুলো থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। তাছাড়া চাউল ক্রেতাদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসার জন্য থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। এদিকে, স্থানীয় জনতা ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেছে এমন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযুক্ত আতœসাতকারীরা এলাকা ছেড়ে পালিয়েছে।
চাউল ক্রেতা আজগরের স্ত্রীর কাছে তার স্বামীর কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন, তার স্বামী বিশেষ কাজে বাইরে আছেন। কবে বাসায় ফিরবে জানে না। বেলা ১১টার দিকে গাজীরহাট বাজারে বিক্ষোভ মিছিলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্তা নেওয়ার দাবী জানানো হয়। এসময় উপস্থিত থেকে বিক্ষোভ মিছিলে নওয়াপাড়া ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি মাহমুদুল হক লাভলু, সাধারন সম্পাদক আলমগীর হোসেন সাহেব আলী, সাংগঠনিক সম্পাদক গৌতম রায়, ইউনিয়ন পুলিশিং কমিটির সভাপতি শেখ আব্দুর রব, সাধারন সম্পাদক ও আতœসাতের বাদী আনিছুর রহমান বকুল, ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি বাবু সুধান চন্দ্র বর, ওয়ার্ড আওয়ামীলীগ নেতা আলহাজ্ব ময়না, রিয়াজুল ইসলাম, বিশ্বনাথ ঘোষসহ সর্বস্থরের সাধারন মানুষ অংশ নেয়। অত্র ইউনিয়নের বিভিন্ন ওয়ার্ডে অভিযোগ করে বলেন তাদের প্রকৃত অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। হাদিপুর গ্রামের বৃদ্ধ রবিন ৪কেজি, শেখ সুবানের পুত্র শেখ আব্দুর রশিদ ৪কেজি, শেখ ইব্রাহিম সাড়ে ৫ কেজি, আব্দুল হাকিমের পুত্র হাফিজুল ৫ কেজি, আছেদ আলীর স্ত্রী ৪ কেজি, জাহানারা বেগম সাড়ে ৫ কেজি চাউল পেয়েছে বলে অভিযোগ করেছে। ভিজিএফ’র চাউল আতœসাত করার ঘটনায় সর্ব স্থরের মানুষ বিষয়টিতে নিন্দা জানিয়ে অভিযুক্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি জানাতে প্রশাসনের কাছে জোরদাবী জানিয়েছেন। এরিপোর্ট লেখা পর্যন্ত দেবহাটা থানায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি চলছে বলে জানা গেছে।
পূর্ববর্তী পোস্ট