কে এম রেজাউল করিম দেবহাটা প্রতিনিধি : সকাল থেকেই ঠা ঠা রোদে শুরু হচ্ছে দিন। তীব্র তাপপ্রবাহে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে দেবহাটার মানুষের জনজীবন। প্রতিদিন একটু একটু করে বাড়ছে সূর্যের তাপ। প্রচণ্ড গরমে বেলা বাড়তেই পথে-ঘাটে কমে যাচ্ছে লোকের সংখ্যা। তাপপ্রবাহের জেরে ঘেমেনেয়ে একাকার মানুষ। কাজের সূত্রে সারা দিনের জন্য যাদের রাস্তায় থাকতে হচ্ছে, তাদের অবস্থা তো দফারফা।
দেবহাটায় সারা দিন রোদের তীব্রতা এতটাই বেশি যে, মানুষজন অতিষ্ঠ হয়ে পড়ছেন। দিন ভর রোদের প্রভাবে রাতেও বয়ে যাচ্ছে তীব্র তাপদাহ। একটুখানি বৃষ্টির জন্য হাহাকার করছেন মানুষ। মাঝেমধ্যে আকাশ মেঘাচ্ছন্ন হলেও কিছুক্ষণ পর তা মিলিয়ে যাচ্ছে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দিনের তাপমাত্রাও বাড়তে থাকে। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কেউ ঘরের বাইরে যেতে চাইছে না। দুপুর ১২টার পর রাস্তাঘাট প্রায় জনশূন্য হয়ে পড়ে। প্রচণ্ড গরমে শ্রমজীবী মানুষ ভোগান্তিতে পড়েছেন বেশি। একটু স্বস্তির আশায় মানুষ ছায়া খুঁজে বেড়াচ্ছে। তেষ্টা মেটাতে কেউ ডাবের পানি পান করছে। এ ছাড়া বিভিন্ন ধরনের শরবত বিক্রি হচ্ছে প্রচুর।
কিছুটা প্রশান্তির জন্য মানুষ ছুটছেন গাছের ছায়া কিংবা শীতল কোনো স্থানে। গরমের তীব্রতা সহ্য করতে না পেরে শিশুরা পুকুর কিংবা নদীর পানিতে সময় পার করছে। অতিরিক্ত গরমে দেবহাটার জনজীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। বাড়ছে পানিবাহিত রোগ। ডায়রিয়ার পাশাপাশি জ্বর, সর্দিসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন মানুষ।
বৃষ্টির দেখা না থাকায় তীব্র গরমে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই বাড়ছে পুকুর, খাল, বিলের পানির তাপমাত্রা। অতিরিক্ত গরম পানির কারণে মাছের বিভিন্ন রোগের প্রকোপও দেখা দিচ্ছে। অনেক ঘেরের মাছ মরে ভেসে উঠছে। তীব্র এ গরমে সবচেয়ে বিপাকে পড়েছেন খেটে খাওয়া মানুষ।
দেবহাটা সরকারি বিবিএমপি স্কুলের সহকারি প্রধান শিক্ষক শফিকুল ইসলাম বলেন, তীব্র এ গরমে সবচেয়ে বিপাকে পড়েছেন খেটে খাওয়া মানুষ। তীব্র গরমে বয়স্ক, শিশুরা পড়েছে সব থেকে বেশি ভোগান্তিতে। একটু স্বস্তি পেতে ঠান্ডা শরবত, পানি, আইসক্রিম খেয়ে তৃষ্ণা মেটাছে সাধারণ মানুষ।
সাংবাদিক সৈয়দ রেজাউল করিম বাপ্পা ও অধ্যাপক ইয়াসিন আলী বলেন টানা তাপদাহে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। প্রচন্ড গরমের সাধারণ ও কর্মজীবী মানুষেরা অস্বস্তিতে পড়েছেন। তাপমাত্রাজনিত কারণে শিশু ও বৃদ্ধরা চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। প্রখর রোদের ঘাম ঝরানো তাপমাত্রার কারণে শ্রমজীবী ও নিম্ন আয়ের মানুষজন চরম বিপাকে। বিশেষকরে তীব্র রোদের তাপের কারণে দিনমজুর, রিকশাচালক, ঠেলা ও ভ্যানচালকরা কাজ করতে পারছেন না। ফলে তীব্র তাপদাহে অনেকে অলস সময়ও পার করতে দেখা গেছে। আবার অনেকেই জীবন-জীবিকার তাগিদে প্রচন্ড তাপদাহ উপেক্ষা করে কাজে বেরিয়েছেন। তীব্র এ গরমে কাজের সন্ধানে ঘরের বাইরে আসা শ্রমজীবী মানুষ পড়েছেন চরম বিপাকে। অনেককে গাছ তলায় অবস্থান নিয়ে বিশ্রাম নিতে দেখে গেছে। বন বিবির বটতলায় গাছের ছায়ায় ভ্যান চালক বিশ্রাম নেওয়া সময় মোহাম্মদ রবিউল ইসলাম, মোঃ মোসলেম হোসেন, জাহাঙ্গীর হোসেন,বলেন, ‘রোদ তো না, যেন আগুনের হল্কা বের হচ্ছে। বাইরে দুই চার মিনিট থাকা যাচ্ছে না। খুব তেষ্টা পাচ্ছে। শরীর জ্বলে পুড়ে যাচ্ছে।’ বৃষ্টিপাত না হওয়ায় এর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে জীব-বৈচিত্র্যের ওপর। এমন প্রচন্ড গরমে নাভিশ্বাস উঠেছে দেবহাটাবাসী। একটু শীতলতার জন্য শিশু-কিশোর সবাই পুকুর-নদী-বিলে ছোটাছুটি করছে। অসহনীয় প্রচন্ড গরমে গ্রামাঞ্চলের শিশু, বয়স্কদের জ্বর-সর্দি- ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়ার প্রকোপ বাড়ছে। তাপের কারণে নানা বয়সীদের দেখা দিয়েছে চর্ম রোগও।
দেবহাটা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা বলেন, ‘এই গরমে সব বয়সী মানুষের ডায়রিয়াসহ পেটের নানা ধরনের পীড়া দেখা দিতে পারে। বয়স্ক যারা তাদের হিট স্ট্রোক হতে পারে। শ্রমজীবী মানুষকে তো আটকে রাখা যাবে না। তাদের জন্যে পরামর্শ, সকাল সাড়ে দশটা ও বিকেলের দিকে যেন তারা কাজ করেন।’ বেশি বেশি পানি ও তরল জাতীয় খাবার বিশেষ করে ডাব এর পানি খেতে হবে এবং ভাজা পোড়া খাবার পরিহারের পরামর্শ দেন তিনি।